প্রকাশক ? শ্রঅরুণকান্তি ঘোষ &১, সাঁতারাম ঘোষ স্ট্রট, কাঁলকাতা--৭০০০০৯ প্রচ্ছদ ॥ প্রণবেশ মাহীতি প্রকাশকাল ॥ ১ বৈশাখ ১৩৭২ মুদ্রক ॥ জান। 'প্রান্টং কনসান* কাঁলকাতা-৭০০০১২ উৎসর্গ উত্তরবঙ্গের আদত-অনাদৃত লোকাঁশজ্পীদের | উত্তরবঙ্জ লোকযানের সৌজচ্ে পত্র ॥ শিশির মভুমদ।রকে আচার্য দ্মীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ॥ ওরা |8। ওঠ ও 8৯ 88118 (0888৭ ৫82৬০ 858 চি 88০95885 ৯৯৪৪7৫60175 ০ ৪ 9৬ ৪৩ 6৫57৬ ৬৮৮৪৪) ৭& জী 0৪১ 5৬৭ টব রর ভগা। র৪এ৪ পাঠান ৃ / (চে ৫৪০৪8৪৪ 885098৯ ৮৪6৫ 6 ৫85 উট 8618 রঃ ৮৬৬ ৪%৭ ৪5 8722, যুগ 48. 17-4০-2522 ? ০.০ *৮৫ 4৫ £7 ৮৫০ ৮০০০০ নিলি ৮ 4 পপি ১০৪ 42 ৮4৮৫৫ ০১422 এ 4 পা 4৯ 1857574৮4০০ £ ৮০৫ 244৮ 2) %5 44 ৮৮ 4৮4 - ৮4৮ ৮০ ৫০৮৮ 0৫ তিনি £ তি 1৮৮4 2 ০৮47 %০০ » পা “৮৮৭৮, র * রর ১ ঃ রর ০1০-1০3এ 4777 রিল ৮০০৮ ৫৯৪ ৮5 ৮৫4০ (৬০16 ০০৮ *৫ 4 ০ পত্র ॥ শিশির মজুমদারকে ডঃ আশুতোষ ভ্াচার্য ॥ ভর প্ীত্বাউতোধ ভট্টাচার্য এ, এ, পি-এইও তি (োন | ৭৯২৫৪৭ বাংলা ছাহিতোর প্রাতজ বীজনাধ রাহ ঘতাপত এধ। ঘুনিষ ৩৯ ফোায়াম চ্যাটাররি রো, আাঁছতী তাহা নিভাবে। অহা হমিযাতী বিবাহিত লে লিগা ৭৪৪৪ খাতীর অর্থাত মাধ খাকাদদি ৪ সন্ত, কিট ৪৫৮ খ্৫শেই 2 134১৫" 6 পি দাই 4 উপননস্ষে ৯৭0 ও রি ১2 মি ঠেলে 4 (৫ টু ই ২৮44০ হ4 ৩4" ৬ টি এ শু £, পাত এ কি, ৫ পণ”) হত প 0৫7 জহিউ্দিউ আঞ্চাপেত শের শঁ 44৫1৫ 28+ 4 রব নিশি নে , উট রি $ শর গা । ৫৬৫ স রঃ 2320 রি রি বির ১ রে টি ৬ (ব4 থে ই 44৫৩ শো কু রেপ ৩৩ র্ঘি (7১০০3 3 ৩45 9 4৫ পি: হ্রদ, লিং ৬৬ নে শর লি বশ রও প/৫ নি 2 2৩ আদ দ্ধ 0৫ নণ নি ই ন- পট (দু. [বীর শা ৬৮১৮ ৮১৮ 4 এরি ক? 07 হণ সি )৩- ৭৫%% ৫২ আহূর্ঘীতি? 0 800৮ 10613009117 210163901 91511 191010081 11, ০06 ৪1280] ০০11665 19 1০901151001 10190110617 6৪: 96091, 8001 0085 0860 5619 0000 10000165860 07 118 5811009 (00663 সা!) আ100 06 085 08060 00 005 ৪00৫9 96 1011 ৩৫1০1:6 ৪০৫ 101-1106180015 01006 ৪18৪, 13615 আ]1 00911660 (0 51911 16369101] 01] 10 006 5001806) 99106 18 81 1114, 111 880£811 18115186 ৪2৫ 116126016, 176 1199 196৫1 00105 6610 খা01] 111 ০01160126 191611215 10 101-0061) ৪04 1011-1016 ৪৭ 611 ৪৩ 10 0000181 16111010 20 000181 08109 ৪00 11169 ৪100 £100815, দা0100 ৪15 8 01990162115 010 001 10191 0995563 10) (06 85৫1: £10৮105 1110801890100 800 80101019010801011 0181 ৪16 (19810110175 00৩ 06001 65৫15 11616 10100210 806 906180190০1 006 11106 ৪0111 [810 £190 10 800 1081 1119 016110010815 10081165185 01010410600 080: 700105 80106 00019108118 ৪০৫ 100100181 1069 ০ 11061910 62018581010 ০৫ 05636 00189 চ1)100 616 01006100006 10011 €0 501001815) 1186) 6£.। 05 7880-08 (01 [৪1808 51919--8 1181588% 16961581), ৪0৫ ০৫16818 (5068 ০0 01 80065, 911 1181111081 18 00. 3081105 001708616 10. 015 ৪8061000 00 ০01180% 1118 1081611819, (98108 816৪0 08108 (0 80 60 00 01006 অঞ্য 01068 11 091. ৪৪ 51118568 11101 216 01690010 01 900699। 116611110 1161) 10101178069 ৪0৫ জ1165510হ ৪00 (58106 00168 01 02100010165 800 5111956 ?9610611059 ০01 ৪ 161151009 2080016 602060160 এ1) (0996 08188 1 00152 911 91511 01981000081 191] 068861558৪1] 10810 ৪00 50000100010 001 01015618100 ৪7 001 £০56110201600 188116001008 1186 006 02156181 018018 00010015810, ভাত 100৮ 101%810 10 085 16811 80০0 1010 010 10117), 588161 300087 08161), কল্যাণভাজনেষ্‌, আজ জামশেদপূর থেকে ফিরে এসে তেমার চিঠি পেলাম । প্রদ্যোতের একাঁটি অনূচ্গান উপলক্ষে মালদহ গিয়োছলাম, সেখানে সে তার ছানার সহকমাঁদেব নিয়ে আমাকে কেন্দ্র করে একটি ছোট্র অনুষ্ঠান করেছিল তা আমার প্রত জল্মাদন ছিল না তবু অনষ্ঠানাটি তেমনই ধরনের একটা কিছু করে তৃলোছল। ত' তোমাদের জানানোর মত কিছ ছিল না। তুমি উত্তর বাংলার অবহোলত অঞ্চলের লোক-সংদ্কাতি নিয়ে কেবলমান্ত নিজের প্রেরণায় যে কাজ ক'রে যাচ্ছ, তা বাস্তাবকই প্রশংসারযোগ্য । সেইজন্যে শুনে প্রকতই আনান্দত হয়োছ যে তোমার অনুসম্ধানের ফলগুলো আজ সবন্ভিরেই স্বীকৃতি লাভ করতে আরম্ভ করেছে। পাশ্চম প্নাজপুর 'জলার কাঠের মুখোস কিংবা পাটের কাপে এ সব জিনিস চোখে দেখা দূরে থাক, তাদের বিষয় কেউ কানেও শোনেনি, সেই অবস্থায় তম তাদের সন্ধান করে এনে লোকচক্ষুর সামনে উপাচ্ছত করছ এবং সরকারী পুরস্কারে শিল্পীদের অভিনাঁন্দত করবার সুযোগ ক'রে দিয়েছ, এমন কাজ এদেশের খুব বেশী লোক করতে পারোন । উত্তর বাংলার অনেক কিছুই আমরা জান না, এই নাজানাই উত্তর বাংলার সঙ্গে আমাদের একটা ব্যবধান সৃষ্ট করেছে। তূমি তোমার পারশ্রম এবং জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে সেই ব্যবধান দূর করে দিতে ব্রতী হয়েছ, এ'জন) তুমি জাতর কৃতজ্ঞতাভাজন হয়ে থাকবে । তম সবাই “মলে এক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবার কথা বলেছ। তা যাঁদ হতে পারত তা হলে ত কথাই ছিলো না। কিন্তু একাবদ্ধ হয়ে কাজ বরা বাঙ্গালশর ভগ্যে ভগবানই লেখেনান ! তুমি আম কি করব ? যা হবার নয়, তা জোর করে৷ করা যায় না। নানা দল, নানা মত, নানা স্বাথ* এসে এখানে সংঘর্ষ বাঁধায় ॥ এসব কাঁটয়ে তবু যেখানে এঁক্য গড়ে উঠে, সেখানে ভগবানের আশসবদি এসে পড়ে । আমাদের এই বি*বাস আছে । তুমি তোমার কাজ কবে যাও। তারপর একাদন তোমার কাকে যাঁদ সত্য প্রকাশ পায় তবে তাকেই কেন্দ্র ক'রে এঁকোর শান্ত গড়ে উঠবে। আমি ভাল। তোমার সবাঙ্গীণ কুশল কামনা কাঁরি। আশাব4দক শ্রপআশনতোষ ভট্টাচার্য ॥ কিছু জথা উত্তববঙ্গ আমার জন্মভূমি নয়, কর্মভূমি । কর্মভূমি অনেক সময় বাসভূমি হয়ে উঠে না। কিন্তু, উত্তরবঙ্গ আমার বাসভূমিও। এই গ্রন্থে হয়তো তার প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। উত্তরবঙ্গের পাঁচাটি জেলায় তীরশটির মতো শহর। আটান্নট থানায় সাত হাজার সাতণ” বাধী্টুটি মৌজা । ২২,০২৫০ বর্গ কি.মি. বিস্তীর্ণ উত্তর- বঙ্গের ভূখণ্ডে শহরগনলো গ্রাম-সমুদ্রব মাঝে যেন একেকাঁট ছোট ছোট হ্বীপ।. প্রায় সব শহরের জন্ম গাঁয়ের গভ" থেকে । এদের চাঁরন্ে উত্তব-দাক্ষণে সামান্যই প্রভেদ। কিন্তু উত্তরের গ্রামগ্লোর আকৃতি-সংস্কতিতে দাক্ষণের সঙ্গে কিছু কিছু সমতা থাকলেও চাঁরঘরেটৈচিন্যে অনেকখানই ভিন্ন । আর উত্তর-দক্ষিণের সমতা ভিম্নতা নিয়েই বৌচিন্র্ে ভরা আমাদের এই পাশ্চমবঙ্গ । প্রায় সতেবো বছরের কর্মভূমি উত্তরবঙ্গে প্রায় চোম্দ বছর ধরে আমি বহু গ্রাম ঘুরেছি। এরমধ্যে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার গ্রামগুলোয় সবাধিক। গ্রামগুলোকে আম বাইরে থেকে দৌখান, দেখোঁছ ভেতর থেকে । এখানে বলে রাখা দরকার, এই গ্রামে গ্রামে ঘোরাঘ্‌ৃরি আমার পেশাগত নয়, নেশাগত। এই নেশার জনা আম যাঁর কাছে সাবশেষ ধনী, তিনি সমাজসেবা শ্রত্ধেয় পাবন্ত দে। এই দীর্ঘ সময়ের ঘোরাঘুরির বাঁচত্র আঁভজ্ঞতা থেকে ছে।ট বড় কয়েকাঁট নিবন্ধ লিখেছিলাম সামায়ক পর্র-পান্রীকায় । রবীন্দ্ুভারতী বিশ্বাবদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় ডঃ নিমণল দাশ এবং এশিয়াটক সোসাইটির কমণ প্রবীন গবেষক বীরের বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশিত নিবন্ধগুলোর একট সংকলন প্রকাশ করার জন্য আমাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন । বলাবাহুল্য, এই উৎসাহের ফলে ও বলে প্রকাশিত নিবষ্ধগুলো থেকে বাছাই ক'রে এই সংকলনগ্রন্থ রচিত হয়েছে। এই গ্রন্থ উপ্তরবঙ্গ লোকযান সংস্থা প্রকাশের প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করলেও অবশেষে শিলালাপ প্রকাশন সংস্থার অন্যতম স্বত্বাধিকারী বম্ধূবর অরুণকাম্তি ঘোষের আগ্রহে তাঁর হাতে প্রকাশনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গ লোকযান অবশ্য এই গ্রন্থের বেশ কিছু আগাম গ্রাহক তৈরার কারে দিয়েছে । এত বোধকরি, প্রকাশক উৎসাহিত ও খাঁনকটা নিশ্চিন্ত । উত্তরবঙ্গ লোকধান গ্রামৈন্দরমে নিবেদিত সংস্থা । তাই স্থির করোছ, এই গ্লন্থের প্লীধম এক হাজার কাঁপ বারি রর্যালটি সংস্থার ভাবলে দান করব । শিজ্পগ বন্ধু প্রণবেশ মাইতি গ্রন্থাটর প্রচ্ছদ ও অলঙকরণের দায়িত্ব সেচ্ছায় গ্রহণ করায় আম বাধঠ। তাছাড়া, ধনধান্যে ও ভূমিলক্ষমী ( অধুনাল*প্ত ) পাত্রুকার সৌজন্যে যথাক্রমে, মুখোশ নাচ, খন লোকণাট্য, বিষহরা “ব"এর ভরা, (নৌকো ) ছাঁবগুলোর ব্লক পাওয়ায় আম কতিজ্ঞ । শান্তিকুমার মিত্র ও বঁরেন সাহার কাছে এ জন্যে আম খাণী। যাঁদও উত্ত ছাবগুলো অ'মারই সংগহ এবং আমার নিবন্ধের সঙ্গে পান্রকা দ:টতে প্রক্কাশিত হয়োছল । গ্রামের বথাথ* চাঁর্র তার সংস্কাতর মধ্যে নিহত। এই সংকলন উত্তরবঙ্গের গ্রাম সংস্কতির একটি পূণা্গ দলিল, এমন দাবী আম করি না। তবে, গ্রন্থটিতে এ যাবৎ অনালোচিত বা স্বত্পালোচিত উত্তরবঙ্গ-গ্রাম-সংস্কৃতির বহ্‌ ত্র তুলে ধরা হয়েছে । আমার সংগ্রহে এবং প্রকাশিত নিবন্ধগুলোতে আরো বহু অজ্ঞাত বা স্বল্পজ্ঞাত বিষয় আছে ঘা উত্তর গ্রাম চরিত জানার পক্ষে [বিশেষ সহায়ক । এই সংবলনের দ্বিতীয় খণ্ডে সেগুলো দেওয়ার ইচ্ছে আছে ' অবশ্য, বর্তমান সংকলনাঁট যাঁদ পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়, তবেই সে ইচ্ছে বাস্তবতা পেতে পারে । আমার সব্ণাধক ঘোরাঘার দেশী, পাল ও রাজবংশনীদের গ্রামগুলোতে । দেশন-পলিরা প্রধানতঃ পাঁশ্চম দিনাজপুর জেলায় বসবাস করেন । তাঁরা বৃহত্তর রাজবংশী এবং বোড়োজনগ্োম্ঠীর অন্তভঞ্ন্ত বলে অনুমিত । দুভগ্যিবশতঃ বঙ্গ সংস্কৃতিতে তাঁরা স্বজ্পজ্ঞাত, স্বলপালোচিত। আমার এই গ্রন্থে তাঁরাই সবচেয়ে বেশী প্রধান্য পেয়েছেন । এই গ্রন্থাট দুটি বিভাগে বিন্যস্ত । বারোমাসিয়া ও পাশোস। বারোমাঁসয়া বিভাগে সারা বছরের 'বাভন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত কয়েকাঁট ব্রত, আচার, পৃজো-পার্বণ এবং অন্ততঃ একটি মেলা যুন্ত। এগুলোর মধ্যে কাষ-ব এবং রাজা গণেশ” নিবন্ধাট গবেধণামুলকপন্র হিসাবে ১৯১৮ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্বাবদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণরুমে পঠিত। এর ইংরাজী রচনাটি 17090 19161721% 5659510105 501101016 & 14116197 40001000195 0 500 11066109010108] 41801)101001051081 ৪100 1200০019108] 5০6100€ 0091€55-এ কাঁলকাতান ১৯১৬ সালে পাঁঠত। বাংলা ও ইংরোজ উভয় নিবন্ধ দুটি পরবার্তকালে অমৃত পান্রকা এবং ভারত প্রতিভায় প্রকাশিত । 'পাশোঁস' বিভাগে বিবিধ বিষয় হ্থান পেয়েছে । উভয় শব্দ দুটি 'দেশী- পি-রাজবংশ'দের কথ্য ভাষা থেকে সংগৃহাঁত। পাশোসির অর্থ পাঁচ রকম শস্য। যতদূর মনে আছে, আমার এই নিবম্ধগুলো আনন্দবাজার পাকার রধিবাসরাঁর আলোচনা» উত্তরবঙ্গ সংবাদ, ধনধান্যে, পশ্চমবন্ধ, নতুন ভারত্র, বারোমাস, অমৃত এবং অধ্নাল,প্ত ভ.মলক্ষমী পত্রিকায় নানা সময়ে প্রকাশিত । সংকলনকালে এগ্[লোর কিছু অংশ বাত আবার সংযোজিত । গ্রামে ঘোাঘ:র তথ্য সংগ্রহে আম প্রেরণা উৎসাহ পেয়েছি অনেকের কাছেই । কিন্তু এ বিষয়ে আমার জীবনে আবস্মরণীয় প্রয়ত আচার্য সুনগীতকুমার চট্টোপাধ্যায় । তাঁর স্বহন্তালাঁপ এই গ্রন্হের গৌ্ব, আমার গব€। প্রসঙ্গত, মনে পড়ে, ডাঃ চারুচন্দ্র সান্যালের সদাহাস্য মুখথাণন । তিনিও আজ প্রয়াত । আমাকে আচাষ সুনশীতিকুমারের কাছে তিনিই পাঠিয়েছিলেন । রাজবংশী, মেচ, টোটোসহ উত্তরবঙ্গের বহ্‌ সম্প্রদায়ের কথা তুলে ধরে তিনি আমার মতো অনেক অন্নেষক, গবেষকের দিশারী । আমার পরম শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ডঃ আশুতোষ ভাচার্ষের একখ।নি পন্ুও আমার পাঁরচিতি সৃন্টিতে সহায়ক । তাও আমার গব+ আমার সম্পদ । অনেকের পরামর্শে সে পর্রখান এই গ্রন্ছে যুন্ত করোছ। এই গ্রচ্ছখানির নামকরণ আমার ক্ষমতার বাইরে ছিল। এর জন্যে আম কৃতন্ঞ শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত সাংবাদক লেখক এবং সম্প্রতি পদ্মশ্রখ অমিতাভ চৌধুরীর কাছে । বাভন্ন সময়ে আমার অনেক লেখা অন্বালপিতে সাহাষ্য করেছে প্রা তিভাজন ছাত্র অশোককুমার সেনগপ্ত ও রথন্দ্রনাথ রায় । এই সংকলন গ্রল্হ বিষয়ে তাঁদেরও যথেন্ট আগ্রহ দেখোঁছ। এই প্রসঙ্গে আমি তাদের ধন্যবাদ ও স্নেহাশিস জানাই । অধ্যাপক জ্যোতস্নাকুমার সেন এবং ডাঃ বৃন্দাবনচন্দ্র বাগচী আমার প্রীতি প্রকাশিত নিবন্ধ খুবই আগ্রহ সহকারে.পড়ে মতামত দিয়েছেন । তাঁরা আমার অগ্রজ এবং গ্রাম সংস্কৃত ব্যাপারে দরদশী । এই গ্রন্য বিষয়ে পরোক্ষ অবদান তাঁদেরও রয়েছে । জানা প্রীন্টং কনসান+-এর সহযোগতা প্রসঙ্গত স্মরণীয় । মুদ্রণের ব্যাপারে এই প্রেসের সব কমন আমার সকল দেশ মেনে নয়েছেন । সকল চেষ্টা সত্তেও অনবধানতা বশতঃ কিছ কিছ: ভাট থেকে গেছে, এর জন্য আমি দ*খিত । দেশী, পাল, মেচ, রাভা রাজবংশীদের পল্লগুলো প্রধান সড়ক থেকে অনেক ভেতরে । বাইরে থেকে দেখা যায় না, বোঝা যায় না। এদের চারান্রক বৈশিষ্টাও তাই । এদের প্রা্ভা প্রাণশন্তি সহজ সরল উদার হৃদয়ের পারচয় পেতে গেলে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। সে কাজ একজন বাহরাগতের পক্ষে দুরূহ । কত কত রাজ্জশান্ত চলে গেছে উত্তরবঙ্গের উপর 'দিয়ে কত জন সংস্কৃত মুছে গেছে তাঁদের প্রতপে* কিন্তু তা সত্বেও সকল চক্ষুর আড়ালে দূরে থেকে এইসব জনগোম্ঠী লালন করেছেন, প্রয়োজনে গ্রহণ বর্জনের মাধ্যমে সমন্বয় ঘাটয়েছেন তাঁদের সংস্কৃত । এই সংস্কৃতি দেখার, দেখাবার অধিকার যাঁকা দিয়েছেন তাঁ'দর সকলের কাছে আম কৃতজ্ঞ । ্ শিশির অভুনদার ৬ সুদীপত্র ও গ বারমাসিয়! ও জল দেগে জলাই শোরধ বিষহরা ব এবং ব খেলার গান দলাছটা বা গৃহলক্ষযীর ডাক দগাঁপুজা থজাগর দীপান্বিতা হকাহুকি ও চোরপজা বৈরাটের বাঁড় মাঘীব কাষ-ব ও রাজা গণেশ ধাওয়ইলের কংসব্রত মেলা গানের নাম চৈতা তুই মোক ছাড়ুয়া পালাল গোঁব দশ গানরা গ পাশোসি ও লোকযাত্রা লৌকিক দেবদেবী ধোকরা-ঝালং-বিছান কনের হাট পাড়ার মৃখাশজল' লঙ্জকার হটে জামদারণী কার;শিঞ্প মুখা মোথা মুখা ব্রাততজনের নৃতাগীত &/ ১৩ ২০ ২৬ ২৯ ৩৫ ৪8০0 ৫৯ ৬৪ ৬৮ ৭২ ৭৫ ৮১ ৮৫ ৯৭ ৯৫ ১০২ | ৯০৬ ১১ 1111 111|| বারোমাসিয়া জভন দেগে জল্নাইস্পোক্রী ॥ যদি আষাঢ-আবণে ইন্দ্রের করুণাঁধার! নেমে না আসে মাটির বুকে, ক্ষেতেব ফসলে, তখন সাবা উত্তরবঙ্গ জুড়ে রাতের আপার চিরে মেয়ের! গাইতে বেবোয় থে গান, পশ্চিম দিনাঁজপুবে “দেশী” পলি? সমাজে তা নাম জলমাঙ্গ। । জলপাইগুড়ি কোচবিহারে কোচ-রাজবংশী সমাঁজে তারই নাম হুদুমদেওর গাঁন | এই সময় পশ্চিম-দ্রিনাজপুর জেলা দেশী পলি এমনকি মুললমান মেয়েবাও করুণস্থরে গান গেয়ে জলের তথ! বৃষ্টিব প্রার্থনা করেন 'জল দে গে জলাইশোরী ।' এই গানই হুল বর্ধার গান । যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মকাননও বদলে যায়। বলাবাহুলা, জলমাঙ্গার গানের ক্ষেত্রেও এই বদল ঘটেছে অবশ্যন্তাবীভাবে । তবে এখনো এ গানের অংশগ্রহণকারিণী একমাত্র মেয়েরা । পুরুষের শুধু অংশগ্রহণ নয়, দর্শনও নিষেধ | এই নিষেধ অমান্য করলে তার সাজা কঠোব। এটাই সমাজের বিধান | খবায় খরায় গ্রাম যখন খা খা। আকাশে কালো মেঘের চিহ্নমাত্র নেই। তখনই গ্রামের মেয়েরা বিবাহিতা বা কুমারী জলমাঙ্গতে বেরোয়। তারা সঙ্ষে নেবে একটি ঘট | ঘটে পাঁচটি সিছুরের ফোটা । ভেতরে একটি ব্যাঁঙের বাচ্চা । একটি পান। একটি সুপারী ও কিছু ফুল ছুর্বা। এই ঘট একটি সাত থেকে এগারো খছরের কোন বালিকা নেবে মাথায় । অবশ্ঠ, এ বিষয়ে মতান্তর আছে । মেয়েটি বালিকাই যে হবে, তার কোন মানে নেই, সে ভরা-যুবতীও হতে পারে। যাইহোক, সেই বালিক! বা যুবতীর তখন নাম হবে “ঘটধরি' | তাকে হতে হবে মায়ের একমাত্র মেয়ে । ঘটধরি কুইনার ( কন্যার ) ডান হাতে থাকবে পুরোনো একটি ছাঁতি ( ইদানীং কাপড়ের ছাতি চালু )। এবং কী হাতটি ঠিক যেন বরাভয় দেবার ভঙ্গিতে ওঠানো । সহচরী একজনের কাছে থাকবে একটি বড় ধামা। এই ধামায় মাগনেব জিনিসপত্র রাখা হবে | পরিচালিকার কাছে থাকবে একটি পু টুলি__ সেখানে থাকবে সকলের বন্ত্র। এ থেকেই বোঝা যায় ব্রতচারিণীরা সবাই বিবস্ত্র । জল মাঙ্গবার সময় কোন গৃহস্থেব উঠোনে প্রবেশকালে ঘটধবি বা মূল ব্রতচাবিণী থাকবে সকলের ঠিক মাঝখানে | কোন গৃহস্থ পুরুষ এই সময় ঘরের বাইরে আসতে পারবে না। ব্রতচারিণীরা গৃহস্থের অঙ্গনে গান গাইতে গাইতে প্রবেশ করবে_ “জল দে গে জলাইশোরী” বলে। এই গান শুনে বাড়ির গিশ্নী বা কন্তা ুলুধবনি দিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসবে । ঘটি ( লোটা ) তে কবে জল দেবে ঘটধরির মাথার ঘটে ও ছাতায়। তারপর সেই বাঁড়িব গিন্নী ধুপ দীপ জালিয়ে তাদের আরতি করবে। ঘটধরি থেকে আরন্ত কবে সমস্ত ব্রতচারিণীর কপালে তেল-সি দুর প্রলিপ্ত করবে । এবং গলবন্ত্র হয়ে প্রণাম করে ঘট নামাতে বলবে । ঘট নামানো হলে সেই উঠোনে চাষের অভিনয় করা হবে। অর্থাৎ একজন হবে হাল, ছুজন বলদ, একজন চাষী । ঘড়! ঘড়! জল ঢালা হবে উঠোনে । নানা বঙ্গ-রসিকতাও এই সঙ্গে করা হবে। এবং সেইসঙ্গে জলের জন্য ইন্দ্র দেবতার কাছে প্রার্থনা জানাবে সকলে । কেননা, তাদের ধারণা ইন্দ্র দেবতা কষ্ট, তাই আকাশে জলের দেখা নেই । তকে তুষ্ট করতে হবে। তিনি তুষ্ট হলেই অঝোরে ঝরবে জলধারা । নানা অঙ্গতঙ্ষি সহকারে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ইন্দ্র দেবতাকে তুষ্ট করার চেষ্টা রয়েছে ব্রতচারিণীদের আচারে ও ক্রিয়ায়। তার উপরে আছে দলবেঁধে করুণ সবরের গান আইস মেঘ! বইস কাছে খাও বাটাং পান চর তোমার জইন্যে বাটাং পান সাজাইয়ে রাখিছি বরমিয়া খাও রে। ব্রতচারিণীদের সঙ্গে গৃহস্থ মেয়েরাও স্থুর মেলায় মেঘ! মেঘ! ডাক যে পাড়ি মেঘ! নাই মোর ঘরেরে নকল মেঘ] জড়ো হইছে ফুলবাঁডি জঙ্গলে । গানের পর গান ওঠে, সেই সঙ্গে নাঁচ। মেঘে ওদে ( বোদে ) নাগায় ভাইরে মেঘে অন্ধকার মেঘের ভিতি দেখি ভাইরে হালি ছাড়ে হাল জমিতে পানি নাই বে কিসে বহিম হাল বাস্থয়৷ বলদিয়া বইছে হাল ও.মোর গসাইরে, তাহনে ছুববা নোতা ওঠে । এক পাট মই ছুই পাট মই তাহনে ছব্বা নতা ওঠে । খরার মাঠে কৃষক চেষ্টা করছে হাল দেবার । কিন্তু হাল চালানো যে কি কষ্টকর, তারই চিত্র ওই গান। মাঝে মাঝে রোদ ঢাকা পড়ে মেঘ দেখা দেয়, চাষী উৎফুল্ল হয়ে মাঠে নামে হাল বাইবার আকাঙ্ষায়। কিন্তু, না, জল বিনা চাষ সত্যিই অসম্ভব | ছুর্বা ঘাস উত্পাটন করা যায় না। এক্ষেত্রে, গোৌঁসাই- কৃষকের উপান্ত দেবতা । এরপরে সে কল্পনা করে রূপারে হাল গৌসাই সোনারে ফাল বাস্ুয়া বলদ দিয়ে মুই জুড়ু হাল। রুপোর হাল আর সোনার ফাল এবং সেই সঙ্গে বান্থ্য়া বলদ ( সবচেয়ে বেশি ঙ কর্মক্ষম, যাঁর কাধে উচু কুঁজ থাকে অথচ ষণ্ড নয় ) দিয়ে চাষ করা-হবে। ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির কল্পনা রয়েছে এখানে হামার নাদে পাটি পাঁবিচি রোয়া সারি সারি সেহ রোয়ার ধান মাবেচি বাহান্ন পৌটি। ব্রতচাবিণীদের প্রার্থনায় আকাশে মেঘ জমল বৃষ্টি নামল | এ কল্পনা কবে হাব গান গায় পানি আইলো পানি আইলো বায়ে বাতাস পাঁনি আইলো ভিউভ্া গেল ভিঙজা গেশ গানড়ির ঢাবল! ভিউজা গেলো শুকাই গেলো শুকাই গেলো গানড়ির ঢাখশা শুকাই গেলো কেমনে শুকমে গানড়ির ঢাবশা বায়ে বাতাসে শুকাই গেলো । এইভাবে গান গাইতে গাইতে বাঁড়ি খাঁড়ি ঘুবে বেড়ায় জলমাঙ্গার দল | সংযোজন £ জলমাঙ্গা বা জলের প্রার্থনা এক্টি আদিম যাঢ় বিশ্বাস। ভারতে তো! বটেই পৃথিবীর সর্বত্র অদিজনবাসীদের মধো আচার-কতো সামান্য ভিন্নতা নিয়ে একদা এটি প্রচলিত ছিণ বিশেষভাবে । এখনো যে অপ্রচলিত তা নয়। সংবাদপত্রে কৌতুহলী পাঠক তা লক্ষ করতে পারেন । ৬চাকচন্জ্র সান্যাল, নির্মলেন্দু ভৌমিক, গিরিজাশংকর রায় তীদের উত্তরবঙ্গ বিষয়ক গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন । ফ্রেজার সাহেবের গৌন্ডেন বাও গ্রন্থে পৃথিবীর অন্তান্ত অঞ্চলের আচার-কৃতা উল্লিখিত। রায়গঞ্জের ডাক্তার বৃন্দাবনচন্দ্র বাগচীর রঙপুর থাকাকালীন এবিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে, তা আমি শুনেছি। ব্যাক্তিগতভাবে আমি পশ্চিম দিনাজপুর, জলপাইগুড়ির অসংখ্য গীয়ে ঘুরে এ আচারটি সম্পর্কে নানা তথা ও গান সংগ্রহ করেছি! বীথি মজুমদার, নন্দিনী দত্ত এই সংগ্রহে আমাকে সাহাযা করেছেন । রায়গঞ্জ থানার চাপদুয়ার গায়ের মালবিঞ। রায় জলমাঙ্গী আচারের মধো যে &.. নাটাপ রয়েছে তা জনপাইগুডিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত লোক-উৎসবে দেখাবার বাবস্থা করেছেন। তাছাড়া হেমতাবাদ থানার রসোনপুর গ্রামের “উত্তরবঙ্গ লোকযান” এর সদস্যরা এই আচারটির চমৎকার নৃতানাটারূপ কলকাতা সহ নানা স্থানে পরিবেশন করেছেন। শুনেছি, আরো কোন কোন গ্রামে এই দগ আদিম যাছুবিশ্বাসযুক্ত আচারটির মধা থেকে পোককৃতা নাটোর চমৎকার ফর্ম আবিষ্কাব করে মঞ্চস্থ করতে উদ্যোগী হয়েছেন । জলমাঙ্। নাটাটির শ্তরু এইরকম ঃ ব্রত্চারিণীর। ঘরের এবং কাজের পোশাক অর্থাৎ বুকানি পরে সাণবদ্ধ হয়ে হাতে পঞ্ঠন ঘট ছাতা ইতাদি নিয়ে নাচতে নাচতে মঞ্চে প্রবেশ করে । একটি কলাগাছ আগে থাকতেই মঞ্চে ছিল। মেই কণাগাছটিকে প্রদক্ষিণ ক'রে পুজোর জন্য সবাই হাঁটুমুড়ে বসে। পুজোর কাজ শেষ করে লারা বাড়ি বাড়ি জলমাঙ্গতে বোরোয়। জণমাঙ্গা এখন আর গোপন গুহা আচারমাত্র নয়। সতাতা সংস্কৃতির ধিবর্ঠনে যে আদিম আচাবটি লুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তা ধীবে ধীরে নবরূপে তার সংস্কৃতির মভান এঁতিহো বলীয়ান ভয়ে উজ্জীবিত হচ্ছে। এখানেই তো লোক-সংস্কৃতির শক্তি, তাঁর সাথকতা। লিম্বহল্লা ল এন আজ গেেলাক্প গান ॥ শ্রাবণ সংক্রান্তিতে উত্তরবঙ্গের “দেশী-পলি' থেকে আরম্ভ করে সমস্ত রাজবংশী সমাজে বিষহরা ব্রত পালিত হয়। ভাদ্রের প্রথম দিনে বিষহর! দেবীর ভাসান । পশ্চিম দিনাজপুর অঞ্চলে ব্রতকে “ব' বলে। এ জেলায় দেখেছি বিষহরা-ব- এর সময় ছেলেরা রঙ মেখে মোখা পরে নানা অঙ্গভঙ্গী সহকারে একরকমের গান করে থাকে । তাকে বলে 'ব' খেলার গান । “বিষহরা-ব' শ্রাবণ সংক্রান্তিতেই পালন করতে হবে, এমন কোন কথা নেই। শ্রাবণ সংক্রাস্তির পর কৃষক তাঁর অবনর মতে। যে কোন সময় এই “ব' পালন করতে পারেন । 'ব' খেলার গানের তেমন কোন নিদি্ই সময়স্থুচি নেই । শ্রাবণ সংক্রান্তি থেকে শুরু করে অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসব পর্বস্ত 'ব” খেলার গান করা চলে। বরাত জেগে ছোট ছোট পালার অভিনয় হয়। তারই একটির নাম '“হালুয়া-হালুয়ানী ।'* অর্থাৎ কিষাঁপ-কিষাণীর সুথেছুখে ভরা দাম্পত্য জীবনের নক্কা | “বিষহরা-ব'-এর আরেক নাম “ঝাড়া” বা 'মাজুহ ফুল-ব'। পঃ দিনাজপুর * এই পালার কথা আমার প্রকাঁশিতবা 'উত্তরবঙ্গের লোকনাটা, গ্রন্থে বল! হয়েছে । জেলার আমরাহার গ্রামে যে বিষহরা “ব” হয়, তা খুবই বিখ্যাত। এই জেলার মালাকার সম্প্রদায় দৃষ্িমুকর অসংখ্য শোলার মাজুষ বা মঞ্জ্য ফুল এবং ভূরা বা নৌকো তৈয়ারি করেন। সেগুলো! শ্রাবণ সংক্রান্তি আসবার আগে থেকেই হাটে হাটে বিকোয়। নৌকা এবং মঞ্জুষে প্রধানত মনসার ৰপ আকা থাকে । লখীন্দর, চাদ সদাগর, বেহুলাঁও বাদ যায় না । এই ব পূজায় পঃ দিনাজপুরের দেশী সম্প্রদায় নিজেরাই পুরোহিত। পুজো শেষে ভাদ্র মাসের প্রথম তারিখে দুপুব বেলায় ঢোল, মেহ্‌না ( সানাইয়ের মতো কাশি) বাজিয়ে বাড়ির কাছে পুকুরের মাঝখানে একটি বাশের মাথায় সেই মঞ্জুষ ফুল ঝোলান হয়। তারপর বীশটিকে সেখানে পুতে রাখা হয়। আর ভূরাও ভাপিয়ে দেওয়া হয় জলে। এর নামই ভাসান। উত্তববঙ্গে প্রচলিত কানী বিষহরার গান এই ব্রতের অঙ্গ নয়। ওই গান মানসিক না থাকলে করা হয় না। কিন্তু শ্রাবণ সংক্রাস্তির দিন দুপুর থেকেই গ্রামের ছেলের! হাতে লাঠি নিয়ে বড় মেখে “ব খেলতে বেরোয় । আর গাঁন করে। কিন্তু লক্ষণীয় এই যে ব' খেলার গানে বিষহরার কোন কথা নেই। সমাজের নানাবিধ অসঙ্গতি রঙ্গ-ব্যঙ্গে এই গানের মধা দিয়ে তুলে ধরা হয়। তাই, বোধকরি “ব' খেলার গানের আরেক নাম বঙ-পাচালী। এই জেলায় যখনই কোন 'ব' বা ব্রত হয় (অবশ্যই বিষহরার পরে ) তখনই ছেলের! “ব' খেলতে বেরোয় । 'ব খেলতে খেলতে ছেলেরা গ্রামের গৃহস্থ চাষীর কাছ থেকে কিছু আদায়ও করে। যদি 'ব' খেলার দলকে গৃহস্থ কিছু না দেয়, তবে তাদের নিয়েও ছেলেরা ( চ্যাংবা ) গান বেঁধে ফেলে। ব-এর অনুষ্ঠান মানেই হাউস বা আমোদের বিষয়। তাই, 'ব' হলেই এরা এই গানের মধা দিয়ে হাউস বা আমোদ করে থাকে । এই গানের সঙ্গে আজকাল হারমোনিয়াম চালু হয়েছে । তাছাড়া ঢোল মেহনা, মঞ্জুর বা মন্দির তো আছেই । এই প্রসঙ্গে একটি “ব' খেলার গানের নমুনা! দেওয়া যেতে পারে। হুলোলোই বাফ, হছুলোলোই বাফ, তোর বাফ. নিন্দ গেল তোহ নিন্দ যায়রে হুলোলোই বাফ,। শী হায়শিয়াল ঘরা ভাত চড়াইছুং চুইয়ে উঠে ধুয়া । কানাটাটিদি ঢ.মকাই দেখু, ওহ যে বান্দর মৃহা। কদুভূআউ আলাবঝালা চালৎ থুইন্ম দাও । কানাটাটিদি জল ফেলানু বন্ধুয়ার ভিজিল্‌ গাও । বালিয়া নদীর পূব পাকে মোর বন্ধুয়ার ছে ঘর | ঢইট পাইপসা চালে বন্ধুর গায় আসে জর। তেল নাই যে কুলো নাই গতর স্মস্থম করে। মশার কামড়ে ছেলাক নিন্দ নাই ধরে ( রে)। দ্বারকের আগ বক] কুইটা ঝুরিয়া নামে বন পিরিত করিয়া ছাড়িয়া পালাল গড়গড়াছে মন ।* [শব্দার্থ ঃ বাফ-বাপ। নিন্দ_ নিদ্রা । হায়শিয়াল__হেশেল। ঘরা__-ঘর চুইন্লে-__উননে। কানাটাটিদি-_ভাঙ্গা বেড়ার মধ্য দিয়ে। ঢুমকাই--উকি মারা । মৃহা_মুখ। কদুভূআউ-_লাউ মাটিতে রেখে । থুইক্গম- রেখেছি । দ্বারকের_ ছুয়ারের | ] *পশ্চিম দিনাজপুর জেলার কুশমত্তী থানার দিনোর সাপাড়া গ্রাম থেকে গানটি সংগৃহীত । দে লছ্ছিট্। ব। গভললজ্জাক্র ডাক প্রতি বই ঘুবে ঘুবে আসে মাথিন সংক্রান্তি পালের বেন ঠেচান্তেব শুক হেউতি (আমন ) ধানে ভবা নে । আপ পিন পরেই বান ক টী হবে শুক। কৃষকের বাছে ধান সব সেবা যাব আবেশ নীগ নক্ী। তিনিই ভূমিলক্মী আখ উত্তববঙ্ষেব ভাষাম গহণক্ী ( গহপক্ষ্মী। কা ক্ষেতিলক্্ী। অথবা পশ্চিম দিনাজপুবে গাঁড়িগুঁডিযা-ব ।' সাবা উত্তববঙ্গে ধাজবনী ন। দেনী পপি' সম্প্রদাযেব কাছে এই দিনেই গৃহলক্্ী পুজো । সংক্কান্তিব দিনটির আবেক নাম 'দেশ্মাসিযা" | ক্ষেতিলক্্ী পূজোই আদি পদ্দী পূজো । জমি মানি এই ভাব বহন কবেন। জমির মাপিকেব নির্দেশে ভূমিহীন 'জনচাকব-এব সাধামে এই পুজোর কাজকর্ম সমাধা হয়। কেউ কেউ এই প্াজায মণ্ডপ ঘব তৈকি কবেন। প্রযোজন মতো বাড়ির বাইরের দিকে উঠোনে পাটকাঠি বা খড দিযে তিন দিক ঘেরা হয়। শুধুমাত্র পশ্চিমদিক খোলা থাকে মগুপ ঘরেব ভেতরে মাটি দিয়ে উঁচু কবে ক্ষেতি- লক্ষ্মীর থান তৈরী হয়। মেখানে একজন পৃজাকর্মী ধানের ক্ষেত থেকে গোঁডার মাটিসমেত একথোপ ধান গাছ'থানের ভেতর এনে রাখেন । যথা সময়ে দেই থোপের গোডায় কলাপাত৷ দিয়ে মুডে বেঁধে থানে (বেদি) বসানো হয়। ধানের থোপটি ক্ষেত থেকে এমনভাবে তুলতে হবে, যেন তার ধান ফুল থাকে আর তার সংখ্যাও হবে বেজোড় । ক্ষেতিলক্্ীর পুজোর নৈবেষ্ হবে চাল, চিড়া, ছুধ, দই, জামুরী, লেবু, কলা প্রভৃতি। সাধারণভাবে এই পৃজোয় বলিদানের প্রথা নেই। তবে পঃ দিনাজপুর জেলার প্রায় সমস্ত পুজা বা ব্রত-অনুষ্ঠানে বলিদানের প্রথা লক্ষ করা গেছে। হাস ও কবুতর বলিদানই বেশি প্রচলিত। যেসব পাখি বা জন্ত কৃষির ক্ষতি করে পৃজে। উপলক্ষে তাদের বলি দেওয়া হয়ে থাকে । বলি না৷ দিলে দেব বা দেবী অসস্তষ্ট হবেন এই বিশ্বাসের বলে বলিদানের মাধ্যমে ওই সব জীবসংখ্যা কমিয়ে দ্বেবার চেষ্টা করা হয়। অথব! এসব আচারের পেছনে অন্ত তত্ব খোজা যেতে পারে । আপাততঃ তা নিশ্রয়োজন । এই সব পুজোয় পুরোহিত নিজ সম্প্রদীয়ের অধিকারী বা মালাকার | কখনো কখনো জমির মালিক নিজেই পূজোর কাজ শেষ করেন-_দেশীয় ভাষায় মন্ত্র পড়েন। কখনো কখনো নিজ অম্প্রদায়ের কোন বয়োজোষ্ট বাক্তিকেও এই দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে । লক্মীদেবী এই পুজোয় খুশি হয়ে যে আশীর্বাণী পাঠান তা হল £ শীষোতে বিশ হোক রামলম্ক্রণ গালা হোক । অর্থাৎ একটি ধানের শীষ থেকে যেন বিশ ফলন হয় এবং ধানগাছগুলো যেন বড় হয় রামলক্ষ্মণের গল পর্বস্ত | প্রসঙ্গতঃ উল্লেথ করা দরকার সমস্ত রাজবংশী দেশীপলি সমাজের কাছে সীতাদেবীই লক্ষ্মী। এই পুজোর সময় কোথাও কোথাও শৃকর বলির প্রথা আছে। আর পঃ দিনাজপুর জেলায় তো হাসের মাথা ছিড়ে ধানের ক্ষেতে পুঁতে রাখাটাই আবস্টিক রীতির মধ্যে গণ্য । হাস এবং শুকর ছুই ধান ক্ষেতের অনিষ্ট সাধন করে। এই সময়কার একটি অনুষ্ঠানের নাম দূলছিটা। তাই, এই দিনটিকে অনেকে দলছিটা বলেও অভিহিত করেন। দলছিটা অনুষ্ঠানে প্রথমে কাঠালপাতা দিয়ে ছোট ছোট দীপ তৈয়ারি করা হম্ম। যার নাম সরুই । গইতা বা গাওয়া ঘি সেই সরুইতে মাখিয়ে রাখতে হয়। ৩ তারপর সলতে দিয়ে ঘিয়ের বাঁতি জালাতে হয়। সেই সঙ্গে কলা, চিনি,. আটা এবং জামুরি ( বাতাবি )। লেবুর পাতা বড় কড়াইতে ভেজে ছাম গাইন বা উদুখল দিয়ে গুড়ো করে তার সঙ্গে একট! হাসের ডিম ফাটিয়ে একত্রে মিশ্রিত করে যে বস্তটি তৈরি হয় তার নাম “দল'। সেই দলগুলি কাঠাল পাতার ছোট ছোট পাত্রে বা বাটিতে থাকে । তারপর সমন্ত ভক্ত মেয়ে- পুরুষ সেই দলপাত্রগুলি নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে ধানের ক্ষেতে প্রবেশ করে। আর সরুইগুলি নিয়ে প্রবেশ করে একদল । তারা ধানের সমস্ত ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে। ঘুরে বেড়ায় ক্ষেতের এদিকে সেদিকে । আর পাত্রস্থিত দল ছিটিয়ে দেয় ধানের ক্ষেতে । সমন্বরে বলে একটি ছড়া বা মন্ত্র সরুই সরুই সুই ইন্দুর ধরিয়া পকামাকঙ দুরৎ পলা মানলী ঘরৎ সন্ধা খেল খেলা হাঁসের ডিমা কচুর ফুতি আয় নক্ষী আমার ভিতি মানুষের ধান আউল বাউল মোর ধান ধরমের চাউল ।* সমস্ত দলগুলি ছেটানোর পর হাসের মাথা ছিড়ে তার বক্ত ছিটিয়ে দেওয়া হয় ধানের গোলায় । আর হাঁসের মাথাটি ধানক্ষেতের মধো পুঁতে রাখা হয়। সকালে যেখান থেকে ধানের থোপ সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেখানে সেই থোপ নিয়ে এসে আবার রাখা! হয়। তারপর ছুটি পাঁটকাঠিতে সিন্মুর লেপনের কাজ। কীঠাঁল কাঠির উপর নরম মাটি বসিয়ে পাতার সরুইও মাটি- সিশ্ুরে প্রলিগ্ত কর! হবে। তাঁকে বলা হয় দিক্ুর চুমা। এই উপলক্ষে গৃহপালিত সমস্ত জীব-জস্তকে বিশেষকরে গকগুলিকে লিন্মুর চুমানো। হয়ে' থাকে। তারপর সরুইসহ পাটকাঠিছুটি ক্ষেতের আলের মাঝখানে পুঁতে দেয়া হয়। জালান হয় ধুপ ও দীপ। * (ছড়াঁটি সংগ্রহ-মাধাম £ রবীন্দ্রনাথ সরকার, দিনোর সাঁপাড়। এবং হরেন দেবশর্সা গ্রাম £ টুঙ্গিল। পঃ দিনাজপুর ) ১১ পঃ দিনাজপুর জেলায় এই দিনের ব্রতানুষ্ঠানকে গাড়ি-গুড়িয়া বলে। ১লা কার্তিক হয় তার ভাসান । যে সব বস্ত দিয়ে দল তৈরি হয়, নিশ্চয়ই তার বাসায়নিক প্রতিক্রিয়া আছে যা ধানের পোকার প্রতিষেধক এবং ধান বাডতে সহায়তা করে। হাঁস ধান খায় ধানের ক্ষেতের আল নষ্ট করে। শুকর প্রসঙ্গে একই কথা প্রযোজা । তাই তাদের বলি দেওয়! হয়। হাসের মাথা পৌতা হয় ধানের ক্ষেতে । আর রক্ত ছেটানো হয় ধানের গোলায় । ংযোজন £ এই অঞ্চলে লক্ষ্রীব বন্দনা তিন শ্রেণীর । আশ্বিন সংক্রান্তির ক্ষেতিলঙ্ষ্মী পুজো, কোজাগরী লক্ষ্মী পৃণিমার খজাগর এবং মানসিক অনুযায়ী বছরের যেকোন সময়ে অন্তষ্টেয় নঙ্ষ্মী ব। নক্ষমীব উপলক্ষে যেগান হয় তার নাম লক্ষ্মীয়ালা। সীতাই হলো! লক্ষ্মী। প্রসঙ্গত: উল্লেখা লক্ষ্মী বিষয়ক যে গান বাধা হয় তাঁর ভিত্তি বামায়ণ | কোচবিহাবে তার নাম 'কশান' | পশ্চিম দিনাজপুবে লক্ষ্মীয়াল! গাঁন দু'রকমের | এক, ারুয়ালী। ঢুই কলী। চামর হাতে মুল গায়েন। মন্দিরা হাতে ছুই দোহার। এছাড়া একজন বাজাবে খোল আর দ'জন ছোঁকবা ( নীরীবেশে তরুণ ইদানীং নর্তকী ) নাচবে। তাঁবাই প্রয়োজনে লবকুশেব চবিভ্রে অভিনয় করবা । এই হলে বাকয়ালী বে কলী। কুশান গানে সীতা; রাম পলব-কশ হনুমান প্রভৃতি বিভিন্ন চরিত্রের সাজসজ্জা! সহকারে অভিনয় হয়। তিন থেকে সাত বাতি চলে এর গান। বন্তৃত, লববশের কীত্তিগাথা সেখানে প্রধান । এই রচনাটি লেখার ক্ষেত্রে ডঃ গিরিজাশঙ্কর বায়-এর গবেষণা গ্রন্থ “রাজবংশী সমাজের দেব-দেবী ও পুজা-পার্বণ” আমায় সহায়তা করেছে । ১ দর্গাঞ্গুজ ||| শ্বীষটপূর্ব সপ্তম শতকের আগে উত্তরবঙ্গে আর্ধ সংস্কৃতি প্রবেশাধিকার লাভ করেনি । ওই সময়ের আগে থেকে এই অঞ্চলে, বলতে গেলে গোটা উন্নর-পূর্ব ভাবতে এমন এক শক্তিশালী জনগোঠী বসবাস করতেন ধারা নৃতীত্বিক বিচারে ইন্দোমোঙ্গলীয় এবং ভাষাগতভাবে অস্ত্রিক, দ্রাবিড ও তিব্বত-ব্রহ্ষীগো্ঠীব মিশ্রণ১ সম্ভৃত। বলাবাহুলা, উত্তর বাংলার রাজবংশীগণ তাদের শাখাবিশেষ। তাই ন্াভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, কবে থেকে তীবা তর্গাপূজা শুরু কবেছিলেন ? এ অঞ্চলে আর্ধসংস্কৃতি একটু দেরীতে শরবেশ করায় এবং নাঁনা কারণে 'আঁশান্গুরূপ লাপিত না হওয়ায় এখানকার সংস্কৃতিতে প্রাগার্য সভাতা-সংস্কৃতির বৈশিষ্টাগুলি একটু বিশেষভাবে এখনো প্রতীয়মান । তবে, দুর্গোৎ্সবের ক্ষেত্রেও কি তা প্রতাক্ষ ?__এই কৌতুহল জাগ্রত হয়। দুর্গোৎসব ব্রাহ্ষণাসংস্কৃতির একটি অঙ্গ | আজ তা শুধু হিন্দু নয়, গোটা বাঙ্গালী সংস্কৃতির একটি শ্রেষ্ঠতম গ্রকাঁশ | কিন্থ উত্তরবাংলাঁর ক্ষেত্রে এর রূপ কি-_তাঁর আলোচনা এ-যাবৎ সামান্যই হয়েছে। উত্তরবাংলার সঙ্গে রাজবংশী গোঁঠীর সংস্কৃতি অবিচ্ছেষ্চ এবং 'গুরুতপূর্ণ সম্পর্কে অস্থিত। সেদিক থেকে বলতে গেলে ব্রাঙ্মণ্যসংস্কৃতি প্রভাবিত ছুর্গোথসব উত্তরবাংলায় ক্রপ্রাচীনকালের বাপার নয়। বর্তমান উত্তরবাংলার পুজা, পার্বণ ও মেলার ইতিহাস নিলে দেখা যাঁয় যে চর্গাপুজে। এখানে ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে ও একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার কবে নিচ্ছে। দক্ষিণে মালদহ থেকে উত্তরপূর্বে কোচবিহার পর্বস্ত দূর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তত সত্বরটি মেল! বসে। এর মধ্যে প্রায় ২৫টি মেলার বয়স অন্তত একশ বছরের উপর। দুর্গাপূজা উপলক্ষে মালদহ কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে কয়েকটি বাইচখেলা'ও হয় । এক্ষেত্রে মালদছের ইংরেজবাজার থানার আড়াপুর, কোতোয়ালি, কালিয়াচক থানার চরি অনস্তপুরের বাইচখেলা ও মেলা সর্বাধিক উল্লেখযোগা । তবে একথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, দক্ষিণ কিংবা পূর্ববঙ্গে বাঙ্গালী সমাজে যেভাবে হুর্গাপৃজ| গৃহীত, উত্তরবঙ্গে স্বভাবতই সে- ভাবে অন্তত স্তপ্রাীন কাল থেকে গৃহীত নয়। তার প্রধান কারণ একটি শক্তিশালী প্রাগার্ধ জনজাতি এ অঞ্চলে তার প্রাচীন সভ্যতা -সংস্কৃতি দীর্ঘকাল ধরে সুরক্ষিত রেখেছে । উত্তরবঙ্গে কোচবিহার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বসিংহই সর্বপ্রথম ্রাহ্মণাসংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক | তার পুত্র মহারাজ! নর নারায়ণের সময়কাল (১৫৩৩ অথবা ১৫৪০ খুঃ) থেকে ক্ষত্রিয় রাজবংশী অধুষিত উত্তরবঙ্গে দুর্গাপূজা প্রচলিত হত বলে কেউ কেউ মনে করেন। এই প্রসঙ্গে একটি গল্প আছে। তা হল এই £ মহারাজা নরনারায়ণের ভাই শুরুধবজ সিংহাসন লাভের ইচ্ছায় একদা রাজসভার মধ্যে প্রবেশ করে নরনারায়ণকে হত্যা করতে উদ্যত হন। সে সময় স্বয়ং ভগবতী আবিভূর্ত হয়ে দশবাহদ্বারা মহারাজকে বেষ্টন করে দাড়ান । এই দৃষ্ঠ দেখে শ্রক্লধবজ চমকিত ও অভিভূত । অবশেষে তিনি ভাইয়ের কাছে ক্ষম! প্রার্থনা! করে পালিয়ে যান। কিস্ত এই ঘটনা! মহারাজা নরনারায়ণের মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী প্রতিক্রিয়। কৃষ্টি করে। তিনি ভাবেন, শুরুধ্বজ চক্তাস্তকারী হলেও তার তুলনায় অধিকতর ভাগাবান। তাই মে ভগবতীর দেখা পেয়েছে। এই ভাবনায় বিভোর হয়ে নরনারায়ণ অন্নজল ছেড়ে নির্জনে বাস করতে থাকেন | এইভাবে ছুই রাত্রি কেটে গেলে ভৃতীয় রাজ্িতে মহারাজা স্বপ্নে দেবীর দর্শন পাঁন। স্বপ্রঘৃষ্ট দেবীর মুক্তি গড়িয়ে তিনি রাজবাড়িতে পূজো! প্রচলন করেন | সেই মৃত্ঠি আজও সেখানে পূজো পেয়ে আসছে। তবে, সে যৃত্তির সঙ্গে লক্ষ্মী, সবন্বতী, কার্তিক, গণেশ 'নেই। তার বদলে তীর ছুই পাশে রয়েছেন জয়! আর বিজয়া । এই দেবীর ছুই চোখ জগন্নাথদেবের চোখের মতো কিঞ্চিৎ গোলাকার ও জলজ লে । তার বাহন মিংহের গায়ের রঙ ধবধবে সাছা। “অনেকের মতে, ছুর্গা এখানে ভবানীমৃত্তি রূপে পুরজিতা। আগে "ভবানী -পুঁজা' নামে প্রচালিত ছিল । কোচবিহারে মদনযোহন বাড়িতে দুর্গাপূজার ময় প্রচলিত ছুর্গা প্রতিমার ( অর্থাৎ লক্ষী, সরহ্থততী, কান্তিক গণেশ সহ ১৪ পৃথকভাবে পূজো হয়। মদনমোহন বাড়িতে মহারাজার দেবীবাড়ির অঙ্থ্রূপ তবানী মুত্তিও আছে এবং তিনি এই সময়ে পৃথকতাঁবে পূজিত! | দেবীবাঁড়ির মতো! একটি ছোট ভবানী মুর্তি এখানে দেখা যায়। এই ভবানী মৃন্তি সম্পর্কে একটি কিংবদন্তী আছে। তাহ'ল এই রকমঃ কোচবিহার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বসিংহ ভুইয়াদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ধথাকাকালীন একবার অরণোর মধ্যে একটি দশভুজা দেবী প্রতিমা! লাভ করেন। কারো! কারো! মতে, এই ভবানী মৃক্তিটি বিশ্বসিংহ প্রাপ্ত দেবী প্রতিম! | প্রাচীনকালে এই দেবীব পৃজোয় নরবলিব প্রথা! ছিল বলে কথিত। সে প্রথা উঠে গিয়ে নররক্ত দেওয়ার প্রথা চালু হয়। ধারা বংশাঙ্ুক্রমে নররক্ত দেন তারা মহারাজাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তি ভোগ করেন । কোঁচবিহারেব পধশনন বকসী এরকম একজন | দেবীবাডির পুজা অনুষ্ঠানের একটি বিশিষ্ট অঙ্গ অস্্রাগার পূজো । এই উপলক্ষে বাঁজারা নাকি খঞ্জন পাঁখি ওডাতেন। যে দিকে পাখি উডে যেত সেদিকে রাজারা যুদ্ধধাত্রা স্থির করতেন। বিসর্জন পৃজো শেষে স্থানীয় ভোমেরা তাদের নিজম্ব পদ্ধতিতে দেবী পুজো! করে এবং শূকর বলি দেয় 1২ অন্য একটি স্তত্রে জানা যায় “কোচবিহারে দুর্গাপূজাব জন্য শহব এলাকায় 'বিরাট পাক! দর্গামণ্ডপ আছে । মগ্ডপটি কোচবিহার রাজবাড়ির সম্মুথস্ব দেবী- বাঁডি রোডের উপর অবস্থিত। এই অঞ্চলে মণ্ডপটি “দেবীবাডি' নামে খ্যাত। শারদীয়া উৎসব উপলক্ষে এই মণ্ডপেই দশভূজা দুর্গার মৃন্ময় মৃতি নির্মাণ করিয়া বী হইতে দশমী তিথি পর্যস্ত পাঁচদিনব্যাপী যথারীতি পূজা! উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোচবিহারবামীগণের দাবী-_এইরূপ বিরাটাকায় দুর্গামুত্তি বঙ্গদেশের অন্য কোন স্থানে নাই। এই পুজার প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, অষ্টমী তিথিতে দেবীর নিকট একটি মহিষ এবং রাজসরকাররুত বরাদ্দ মোট সীইব্রিশটি পশু- 'পক্ষীর বলিদান। অষ্টমী তিথির রাতে দেবীর বিসর্জনকালে ঘাটে পূর্ব প্রথাস্থ্ায়ী ছুটি শূকর বলি দেওয়ার প্রথাও প্রচলিত। তাছাড়া, অসংখ্য ম্ানতকারী অষ্টমী তিথিতে দেবীর কাছে পাঠা, কবুতর ও হান বলি. দেন ।”৩ কোচবিহারের মাঘপাঁলা গ্রামে যে ছুর্গাঁপুজে! প্রচলিত তা সবচেয়ে প্রাচীন বলে গ্রামবাসীরা দাবী করেন। মহারাজা নরনারায়ণ হ্বপ্নানি্ই হয়ে এই পুজোর প্রচলন করেন বলে তাদের বিশ্বাস ।৪ ১৬6 বস্ততপক্ষে, উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজে দুর্গার প্রধান পরিচয় দেবী ঠাকুরাণী হিসাবে এবং শারদীয় দৃর্গোৎসবের নাম 'যাত্রাপৃজা” বা “দেবীপৃজা' | শারদীয় নবমী, কোথাও কোথাও দশমীর দিনটিকে যাত্রা” বলা ভয়ে থাকে । এই দিনে রাজবংশী কুষকেরা হৈমস্তিক ফসল উৎপাদনের জন্য ক্ষেত্র কর্ণ স্তরু করেন ।৫ হেউতি ফসল বা আমন ধানের প্রতি বাঙ্গালী সমাজের সবিশেষ আগ্রহ । পূর্ববঙ্গের বক জেলার বিজয়া দশমীতে ক্ষেতে হলকধণের শ্ুভারন্ত দিন চিসাবে পবিগণিত। ১ -হবাং যাত্রাপূজী একটি রুধষিরতা বিশেষ । কিন্তু চর্গাপূজার উতৎসব-অনুষ্ঠান গ্রামীণ জনসাপারণের রুধিরুতাটিকে সম্ভবত গ্রাস করে ফেলেছে । উন্তরবাংলার ক্ষবিয় রাজবংশী সমাজে এই দিন প্রতি বাড়িতে মেয়ের। ঘরদোর পরিচ্গার ও নেপামোছা করে । তারপর সমস্ত প্রাঙ্গণে গোবর জল ছিটিয়ে দেয়। মেদিন ঘরের যাব্তীয় সামগ্রী আঙ্গিনায় নিয়ে এসে বৌন্রতপ্ত করে এব" প্রতিটি ঘরের দবজায় খড়িমাটি ও িছুবের ফৌটা দেওয়া হয়ে থাকে । দ্বপুরে হয় সরম্বতী পুজো । বিগ্যার্থীরা নিজে কিংবা তাদের মা-বাবা বা অধিকারীর ( নিজন্ব পুরোহিত) সাহাঘো নৈবেগ্চ দান » রে পূজো দেয় ।৬ দর্গাপূজো সাধারণের আযত্তের বাইরে । সমস্ত বঙ্গের পক্ষেই একথা প্রযোজা | বস্তত এই পৃজো। রাজা, জমিদার বা বিভ্তবান মান্তষের মধো একদ] সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্ত পূজৌর আনন্দ সার্বজনীন | বারোয়ারী পূজোর প্লাবনে আজ এই পৃঁজো শুধুমাত্র বিত্তবানগোরষ্ঠির মধো মীমাবদ্ধ নয়। কিন্তু উত্তরবঙ্গে বিত্তবান বাঁজবংশীরা শারদীয় দ্র্গোসবের তুলনায় চেত্রমাসে বাসস্তী পৃঙ্জো' অনেক বেশি করতেন এবং এখনো করে থাকেন। শারদীয় ও বসস্তকালের পূজোগুলোতে প্রধানত কামরপী ব্রাহ্মণেরাই অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু বর্তমানে প্রায় অঞ্চলে বঙ্গদেশীয় ব্রাঙ্মণেরা ওই স্থান নিয়েছেন । ডঃ গিবিজাশঙ্কর বাঁয় জনিয়েছেন, “এখনকার দিনে অন্যান্য বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের ন্যায় রাজবংশীরাও সার্বজনীন প্রথায় বাপকভাবে দুর্গাপূজা করিতে আবরম্ত করিয়াছে ।' ৭ কোচবিহার রাজার শাখাবংশগুলোতে যথানিয়মে এই ছুর্গোৎ্সব হয় । এই শাঁখারই একটি জলপাইগুড়ি বায়কত বংশেও অনুরূপভাবে ছুর্গাপূজে৷ হত। কিন্তু বর্তমানে তা বদলে গেছে। ডঃ চারুচন্দ্র সান্ঠাল এই. প্রসঙ্গে বলেছেন, ৯৬ 'রাঁজবাঁডির দুর্গ] প্রতিমা ছিল বিরাট আকারের । ভীর ঘোর লাল বং পাতার উপর দাঁড়িয়ে একটিমাত্র মৃত্তি। প্রায় বাট বছর আগে লক্ষ্মী, সরঙ্বতী, কার্ঠিক ও গণেশ বাহনসহ জুটে গেলেন এই মৃত্তির পাশে । দুর্গার বু একটু ফিকে হয়ে এল | বাঘটি ধীরে ধীরে হয়ে গেশ্স সিংহ | মনে হয়, দক্ষিপাগতদের সাথে কুটি সমন্বয়ে এই পরিবর্তন হযেছে ।”৮ পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বাঘনগ্রাম নিবাসী সর্বোদয়-ব্রতী ভ্রীপবিত্র দে মাত্র পঁচিশ বছর আগেও এই জেলায় দ্বেশী-পলিদের দুর্গার বপ দেখেছিলেন ব্যাপ্ত- বাহন! ঘোরবক্তবর্ণা ছিভূজা এবং ভাব পূজা 'দেবীপূজ।' নামে অভিহিত ছিল। এই ঘ্বিতৃজা, কোথাও কোথাও চতুভুর্জা দেবীই বস্তত উত্তরবাংলার আদি দুর্গা । তীর নাঁম কোথাও ভাগানী আবার কোথাও ভাগারনী বা ভাগালী। এই' দেবী সম্পর্কে অস্তত কয়েকটি জনশ্রুতির উল্লেখ করা যাঁষ ঃ এক ॥ “একদা নহুস নামে জনৈক রাজা রাজপ্রাসাদে শারদীয়! দুর্গাপূজার আয়োজন সম্পন্ন করিষা শিকাবে বাহির হন এবং তথায় শিকারের আনন্দে চুর্গাপূজার কথা বিস্থত হন। এদিকে রাজবাড়িতে যথারীতি পুজার পর বিজয়! দশমী তিথিতে দেবীর মূর্তি বিসর্জন দেওযা হয়; কিন্তু রাজার পুষ্পাঁলি গ্রহণ না কবিষা মর্ত ত্যাগ করিতে ইচ্ছা না থাকায় দেবী চতুদ্'জারপে ব্যাস্িপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়! বনমধ্যে উক্ত রাজার সম্মুখে উপস্থিত হন এবং রাজার পুষ্পাঞ্চলি যাঁচঞা। করেন । সেদিন একাদশী তিথি, রাজা বনোমধো বনফুল ছায়া! দেবীর পদে পুষ্পাঞ্জলি নিবেন করেন । এই পুজা ভাগানী পুঁজ! বলিয়া খাত হয় । ঘুই ॥ “কুচবিহারের মহারাজার পুজার পর ছূর্গাদেকবী কৈলাশ যাত্রা করেন। পথে নিজতরফ-৭৫ তালুকে ২নং সীটে দুর্গাদেবীর মালপত্রের তত্বাবধায়ক অর্থাৎ ভাপ্তারণী হঠাৎ অনুস্থ হুইয়! পড়ায় ছুর্গাদেবীকে তিনদিন ওই স্থানে অবস্থান করিতে হয়। এই সময় স্থানীয় গ্রামবাসীর প্রতি স্বপ্াদেশ হওয়ায় তিন- দিনব্যাপী পুনরায় দূর্গাগীজা হয়। ,দেবী ভাণানণীকে উপলক্ষ করিয়া! টি ঘটে বলিয়া! দেবী ওরা জাসারপী'নামে গ্যাড+২, ভি -*শারকী়পুজা শেখে দশ তিথিতে নোী রগ মরশতাগ কানে চীন বরা ভাতানীদেবী হতে তাহার প্জা পা করেন এবং ুগাধেবীর স্তায়ই ভাগালী পূজার প্রচলন হয় ।”১১ চার ॥ “অস্থরের অত্যাচারে প্রপীড়িত জনগণ দেবীকে আহবান করেন । দেবী নুন্দরী কন্ারূপে উপস্থিত হয়ে অন্থর বিনাশ করে জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে কৈলাশে যাবার পথে ভক্তবৃন্দের বার! পুঁজিত হন। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে নাকি দেবীর এই পুজা! সর্বপ্রথম প্রচলিত ।”১২- ভাগানীদেবী নামে ভাণ্ডানী গ্রাম জলপাইগুড়ি ডুয়ারস্‌ এলাকায় অবস্থিত। ডঃ চারুচন্ত্র সান্তাল জানিয়েছেন, এই পূজা পশ্চিমে তিস্তা থেকে রায়ডাক নদীর তীর পর্যস্ত বিস্তৃত.।১৩ জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি, ফালাকাটা, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ও মাথাভাঙ্গা থানার গ্রামাঞ্চলে এই দেবীর পূজার প্রচলন সর্বাধিকতাবে পরিলক্ষিত। এই অঞ্চলগুলোতে কোথাও শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়াদশমীর পরবর্তী তিনদিনের মধো এবং কোথাও লক্ষ্মী পূণিমার সময়ে ভাগাবনী ঠাকুরানীর পৃঁজো হয় এবং তছুপলক্ষে মেল! বসে । লক্ষণীয়, ভাগ্ডানট ঠাকুবানীর পৃজারী সর্বত্রই রাজবংশী অধিকারী । সম্প্রতি অসমীয়৷ ও অন্যান্য ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের অনুপ্রবেশ ঘটছে । এই দেবী পূজোর পরেই বিসজিত হন না। জলপাইগুড়ি জেলার রাজবাড়িতে যে ভাগ্ানী দেবী আছেন তিনি ব্যাম্রবাহনা। একহাতে তাঁর একটি মাটির ঘট, অন্তহাতে বরাভয় মুদ্রা । তিনি শস্তের দেবীরূপে কোথাও কোথাও বণিতা। এই দেবীর তাৎপর্য সম্পর্কে ডঃ গিরিজাশক্কর রায়ের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য | “উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় ভন্বুকের নাম ভাণ্তী। হিংস্র বন্পস্তদের মধ্যে ভাণ্তীও একটি প্রধান পশ্ত বিশেষ। বনাবৃত উত্তরবঙ্গে অন্যান্য বন্য পশুদের ন্যায় ভাণ্তীর অত্যাচারও বোধকরি কম ছিল না। কেননা, এতদঞ্চলে ভান্ীর ঝাড়ের নাম যত্রতত্র শুনিতে পাওয়া যায়। ভাগনী ঠাকুরানী নামকরণের প্রশ্নে এই ভাণ্তী কোন না কোন প্রকারে জড়িত থাকিতে পারে। উত্তরবঙ্গের অরণ্য পরিবেশের বাসিন্দারা ভাত্তী ইত্যাদি বন্তজস্তদের হাত হইতে পরিভ্রাণ পাইবার উদ্দেস্তে ভাগ্ডানীদেবীর পুজার প্রচলন করিয়াছিল বলিয়া মনে করা যাইতে পারে । তবে, ভাপ্তীর অপেক্ষা উত্তরবঙ্গে ব্যাপ্রভীতি প্রবলতর ছিল বলিয়া ভাও্ীর বাহন হিসাবে বাঘ মনোনীত হইয়া থাকিতে পারে ।*১৪ ১৮৮ ভাগ্তানী সম্পর্কে জনশ্রতিগুলো৷ বিচার করলে দেখা যায়, এগুলো সবই ব্রাহ্মণ সংস্কৃতি-প্রভাবজাত পরবর্তীকালের সংযোজন | কোচবিহারের মহারাজাদের দশভূজা দেবীপূজোও আগ্রাসী ত্রাঙ্গণ্যসংস্কতি_প্রভাবিত। তবে, এইসব পুজোয় বলিদান প্রথা ইন্দোমোঙ্গলীয় জনগোষ্ঠীর নিজন্ব কৃত্য ।১৫ ব্রাহ্মণ সংস্কৃতি এ বিষয়ে তাদেব কাছে বিশেষভাবে খণী । | সূত্রপঞ্জী ॥ ১। কিবাঁত-জনরুতি-_ডঃ সুনীতিকুমাঁর চট্টোপাধ্যায় । ২। কোচবিহার দেবীবাডির দুর্গাপূজা কুমার মুখোপাধ্যায়, ভূমিলক্্মী ৩। পশ্চিমবঙ্গের পুজাপার্ণ ও মেলা ১ম খণ্ড ভারত সরকার প্রকাশিত। ৪ | এ ৫| উত্তরবঙ্গে রাজবংশী সমাজের দ্বেবদেবী ও পূজা-পার্বণ। ডঃ গিরিজাশঙ্কর বায় । ৬। ও ৭। এ ৮। জলপা ইগুড়ি জেল! শতবান্বিকী ম্মারক গ্রন্থ । ৯। পশ্চিমবঙ্ের পূজাপার্বণ ও মেলা ১ম খণ্ড। ১০ ও ১১। এ ১২। উত্তরবঙ্গে ভাগ্ডানীদেবীর পৃজা__ প্রদীপ ঘোষ । ভূমিলক্ষ্মী। ১৩। রাঁজবংশস্‌ অব নর্থবেঙ্গল__ডঃ চারুচন্ত্র সান্যাল । ১৪। উত্তরবঙ্ষে রাজবংশী সমাজের দেবদেবী ও পুজাপার্বণ-ডঃ গিরিজাশঙ্কর রায়। ১৫। কিরাত-জনরূতি_ ডঃ স্থনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় । ১৪ গত্কাগন্ল ॥ 'ভলভল পুহ্নিমার চান” আকাশে দেখ! দেবার ছদিন আগে থেকেই পশ্চিম দিনাজপুর জেলার্‌ “দেশী” সমাজে শুরু হয়ে যায় খজাখজি বা খজাগর গান। বলাবাহুলা, এই পৃণিমা কোজাগরী লক্ষমী-পৃঘিম! বলে পরিচিত এই সময় পঃ দিনাজপুরের রুষক যুবকেরা দল বেঁধে নানা সাজ করে গ্রামের পথে বেরোয় থজাগজির মাগন তুলতে । সে সময় যে গান গাওয়া হয় তাই “খজাগর' গার্ন নামে প্রচলিত। তবে, খজাগরের জন্ক বিশেষ কিছু গান থাকলেও এর সঙ্গে অনান্য হাউসের গান জুড়ে যায়। যেমন, বধু চোখের ইশারায় কেন মারোরে তোমার জ্বালায় আমি মরিরে। অথবা।, নাইয়ারে তুই নাঁও চাঁপারে নাও চাঁপা, নাও চাপা ওরে নাইয়। নাও চাপা মোর কূলে । কলস! ভরায়! দিমু দুই নয়নার জলে । বলার দরকার নেই যে উল্লিখিত গাঁন দুটিই প্রেমের গান । ছুটি গানই মর্মযন্ত্রণার হলেও প্রথমটির সঙ্গে ছিতীয়টির পার্থক্য অনায়াসে ধরা যাবে। দ্বিতীয় গানটির ব্ঞনাও হুদবর প্রসারী । এখানে কথা কম, স্বর বেশি। এই সময়ের আরে! ছুটি গীত উল্লেখা । ঠ বাঁড়ির কাছে চম্পা নদী ইলুয়া কাশের বনরে সেখান হৈতে আমার মাম! ভুলাইল মনরে | বড় মামা হয়গো ভাস্কর ছোট মাম! দেওর মাঝিল মাম! সিখির সিদুর নানা মোর শ্বশ্তর | আগে যদি জানতাম আমি মামার সথে বিয়ে বাসর ঘরে মরতাম আমি গলায় অসি দিয়ে । 'অর্থাৎ বাড়ির কাছে চম্পা নদী আর ইলুয়াকাশের বন। সেখানে আমার মেজে মামা মন ভুলিয়ে নিল। যাব ফলে বড়মামা আমার নোতুন সম্পর্কে ভাস্কর । মেজো মামা আমার স্বামী আর দাছু আমার শ্বস্তর হলেন। এই যদি হবে আগে জানতাম তবে আমি গলায় দড়ি দিয়ে মরতাম । ৮ কাকইরে কাকই ছুনো ভিতিদাঁর। মাথাঁৎ চড়িয়৷ কাঁকই ধল্লে অবতার ॥ উলিয়ান গে উলিয়ান কেটুনকাটা৷ তেল কেটুন কাঁটা তেন গে বাবুরিতে গেল ॥ আজু গে আনু কপাঁলে লেখা টাকার জোরে বেহা দিলু খড়েনেংড়া ? বাঁশিরে বাশি যদি নাগাল পাউং কুড়ালে চিবিয়া ধাশি সাগরে ভাসাউং বন্ধুরে বন্ধু হামা বাড়ি যান বসব! দিম শীতল পাটি তবলা বাজান। এই গানটি পূর্বোন্লিখিত,গানটি খেকে একেবারেই স্বত্ব । টিরশী (কাকই) ২১ শ্বাশুড়ী ( উলিয়ান ), দাছু ( আজু), বাঁশি ও বন্ধুকে সম্বোধন করে গাঁন। চিরণীরে চিরুণী তোঁর ছুইদিকেই তো দ্বার । মাথায় চড়ে তুই হলি অবতার? শাশুড়ী তুমি তাত বুনে যে তেল কিনলে সেই তেল মাথার বাবরি চুলে গেল। দাছু এই ছিল ভাগ্যে লেখা যে, টাঁকার জন্তে খোঁড়া ন্যাংড়ার সঙ্গে বিয়ে দিলে? বাঁশির নাগাল যদি পাওয়া যায়, তবে তাকে কুড়ুল দিয়ে চিরে লাগরে ভাসিয়ে দেব। বন্ধু, তুমি আমার বাড়িতে যেও। তোমায় যত্ব করে শীতল পাঁটিতে বসতে দেব আর বাজাতে দেব তবল! । এই গানটির বিস্তৃত আলোচনা এ প্রসঙ্গে অবাস্তর। শ্তধু এইটুক বোবা যাচ্ছে ষে, মূল খজাগর উপলক্ষে সমাজ জীবনের নানা চিত্র এবং এদের আমোদে কত বিবিধ ও বিচিত্র সঙ্গীত এসে যুক্ত হয়। কোজাগরী লক্ষ্মী পৃিমায় দেশী-পলি সমাজে কোনি পুজো প্রচলিত নেই। তবে, সংস্কৃতি সমন্বয়ের তাগিদে এখন লক্ষ্মী পুজো হচ্ছে। আসলে, আশ্বিন সংক্রাস্তিতে দল ছিটা বা গৃহলক্ীর ডাক এদের মূল-লক্মীর ব্রত। কোজাগরীতে শ্তধু 'খজাগর ঝাঁলাই'। দল বেঁধে গান করে মাগন তোল!। তারপর থানে খজাঁখজি ঝাঁলান হবে, সেখানে অর্থাৎ গানের দলের কারো! অঙ্গনে ধানের গোঁলার সামনে জড়ো হয়ে বসে খুবই ভক্তিভরে গাওয়া হয় মূল খজাগর গান-__ করচ খেলান মা! গো করচ খৈলান খজাখজি ঝালাই হামবা শোলের পোহান করচ খেলান মাগো করচ খৈলান খজাথজি ঝাঁলাই হামরা ূ পৃবের মাশান। করচ ধখলাঁন মাগো করচ খৈলান খজাখজি ঝালাই হামবা পশ্চিম মাশান । করচ খৈলান মাগো করচ খৈলান খজাখজি ঝালাই হামরা উত্তর মাশান ৮২ কবচ খৈলান মাগো কবচ খৈলান খজাখজি ঝালাই হামর। দক্ষিণ মাশাঁন । অর্থাৎ কবহ কল্যাণ মাগো করহ কল্যাঁণ। আমরা কোঁজাগরী পালন করি শোলেব পোনা দিযে । করহ কল্যাণ মাগো করহ কল্যাণ । কোজাগরী পালন করি আঁমবা পূর্ব, পশ্চিম, উত্তব-দক্ষিণ মশানে গিষে। অর্থাৎ সবদিকেই আমবা কোজাগবী পালন কবি। এব পবে খজাখোজিব দল নেচে গেষে ওঠে ঢেকি উঠি কষ যে নারদেব নাতি শামস্ুন্দরী ধানকুটে ফেচাৎ মারে লাখি ॥ মশাঁব কামডে ধান বানে বান সোনার কামুডে ধান বানে বান ঢেকি উঠি কষ যে হামারা ছুইভাই শামস্ুন্দবী ধান কুটে হামরাই গীত গাই ॥ মশার কামুডে ধান বাঁনে বান সোনার কামুডে ধান বানে বান মুগর উঠি কয যে সোনা বান্ধ! ঠোঁট শামত্রন্দবী ধান কুটে মুহে করুং গোট | মশাব কামুডে ধান বানে বান সোনার কামুডে ধান বনে বান ভু্তি উঠি কয যে মোব মাটির তালাঘর শামস্ন্দরী ধাঁন কুটে মোর বুকের উপর মশার কাঁষুড়ে ধান বানে বান সোনার কামূড়ে ধান বানে বান ৩ বাঁরুং উঠি কয় যে চার বাঁধনে দড় শামসুন্দরী ধানকুটে মুখে করুং জড় । মশার কামূডে ধান__ কুলা উঠি কয় যে বেত বীধা বুক শামহন্দরী ধান কুটে কুটি ফালাউং ফুক ॥ মশার কামূডে ধান-_ খল! উঠি কয় যে মোর নাম খলাই শামস্থন্দরী মুডি ভাজে পাছা মাঝে জ্বালাই ॥ মশার কামূডে ধান__ কাঠা উঠি কয় যে মোর নাম টেপা শামন্ুন্দরী ধান নাপে মুগ্চি ককং লেখা । মশার কামূডে ধান__ গীনের অর্থঃ নারদের নাতি ঢে'কি উঠে বলে শামসুন্দরী ঢে কির পশ্চাৎদেশে লাঁঘি মেরে ধান কোটে। মশার কাঁমডে ধান বানের জোয়ারের মত বাড়ে ॥ চে'কিরা ছুই ভাই। ধান কোটায় তার যে শব উঠে তাই তাদের গান । ঢে'কির মাথার নীচে মুদগরের মতো অংশই মুগর। এবং মাথাটি লোহার পাত দিয়ে বীধানো। যেহেতু ধানের সঙ্গে সোনার তুলনা হয়, সেজন্য মুগরের ঠোট সোনা বীধানোঁ এমনি তুলনা দেওয়া হয়েছে । গোট হল ধান থেকে চাল ছাড়ানো ॥ যেখানে ঢে'কির মুগর গিয়ে ধাক্কা মাবে সেই অংশটিতে, যেখানে একটি গর্তের মধ্যে একটি কাঠের খোটা পৌতা। তাই হল ভুণ্তি। তাইসে বলছে তার ঘর মাটির তলায় । এবং বস্ততঃ ঢে'কির পাড তার উপরই পড়ে। বাকং হল কুশের ঝাঁটা। তা চারিটি বাঁধনে শক্ত। দড় অর্থে শক্ত, ঘর । চারদিকে ধান ও চাঁল ঢেকিপাডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। বারুং তাই জড়ো করে। কুলো। বেতে বাঁধা । তার কাজ ফুক অর্থাৎ তুষ ঝাড়া । খল] হল বড় কড়াই। চাঁল সেম্ধগ করার বা ভাজার পাত্র। ২৪ এখানে সম্পূর্ণ গাঁনটাই ধান কোটা থেকে মুড়ি ভা! পর্যস্ত বিভিন্ন ক্রিয়া- কর্মের সঙ্গে যুক্ত । একজন কথকতার ভঙ্গিতে স্থর করে গান গায়। বাকিরা দোহার তোলে “মশার কামুড়ে ধান বানে বাঁন।, ধান গাছে মশ! নাকি ধান ভাল হওয়ার কারণ এরূপ তথ্য এই গানে রয়েছে । একজন রুষককে জিজ্ঞাসা করায় এ তথ্য সম্পর্কে তিনি সায় দিয়েছেন । খজাগরের গানের শেষে সংগৃহীত চাল ডাল পয়সা প্রভৃতি দিয়ে ভক্তরা খাওয়া-দাওয়া করে ॥ উত্তরবঙ্গে লোকযান- কুশমণ্ী থানার কয়ানগর শাখাব শিল্পীরা এই গান নৃত্য ও অভিনয় সহলগে নানা জায়গায় করে বেডান। “বাড়ির কাছে চম্পানদী' গানটি আমি খ্যামটা স্থরে তাদের গাইতে শুনেছি। গানগুলি পঃ দিনাজপুর জেলার কচডা গ্রাম থেকে সংগৃহীত। এগুলির সংগ্রহ মাধ্যম £ শ্রীফতীন্দ্রনাথ সরকার । ৫ দীগ্পান্হিত! ॥ উত্তরবঙ্গে রাজবংশী সমাজে দীপান্বিতা পালিত হয় নানা অনুষ্ঠানের মাধামে ৷ এই অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অমাবন্তার রাতে কালীপুজো তো আছেই। তবে এই প্রসঙ্গে বলে রাখ! দরকাঁর যে উত্তর বাংলায় কালী নানা নামে বছরের বিভিন্ন সময় পূজো পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন নামের কালীর মৃততি থাকুক আর নাই থাকুক গ্রামে গ্রামে তাদের থান আছে অসংখ্য । এই রকম কালীর কয়েকটি নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। ওয়াসিয়া কালী, চোরকালী, রটস্তী কালী, সাঁপ কালী, রাখাল কালী, ঝাঁপড়ী কালী, বুড়ি কালী, মেছেনী কালী, বন্থর1 কালী, স্থুর কালী, বাঁওকালী, মাদার কালী প্রতৃতি। কালীপৃজো ছাভা এই সময় রাজবংশীরা (এক ) গোক চুমানি (ছুই ) গছা দেওয়া বা হকাহ্ছকি এবং (তিন ) চোর খেলা ও চোর চুরণী বা চক-চুন্দী গানের অনুষ্ঠানও করে থাকেন । ৃ গরু চুমানি ঃ চুমাঁনি অর্থ বরণ, কালীপুজোর পর দিন মতাস্তরে কালী- পুজোর আগের দিন রাঁজবংশী গৃহস্থ তাঁর বাড়ির গাভীগুলোকে এমনকি হালের বলদগুলোকে ক্বান করিয়ে তাঁর মাথায় ধান-ছ্ববা ও তেল-সিঁছুর দেন। স্ধ্যায় গোয়ালঘরের সামনে গৌরুকে তেল-সিঁছুর দেওয়া হয়। গ্োরুগুলোর সঙ্গে রাখালকেও বরণ করাই রীতি। রাখাল সেদিন তানের পর গৃহস্থের কাছ থেকে নতুন জামা-কাপড় ও মিষ্টান্ন উপহার পান। গোক-চুমানি বিষয়ক একটি গান : ওই শেখালিয়৷ নাই মোর নশিবে আইসেক সোয়ামী চুমাত্ড রে তোক। ওগে, গোরু চুমাইতে নাগে কি ধান দুব্বা তুলসী । আরো নাগে কাঞ্চা হোলোদি ।১ শেখালিয়া কথার অর্থ রাখাল। দরিদ্র রুষক বধূ বলছে, আমার ভাগো রাখাল নেই । স্বামী তো রাখালের কাজ করে, তাই স্বামী আজ তোমাকেই বরণ করি। এই গানটি থেকে বোঝা যাচ্ছে গৌক-চুমানো কাজটি করেন' রাজবংশী গৃহস্থের.বধূ। গোরু চুমানো অনুষ্ঠানে কি কি দরকার তাও গানটিতে বলা আছে। গছ! দেওয়! £ আসামের !গোয়ালপাডা, বাংলাদেশের রাজবংশী অধুষিত জেলাগুলোতে এবং জলপাইগুডি, কোচবিহার, দারজিলিং জেলায় গছা দেওয়া নামে অনুষ্ঠানটি প্রচলিত। আর পশ্চিম দিনাজপুর ও মাঁলদহে এই অনুষ্ঠানটির অন্য নাম হকাহুকি। তবে গছা দেওয়া ও হুকাহুকির উদ্দেশ্ঠ একই হলেও কৃত্যটির মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে । এখানে শুধু গছা দেওয়ার কথাই বলা হল। কালীপূজৌর দিন সন্ধ্যায় এবং কোথাও কোথাও, পরের দিন বাস্বঠাকুরের থানে চারটি, বাঁড়ির প্রতিটি ঘরের সামনে দুটি করে কলাগাছ পুতে মাটি সুন্দরভাবে লেপে দেওয়া হয়। অধিকারী এসে প্রথমে তুলসীমঞ্চে পুজো করেন। তারপর যেখানে চারটি কলাগাছ দিয়ে মণপ তৈরি হয়েছে, সেখানে গিয়ে পূজো দেন। মাটির প্রদীপ বা চেরাগ বাতি সরষের তেলে নিষিক্ত করে জেলে দেওয়া হয়। বাড়ির মেয়ের! পরে অন্যান্যরা কলাগাছের নীচে প্রদীপ জেলে দেন। পরদিন ভোরবেলা লোকজন ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগেই সমস্ত কলাগাছ তুলে নিয়ে নিকটস্থ কোনও পুকুর বা নদীতে ফেলে দেওয়া হয় ।২ চোরখেলা, চোর চুরণী গান বা চক চুঙ্ছি ঃ গোটা উপ্তরবঙ্গেই এই গাঁন। এই রচনাটির জন গ্রন্থ খণ £ ১) প্রাস্ত“উত্তরবঙ্ষের লোকসঙ্গীত ২। উত্তরবঙ্গে রাজবংলী সমাজের দেবদেবী ও পৃজা-পার্বণ | ২৭০ তবে সর্বত্রই গানের বিষয়বস্ত এক নয়। পশ্চিম দিনাজপুর মালদা জেলার রাজবংশী দেশী পলিদেরমধ্যে চৈতন্যদেবের প্রভাবে চোর-চুরণী গানের এক বিশেষ তাৎপর্য সৃষ্টি হয়েছে । সে আলোচনা এখানে নয় । তিস্তার পূবদিকে ধুপগুড়ি থানায় কালীপুজোর পর দিন ভোরবেলা! থেকে একটি আচার পালন কর! হয়। গ্রামের ছেলেরা কখনও দলবদ্ধভাবে কখনও এককভাবে নানা রকমের মুখোশ পরে কিংবা রং মেখে গৃহস্থের দুয়ারে এসে চিৎকার করে বলে চোর, চোর। তারপর গৃহস্থের সঙ্গে নানা রঙ্গ তামাসা করে গান গেয়ে চাল ডাল বা পয়সা নিয়ে ঘুরে বেডায়। এই রকম কার্তিক পুিমার আগের দিন পর্যস্ত চলে । পশ্চিম দিনাজপুরের গ্রামে আমি এই বিষয়ে একটি গান শুনেছি £ ইয় বছরকার জন্পুই গিল। বেজায় ধইরাসে হলফল হলফল করে অসিয়া, খাবামনাইসে। এই বছরের জলপাইগুলে! গাছে প্রচুর ধরেছে। দেখতেও ভারি স্বন্দর। তাই খেতে মন হয়েছে । চোর-চুবণী গান তিস্তার পশ্চিমদিকে বিশেষত পাহাড়পুর রংধামালী থেকে 'শ্তরু করে মঙ্গলঘাট পর্যন্ত অঞ্চলে সাধারণত কালীপৃজোর অমাবস্তার পরবর্তী অষ্টর্মী তিথি থেকে পববর্তী পৃণিমা পর্যস্ত চলতে থাকে । এইসব অঞ্চলে একজন সাজে চোব আব একজন সাজে চুরণী অর্থাৎ চৌরের বউ । তারপর উক্তি-প্রত্যুক্তির মধা দিয়ে চলে গান। এই গানের মধ্য দিয়ে গ্রামের সামাজিক, অর্থ নৈতিক অবস্থার পর্যালোচনা করা হয়। বন্যা, বড়, ছুতিক্ষ নির্বাচন, অবৈধ প্রেম সব কিছুই গানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হয়। চোর-চুরণী 'গানকে লোকনাটা বল] চলে । তবে, নাটক যেমন আদি-মধ্য-অস্ত্য কাহিনীযুক্ত, চোঁর-চুরণীর গানগুলির কাহিনী এই রকম ধারাবাহিকতা যুক্ত নয়। ছোট ছোট ও খণ্ড খণ্ড। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য “দীপান্বিতা” শবটি সাধারণ রাজবংশী সমাজে অপরিচিত। ১৪ হক্চান্ছন্কি ও োল্পগ্পুজ। ॥ শাবদীয়স্তকলা তিথি তার চাদর গুটিয়ে নেয় প্রকৃতি থেকে । ধীরে ধীবে নেমে আসে হৈমন্তী কৃষ্ণা। পশ্চিম আকাশে স্ব ডুবতে না ডুবতেই মাঠে মাঠে হেউতি ধানের উপর কৃষ্ণপক্ষের আধার ঘনিয়ে আসে। ক্রমশ মে আধার নিকষ কালো হয়ে ওঠে । লোক-জীবনে তখন ব্রত উৎসবের প্রকারভেদ ঘটে। তাই দেখি উত্তরবঙ্গের রাজবংশী দেশী সম্প্রদায় গ্রামে গ্রামে এই সময় এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের ব্রত উদযাপনে বাস্ত। কেউ বলে হকাঁহুকি, কেউ বলে উক্কা। আবার কারো মতে চোরচটিয়। বা ওয়াসিয়।। কথায় বলে, কান্তিক মাসের অমাবন্তা মে ব্ড ঘোর ও ভয়ঙ্কর । এই তিথিতেই মহাকালীর পুজা । এই তিথিতেই দেখি চোর-পুজার ব্যবস্থা। উত্তরবঙ্গে তাবৎ রাজবংশী সম্্রদায় এ তিথিতেই যে গান বাঁধেন তার নাম চোর-চুরনী | শ্তধু অঞ্চলভেদে এর প্রকারভেদ । প্রথমে বলি “চোর পৃজার' কথা । কিক মাসের অমাবস্তায় কালী-পৃজার রাত্রে পুজাটি শ্তরু। গ্রামে যাদের বাড়িতে চোর পুজ! প্রচলিত, তারা গ্রায়েব মালাকারদের কাছ থেকে শোলার মুখোশ তৈরি করিয়ে নেয়, তারপর সেই "বাড়ির কোন একটি ছেলে সেই মুখোশ পরে বাঁড়ি বাঁড়ি ঘুরে অর্থাদি সংগ্রহ করে। যাঁদের বাড়িতে এই পুজে! প্রচলিত তাদের বাঁড়িতে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয় না; সংগৃহীত অর্থ দিয়ে এই পুজা কর! হয়ে থাকে | শোঁলার মুখোশটিকেই পুঙ্ে! করা হয়। এবং সেই সঙ্গে পায়রা! বলি দেবার প্রথাও আছে। এই পুজায় স্থানীয় মালাকারই পুরোহিত | চোরপুজ! বহুল প্রচলিত নয়। কিস্তু উত্তরবঙ্গের রাজবংশী দেশী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সময় যে' ব্রত বা উৎসব প্রচলিত তার নাম হকাহুকি। কালীপগুজোর একদিন আগে করলে তার নাম চোরচটিয়! আর কালীপুজোর দিন করলে তাকে বলা হয় ওয়াঁসিয়া। পঃ দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমার রহত্পুর গ্রামে দেশী-পলিদের মধ্যে এই সময় এই ব্রত “উন্কা উৎসব নামে প্রচলিত। উদ্কা উত্সব প্ররুতপক্ষে কাত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত হলেও আশ্বিন মাঁসের সংক্রান্তির দিন থেকেই এর শুরু। কার্তিক মাসের অমাবস্যার সন্ধায় গ্রামবাসীরা নিজ নিজ বাড়ির এবং ধানের ক্ষেতে প্রদীপ জ্বালান। কেউ কেউ আবার ওইদিন ধানের ক্ষেতে অস্থায়ী চালাঘর তৈরি করেন। সেখানে যে পূজোর আয়োজন হয় তার নাম “নিশিপৃজা” | এইদ্দিন সন্ধ্যায় গ্রামের ঘরে পাটকাঠিব গোছা দিয়ে উদ্ধা তৈরি করানো হয়। এর অপর নাম সিজ]। সন্ধ্যায় এই উক্কাগুলিকে আকাশে মৃত পূর্বপুকষদের উদ্দেশে ছুড়ে দেওয়া হয়। প্রায় অনুরূপ হলেও হকাহুকি ব্রতের স্বাতস্ত্র আছে। অমাবন্তা তিথিতে ব্রতে অংশ গ্রহণ করেন যে মেয়েরা তারা একটি ডালায় তেল সির পার্টরকম শস্য, ( পাশোসি ) চেরাগ বাতি প্রভৃতি সাজিয়ে রাখেন। সেইসঙ্গে কাচা হলুদ আর হুর্বা ঢে'কিতে কুটে তেল দিয়ে মেখে সেই ডালার এক অংশে রেখে দেন। এই ভালার নাম স্থানীয় ভাষায় “চন: । | পাঁটকাঠির গোছা ইলুয়াকাশের খড় দিয়ে বেঁধে তৈরি কর! হয়। আর মাটির ঘড়া বা গঙ্গাও এই সঙ্গে নিশ্সিত হয়। এই সিজাগুলিকে তেল সিছুর মাথিয়ে আঠিয়া কল!, ভাদই ধান এবং পা্টরকমের শল্ত ( পাঁচ+ শম্ত-পাশোসি) দিয়ে সাজিয়ে বাড়ির দেবস্থানে রাখা! নিয়ম । অন্ধ্যা- বেল! দেবস্থানে মাটিতে চাদ, সুর্ঘ এবং ““নাঙ্গল জুয়াল' অস্বিক্ত হয়। 'দেবস্থানের পুজা হয়ে গেলে সিজার আটিগুলি আগুন দিয়ে জেলে ৩৩ ব্রতের শরিকরা! বাঁড়ির পুকুরঘাটে গিয়ে উপর দিকে ছুড়ে দেবে। সেই সময় ম্বৃত আত্মীয় হ্বজনদের উদ্দেশে বল! হবে আলোই দেখ। যেমন, 'আজুরে আজু, আলোই দেখ' (দাছুরে ছা আলে। দেখ ) অথবা আতারে আতা, আলোই দেখ" (দিদিমাগো। দিদিমা, আলো দেখ )। এরপর সমন্বরে উচ্চারিত হবে, হকারে হকি আইজ থেকে পরম ম্থুক।, এরপর অর্ধেক সিজার আটি ভাঙ্গায় রেখে বাকি অর্ধেক জলে পু'তে দেবে। বাড়িতে ফিরে এসে ব্রতীরা যে যার বৌদি এবং বোনের কপালে কাজল ও সিছুরের ফোটা! দেবে। এবং সেই সঙ্গে সিজ! ভেজানে! জল এবং পাশোসি মাথায় ছিটিয়ে দেওয়া হবে। হুকাহুকির ঢন গৃহস্থ বাড়িতে যত্ব করে রেখে দেবেন নকলে । কালীপুজোর দিন ভোরে বাড়ির মেয়ের! 'গরুচুমা” অনুষ্ঠান করে। সেইদিন সাত সকালে বাঁড়ি-ঘর-ছুয়ার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ক'রে কাচা হলুদ ও দুর্বা ঢে'কিতে কুটে সরষের তেল দিয়ে কলার ঢনায় মাখে। তারপর তারা দল বেধে গোয়াল ঘরে গরুর কপালে তা মাথিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে সিদুরও মাখায়। এরই নাম গরুচুমা"। গরুর গলায় সেদিন শোলার ফুল বেঁধে দেওয়া হয়। আর কলার পাতা ও কলার “ঢাড়ি” দিয়ে তৈরি “চটপুটিয়া” গোয়ালঘরে রেখে দেওয়া! হয়। ১ নৈৈল্লাটেল্স হুডি ॥ পশ্চিম দিনাজপুবেব একটি গ্রাম বৈবাহাট্রা । জনশ্রুতি বৈবাহাট্রা মহাভারত কথিত বিবাট নগব। পাগ্বগণ অজ্ঞাতবাসকালে এখানে এসেছিলেন । এখন এই বৈরাহাট্রা গ্রাম জঙ্গলাকীর্ণ। এখানে প্রধানত দেশী সম্প্রদায়ের বাস। তাদেব জীবিকা কৃষিকাজ । এখানে তিনটি প্রাচীন দিঘি আছে। তাদেব নাম গড়দিঘি, আলতা দিঘি এবং মালিয়ান দিঘি। স্যার ফান্সিস হ্যামিলটন বুকানন ১৮৮০-৮৯ সালে এই গ্রাম ও দিঘি সম্বন্ধে যে বিববণ দিযেছেন তা খুবই কৌতুহলজনক ও এঁতিহাসিক। এখন শুধু এইটুকু বল! যায় যে এই দিঘিগুলি প্রান কোন রাজধানীর, ইঙ্গিতবহ। এই গ্রামের প্রধান বাস্তা যে ইট দিয়ে বাঁধানো ছিল এবং রাস্তার দুপাশে অনেক পাকাবাঁড়ি ও মন্দির ছিল, তা এখনে! বোঝা যায়।' এই বৈরাহাট্টা বা বৈরাট গ্রামের সর্বাধিক উল্লেখষোগ্য পূজা ও মেলার নাম বুড়ীকালী। প্রতি বৎসব কার্তিক মাসের শেষ বুধবার থেকে বুজী কালীর পুজা স্তর হয়। তছুপলক্ষে বসে মেলা । চলে তিনদিন ধরে। এখানে বলে রাখা ভাল, এই অঞ্চলে একদিনের জন্ কোন উপলক্ষে মেল! বসলে তার নাম হয় বাজার। সেই বাজার একাধিক দিন ধরে চললে বলা হয় মেলা । গ্রামের আমতলায় একটি চালাঘর আঁছে। তাঁর সামনে বেশ খানিকটা অংশ জুড়ে চত্বর, পাশে একটি পুকুর । সমস্তই দেবোত্বর সম্পত্তি। আমতলার চা্পাশে অনেকগুলি বড় বড় গাছ। বট, অশ্ব, শিন্লও আছে। তাছাড়া? নিকটেই রয়েছে একটি বীর্ঘবন। ফলে, চারদিকের পরিবেশ ছা়াময় গ্গিগধ। আমতলার চালাঘরে বুড়ী কালীর কোন মৃততি নেই। শুধু মাত্র কার্তিক মাসে পূজোর সময় কাঠের তৈরি কতকগুলি কালীর মুখোশ সেই চালাঘরে রাখা হয়। কিন্ত এই মুখোশগুলির রঙ কালো নয়। কোনটির রঙ হলুদ, কোনটি সাদা আবার কোনটি শ্যামবর্ণ। প্রতিটি মৃতিতে জিহবা রয়েছে। মাথার মুণট শোলার। এছাড়া আরো কয়েকটি কাঠের মুখোশ রয়েছে সেই চালাঘরে। সেগুলি কোন দেব-দেবীর বলে মনে হল না। এই গ্রামে একটি অসাধারণ মুখোশ দেখেছি । তার নাম কেউ বলেন মাশান, কেউ বলেন গিংহলরাজ। একটি কুলোর পিঠে ভূষো কালি দিয়ে রঙ করা। সাদা খড়ি দিয়ে চোখ মুখ আকা । এছাড়া বুহদ্াকাঁর সাদ] রঙের একটি মুখোশের নাম বুড়ী চণ্তী। এইসব মুখোশ তৈয়ার করেন স্থানীয় মালাকারেরা। কালীর পূজো হয় লৌকিক মতে। পুজারী কোন ব্রাহ্মণ পুরোহিত নন | দেশী সম্প্রদায়ের অধিকারী । মন্ত্ও অ-সংস্কত আঞ্চলিক ভাষায়। পূজোয় তিনদিন ধরে আমতলায় ঘে গান করা হয় তার নাম চণ্ডীআলা। আসলে চণ্ডীআল! গান উত্তরবঙ্গের ( মালদহর ) প্রথাত কবি মানিক দত্তের চণ্রীমঙ্গল কাবা । এই গানের প্রধান গায়েন নিজেকে মানিক দত্তের বংশধর বলে দাবি কবেন। এখানে চণ্তীমঙ্ষল কাব্যের বণিক খণ্ড অংশের ধনপতি লহনা খুল্পনা কাহিনী গীত হয়। চণ্ীর অনুচরদের সঙ্গে রাজার সৈন্যদের লড়াই অংশ অভিনীত হয় নৃতোর মাধামে। ফলে কেউ সাজে হাতি, কেউ ঘোড়া। আবার কোটাল সেনাঁপতির সাজেও সজ্জিত হয় কেউ। বিভিন্ন চরিরের জন্য মুখোশের ব্যবহারও বিভিন্ন । কিন্তু পরিধেয় বন্ত্রেরে কোন পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ যে যেমন পোশাক পরেছিল যেমন ধুতি, পাজামা, জাম। অথবা! জামাহীন উদ্দোম গাঁ, শুধু মুখের ওপর চড়িয়ে নেয় একটি মুখোশ তা৷ বুড়ি চণ্ডী বা কোটালের_যারই হোক না কেন। তাই হয়তো পূজোর মণ্ডপে কালীর মুখোশের পাশে কিছু অন্যান্য মুখোশও দেখেছিলাম । বলাবাছলা এ সমস্ত মুখোশই কাঠের তৈরি। বুড়ি পুজার শেষদিনে ভক্তের দল মণ্ডপ থেকে সব মুখোশ তুলে সিন্দুর চুমানৌ মাখানো খড়গ নিয়ে আমতলার উঠোনে ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে উদ্দাম নৃত্য করে। প্রথমে তারা গোল হয়ে নৃত্য আরম্ভ করে। তার- উঃ গ্রাঃ ৮ঃ--৩ ৩৩ পর, ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সারা চত্বরে । এদের নৃত্যের ভঙ্গিতে ছুটি সাধারণ রূপ লক্ষ করা যায়। সে আলোচনা অবশ্য স্বতন্ত্র । নাচের দলের মধ্যে যার হাতে খড্া থাকে, ক্রমে তার মধ্যে দেবী ভর করেন। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয়, পাতা পডা বা ঘোড়া পোড়া । অবশ্ত অপদেবতার ক্ষেত্রেই পাতা” কথাটি প্রযোজ্য । ভর-পড়া অবস্থায় তার চেহারা হয় ভীষণ। তাকে অনেক স্তরতি মিনতি করে ঠাণ্ডা করতে হয়। নয়তো! তার উদ্দাম নৃত্য সহজে থামতে চায় না। সে নৃত্য দেখে উপস্থিত অনেকেই ভয় পায় । ভর-পড়া ভক্ত আমতলাব কাছেই একটি গাছের তলায় বসে। তাকে ঘিরে থাকে নানা গ্রাম থেকে ছুটে আসা সমন্থা-জর্জর ভক্তের দল। এই ভর-পডা৷ লোকটিকে তখন সবাই মনে করে বুডি কালী। তাকে সবাই ভক্তি ভরে প্রণাঁম নিবেদন কবে। কাঁতরম্ববে জানায় নানা সমস্যা । দুরারোগ্য রোগ থেকে আর্থিক ও পাবিবারিক নানা সমস্তার সমাধানের কথা! জেনে নিয়ে এবং মানৎ দিয়ে তাঁরা বাঁডি ফেরে । সকলেরই যে সমস্যার সমধানের কথা ভর বা পাতা অথবা ঘোডা__পডা বলে তা নয়, কাঁউকে কাউকে নিরাশও করে দেয়। আমি কত কত বিকলাঙ্গ শিশুকে এই ভরের কাছে নিয়ে আসতে দেখেছি । গ্রামের মানুষ ভয় ও ভক্তিভরে বিশ্বাস করে এই ভরকে। এই বিশ্বাসের ফলও নাঁকি অনেকে পেয়ে থাকে । তাই এ অঞ্চলে প্রচলিত-_যে বৈরাটের বুডি বড জাগ্রত। ৩৪ হ্মাহমীন্ ॥ বাংলার গ্রামে গ্রামে প্রভাতে সন্ধ্যায় বিভিন্ন তিথিতে কত ব্রতই না উদযাপিত হচ্ছে-কতটুক তাঁর জানি । এইসব ব্রত অনুষ্ঠান গুলির মধো লুকিয়ে থাকে দেশের প্রান ধারাবাহিত সংস্কৃতির কথা। যেগুলে। বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখলে অনেক অজান! তথা উদঘাটিত হয়ে পড়ে । যদিও বিচার বিশ্লেষণের জন্য এ নিবন্ধ নয়। প্রাধানত £ পরিচয় দেওয়াই এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য । উত্তর বাংলার পশ্চিম দিনাজপুর জেলার একটি উল্লেখযোগা ব্রতের নাম “মাধী-ব" | এই ব্রত ধারা পালন করে থাকেন তাঁরা নিজেদের দেশী বলে পরিচয় দেন। এ ব্রত একান্ত তাদেরই নিজন্ব ব্রত বলে দাবি করা হয়। এ জেলায় অন্য কোন সম্প্রদীয় এ ব্রত করেন না। এই প্রসঙ্গে দেশী সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা যেতে পারে। বৃতত্ববিদদের মতে “দেশী” বা! “দেশীয়া' সমাজ “রাজবংশী' জাতি সম্প্রদায়ভুক্ত | সারা উত্তরবঙ্গ__ (বাংলাদেশের দিনাজপুর, রংপুর ধরে এবং আমাদের দাঁজিলিঙ বাদ দিয়ে) জুড়ে কোচ ও রাজবংশী আদিনিবাঁসী লোকের সন্ধান পাওয়া যাবে। নৃতত্ববিদ রিজলে সাহেবের মতে বাঁজবংশী ও কোঁচ কোন আলাদা! জনজাতি নয়। এর! নানা কারণে একের সঙ্গে অন্যের পার্থকা সৃষ্টি করেন। ১৯১১ ত্রীষ্টাবে তৎকালীন জনগণনা অধিকর্তী মিঃ এল এল এস ওম্যালী সাহেব তীর প্রতিবেদনে বাজবংশী ও কোচের আলাদ। ছুটি জনজাতি হিসাবে দেখেছেন | বলা বাহুল্য, তিনি রিজলে সাহোবের সঙ্গে একমত হননি । তবে “দেশীয় সম্পর্কে কোন দ্বিমত নেই। ওরা রাজবংশী ক্ষত্রিয় জাতিরই অন্তভুক্ত। এই জেলায় “পলি” 'পলিয়া” অথবা “পালিয়।” নামে অসংখ্য লোকের সন্ধান পাওয়া যাবে। ধাদের অনেকেই নিজেদের ক্ষত্রিয় বলে পরিচয় দেন। অথচ চেহারায় আকৃতিতে কোথাও দেশয়ারদের সঙ্গে পার্থক্য ধরা কঠিন। এর সবাই হয়তো মূলে মোঙ্গলীয় বড়ো! জনজাতি । সামাজিক নানা কারণে দেশয়াদের সঙ্গে এদের প্রভেদ বর্তমান । দেশীতে “পলি' বিধিমত কোন বিবাহ চলে না । পলি বা পলিয়াদের নিজস্ব পুরোহিত এখন দেখ। যায় না কিন্তু দেশীয়াদের পুরোহিত নিজেরাই । শ্রাদ্ধ, বিবাহ, পুজা-পার্বণে নিজেরাই পুরোহিতের কাজ চালান তবে এ রাও এখন ত্রাঙ্ষণ পুরোহিত ব্যবহার করছেন। এরা নগুণ উপবীত ধারণ করেন। এদের ঘরে ঘরে ধান কোটার জন্য ঢেকি। পপিরা কেউ কেউ ঢেকি ব্যবহার করলেও “ছামগাহিন” অধিক সংখ্যায় ব্যবহার করেন। দেশয়ারা নামের সঙ্গে উপাধি ধারণ করেন প্রধানত 'দেবশর্ম॥ । আবার সরকার" উপাধিটাও বেশ প্রচলিত । 'দেবশর্ম” 'সরকার' উপাধিগুলো! যে অর্বাচীন সেটা বোঝা দুষ্কর নয় । নামের সঙ্গে 'দেশী' উপাধিটাই মূল। তার প্রমাণ দলিল দস্তাবেজ ছাড়াও গ্রামে গ্রামে এখনো রয়েছে। তবে 'দেশ'বা সংখ্যায় খুব বেশি নয়-__-পঃ দিনাজপুর জেলাতেই তাঁদের বাস সর্বাধিক | এ জেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখেছি ব্রত-কে 'ব' বলা ঞঅঞ্চলের বৈশিষ্ট্য ভাষাতত্বের নিয়ম-অন্সারে ব্রত হয়েছে 'ব' | যেমন বিষহর।-ব ( ব্রত ), চণ্ডী-ৰ নক্ষ্ী-ব প্রভৃতি । দেশী সম্প্রদায়ের মাঘী-ত্রত পূর্ববঙ্গের ( অধুনা বাংলাদেশ ) মাঘমগুলীর ব্রত কথা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন । 'মাঘী-ব' মাঘ মাসের মধ্য বা তৃতীয় রবিবার সন্ধ্যার পূর্বে সুর্যান্তের ঠিক পরমূহূর্তে অন্থঠিত হয়ে থাকে । মাঘমগ্ুলী ব্রতের মতোই এতে মেয়েরাই একমাত্র অংশী। তবে মালাকার বা পুরোহিত হন পুরুষ । মাঘমগ্ডলীর ব্রত সূর্যোদয়ের পূর্বে পুকুর ঘাটে হয়ে থাকে | সেখানে উপান্ত দেবতা “সুর্য | কিন্তু “মাঘী-ব'-র উপাস্য দেবতা “ধরম ঠাঁকুর” | কিন্তু এ ধরম ঠাকুর রাড় অঞ্চলের কিংবা! জলপাইগুড়ি জেলার বর্মণ রাজবংশী সম্প্রদায়ের ধরম ঠাকুর থেকে ভিন্ন । এই ঠাকুরকে দেশীরা বিষ্ুর অবতার রূপে দেখে থাকেন। এই অঞ্চলটি যেন ঝিষ্ণুবই প্রাধান্ত। এদের প্রধান উপাস্ত দেবতাও বিষুঃ। ৩৩৬ এদের আচার-ব্যবহার চলা ফেরার মধ্যেও বৈষণবোচিত নম্রতা ধীরতা ও স্থিরতা বর্তমান । তাই বলে এরা! প্রব্রজ্যাবিলাসী নন; নির্বল আলম্ত এদের দ্বণার বস্ত। মনের দিক থেকে এবা স্থঠাম ও দৃঢ় । এরা স্থৃতত্র সঙ্জন অতিথিপরায়ণ । 'মাঘী-ব'তে মেয়েরা প্রার্থনা করেন ধর্মের কাছে। ধর্মবক্ষার কামনা করেন তীরা, পরিবারের সকলের ধর্মে যেন মতি থাকে, ফসল যেন ভাল হয়। এদের কাছে ধর্ম হল কৃষিকর্ম। কেননা কৃষিভিত্তিক এদের জীবন, এদের কি । এই অনুষ্ঠানের ক্রিয়াকর্মের মধো নিতিত রয়েছে এর মর্ম কথা । গ্রামে 'ধরম” ঠাকুরের থান থাকলে ভাল। সেই থান তলায় মাটি খোদাই করে তৈয়ারী হয় ধরম ঠাকবের বিশালকায় মন্তি। যদি থাঁন তলা না থাকে তো কৃষি জমি খোদাই করে নিসিত হবে মতি । এর জন্য কোন বিশেষ শিল্পীর দরকার নেই । আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করা গেছে বালকেরা এবং মেয়েরা এই শিল্পকর্ম সম্পাদন করে থাকে । শি্পকর্মটিতে স্বস্তিকা” চিহ্নব কথা প্মরণ করায় । মৃত্তিটি উদ্বাহু চৈতন্য ভঙ্গিতে । -নবে কনুই ভাঙ্গা । পা দুটি বিস্তৃত। বিশাল ছুটি চোখ শান্ত স্থির । এর শিবোদেশে নাভিমগুলে এবং নিয়ে জননাঙ্গের স্বানে একটি করে মোট তিনটি ছোট কলাগাছ প্রোথিত হয়। সেই তিনটি গাছে তেল সিঁভব ঢাঁলেন মেয়েবা। এর কোন নির্দিষ্ট পবিমাণ নেই | যাঁর যেমন “মানত বা “মানসিক” সেই পরিমাণ অস্থসাঁরে তেল-সি ঘুর ঢাল! এই ব্রতের নিয়ম । মাঘমগ্ডলী ব্রতে অংশ গ্রহণ করে শুধু কমারী মেয়েরা । কিন্ত এ ব্রতে কমারী- সহ সধবা, বিধবা সবাই অংশ গ্রহণ করতে পারে । মুক্তিটির পদদ্বয় দক্ষিণে, শিরোভাগ উত্তরে । অথচ বাংলাদেশে প্রবাদ রয়েছে উত্তরে মাথ]| দিয়ে শুতে নেই। কিন্ত এক্ষেরে দেখা যাচ্ছে পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গের চিস্তাঁধারা থেকে এরা সম্পূর্ণতঃ পৃথক । মৃন্ডিটির দেহের ওপর ভোগ হিসাবে বসানে। হয় সারি সারি উথুরা, মুড়কি ভন্তি হাঁড়ি। দুধ, কলা ও চিনি । এই ব্রত শুর হয় সারিবদ্ধ মেয়েদের ধরমঠাকুবকে বেষ্টন করে পাঁচবার প্রদক্ষিণ করার মধা দিয়ে। প্ররদক্ষিণান্তে মৃত্তিটির পূর্বদিকে ও পশ্চিম দিকে ফাড়িয়ে ছু*-ছুবার আতপ চাল, কড়ি, পয়সা, ফল, কলাই এবং পাঁচরকমের শস্ত (লৌকিক নাম পাশোসি' ) ধরম ঠাকুরের দেহের ওপর দান করা হয়। এই শশ্যদানের নানা ভেদ রয়েছে। সে বছর যে যেমন ৩৭ শম্তের ফলন চায়, সে তেমন সেই শন্ত দান করবে । এরপর মালাকার বা পুরোহিত মন্ত্র পড়েন। সে শুন্ত্র বলা বাহুল্য অসংস্কৃত । অথচ আমাদের পরিচিত বাংল! নয়। বাংলার উত্তরাঞ্চলের মৌখিক ভাষ। কোচ-রাজবংশী-মৈথিলি প্রভাবজাত। এই ভাষায় এরা সবরকম মনের ভাব প্রকাশ করে গান করেন, স্থুর তোলেন । ( যদিও দেশীরা বলেন তাদের ভাষার সঙ্গে পলি বা অন্য কারে! মিল নেই। তবে এ ভাষা নিঃসন্দেহে বাংলারই উপভাষ1। ) মন্ত্রের বক্তব্য £ ধরমের প্রতি মতি রাখাণ প্রার্থনা, ভাল শন্তের, সুস্থ শরীরের কামনা । ধারা মানত করেন 'ধরমের' নামে, তারা সারাদিন থাকে উপবাসী। ব্রত শেষে সন্ধেঃর পর আতপ চালের ভাত খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করেন । বিভিন্ন গ্রামে এই ব্রতানষ্ঠান আর মুতি দেখে উপস্থিত পুরোহিতকে জিজ্ঞে করেছিলাম, মাঘমাসের মধ্য-রবিবার এই পুজে। করার পেছনে কি কারণ বর্তমান ! এবং কলাগাছ তিনটি কিসের প্রতীক ? বল! বাহুল্য উত্তর শুধু পেয়েছিলাম, এটাই-_ নিয়ম । এই নিয়মই চলে আসছে । জলপাইগুড়ি অঞ্চলে “ব্ণণ উপাধিভুক্ত রাজবংশারা ধর্মের পূজ1 করেন। কিন্তু পুজাপদ্ধতি তাদের এরকম নয়। ন্বর্গত ডঃ চারুচন্দ্র সান্যাল 'রাজবংশস্‌ অব নর্থবেঙ্গল' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে ধর্ম ঠাএর স্থর্ধের এবং শিবের দেবতা | সর্ষের দেবতা বলে ধরম ঠাবুরের পুজো হয় রবিবার । কিন্ত মাঘমাসের মধ্য রবিবার কিনা সেটা তিনি উল্লেখ করেন নি। জলপাইগুড়ি অঞ্চলের রাজবংশীরা শৈব। কিন্তু পশ্চিম দিনাজপুরের রাজবংশী দেশীর প্রধানতঃ বৈষ্ণব । জলপাইগুড়ির ধরম ঠাকুর শিব ও হুর্ষের দেবতা; পশ্চিম দিনাজপুরের দেশীদের ধরমঠাঝুর বিষণ এবং কুর্ষের দেবতা। ছুই তরফেই স্থর্ধের দেবতা মিলটা রয়েছে। পূর্ববঙ্গের মাঁঘমগ্ডলী ব্রত কথায় উষাকালে সুর্য ওঠানোর বন্দনা । জলপাইগুড়ি অঞ্চলে ধরমের পুজা হয় ভোরবেল|। কিন্তু পশ্চিম দিনাজপুরের দেশী সম্প্রদায়ের ধরম ঠাকুরের পূজ] হয়ে থাকে স্থ্ধান্তের পর। মাঘী ব্রতের এখানেই বৈশিষ্টা। গ্রামের লৌকিক দেবতা আসলে কুষি-দেবতা । কৃষি-বিযুক্ত কোন চিন্তা ৩৮ এদের মধ্যে আসন নিতে পারে না। এদের ধর্ম সংস্কৃতি সমস্তই কৃষি কেজ্দিক। কৃষি এদের প্রাণ, এদের জীবন। মাঘমাসে কৃষকের হাতে খুব বেশি কাজ থাকে না। শুধু তখন সে ব্যস্ত ক্ষেত- ভূমির প্রস্ততি রচনায় । নবান্নের পর মাঘ মাসই শ্রেষ্ঠ সময়। মধ্য রবিবার মক্ল সচক। আদি-অস্তের সন্ধি। নাভিমূলে শিরোদেশে তাছাড়া জননাঙ্গে কলা-গাছ এবং গোটা! ব্রতটির সময় ও নানা আচারে লুকিয়ে আছে হিন্দু ও বৌদ্ধতত্ত্রের কোন ব্যাখ্যা । সর্বপ্রথম যে ছুটি গ্রামে আমি এই ব্রতানুষ্ঠান দেখি তা হলো! রুয়ানগর এবং খরচুনা। থানা_কুশমণ্তী। আমার সঙ্গী ছিলেন হরেন দেবশর্ম! (বাঘন, থানা কালিয়াগঞ্জ ) এবং মলিন সরকার ( দিনোর সাপাড়া, থান! কুশমন্তী ) এ'বা উভয়েই “দেশী' সম্প্রদায়ভূক্ত । ৩৪ ব্চায-ল ও ব্রাজা গণেশ ॥ বাংলীব প্রচলিত ব্রতগুলিতে মেয়েদেরই প্রাধান্য । কিন্ত উত্তরবঙ্গে গ্রচলিত এমন একটি ব্রত্র কথা জানি যেখানে মেয়েদের কোন স্থান নেই । সেই ত্রতেব নাম 'কাষ-ব' অথবা 'কাস-ব'। এই ব্রতেব প্রধান ব্রতীরা অধিকাংশই 'তাতি গণেশ? সম্প্রদায়ভুক্ত । অথচ এটি যে গণেশ সম্প্রদায়ের নিজন্ব ব্রত নয় তার প্রমাণ আছে। খবর নিয়ে জেনেছি নেপাল, পৃণিয়া ও পশ্চিম দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমায় বসবাসকারী গণেশ সম্প্রদায় *এই ব্রতের নাম জানেন না । এই ব্রত সারা উত্তরবঙ্গে মাত্র দুটি গ্রামে এখনে৷ গ্রচলিত। একটি গ্রামের নাম-করপ্রী ও অন্যটি__ধাওয়াইল | ১ গ্রাম ছুটি যথাক্রমে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার কুশমত্তী থানা ও মালদহের গাজোল থানার অস্তভুক্তি। তবে জনশ্রুতিতে অন্নুমিত হয় যে, যাত্রাডাঙ্গী ২ নামে আরো একটি গ্রামে এই ব্রত এক সময়ে গ্রচলিত। ছিল। সরেজমিনে ক্ষেত্র অভিজ্ঞতায় জেনেছি যাত্রাডাঙ্ষি বা যাত্রাডাঙ্কা মালদহ জেলার পুরনো মালদহ থানার অস্তর্গত। এখন সে গ্রাম মুসলমান প্রধান। কিন্তু একসময়ে সেখানে “পাল' পদবীধারী কয়েক ঘর মান্থষের বাস ছিল বলে বর্তমান বাসিন্দারা জানান। এরচেয়ে আর বেশী কিছু তথা তারা দিতে পারেননি । স্থৃতরাং এই আলোচনায় যাত্রাডাঙ্ক! গ্রাম- প্রসঙ্গ জনশ্রুতি নির্ভর মাত্র। কিন্তু করী ও ধাওয়াইল গ্রামের অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য আমার জানা । বিশেষতঃ করব্ী ও ধাওয়াইল গ্রামের অনুষ্ঠান আমার নিজের চোখে দেখ] । এই ব্রত অনুষ্ঠানের তিথি প্রতি বৎসর মাঘ মাসে শ্তকলা ত্রয়োদশী থেকে পুণিমা পর্বস্ত। এই ক'দিন গ্রামে আমিষ নিষিদ্ধ। ব্রতীগণ উপবাসী । কবঙ্লী গ্রামে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে ভক্তিয়ার দুজন এই কদিন একবিস্কু জলপানের অধিকারী নন। শুধু তাই নয়, তাদের মলমৃদ্ধ তাগও নিষিদ্ধ । করঞ্রী ও ধাঁওয়াইল- এই দুই গ্রামেই এই ব্রত সম্পর্কে নানা কিংবদস্তী৩ রয়েছে । তদনুসারে গ্রামবাসীদের কাছে এই ব্রতটের নায় কিংসব্রত' বা কংস বধের ব্রত । করঞ্ী গ্রামে লোকমুখে প্রচলিত যে, পুরাকালে শক্তিভক্ত বাজ! কংস এই ব্রত চালু করেন। লোকমুখে আরও প্রচলিত যে, এই স্থানে প্রৃষ্ণের স্দর্শন চক্রের আঘাতে কংসের দেহ ত্রিথত্তিত হয়। এবং এই ত্রিথণ্ডিত দেহ তিনস্থানে গিয়ে পড়ে। অন্তরূপ কথা ধাওয়াইল গ্রামেও শোনা যায়। সেখানে তো এই প্রসঙ্গে একটি ছড়া খুবই চালু-_'মুণ্খান পড়িল্‌ করপ্জী, ধড়খান পড়িল্‌ ধাওযাইল আর পাওখান পড়িল্‌ যাত্রাডাঙ্গি' ।৪ অথচ আমি শুক্লা ভরয়োদণী থেকে মাঘী পৃণিমা পর্যস্ত করপ্তী গ্রামে যে অন্নষ্ঠান দেখেছি ও যে ব্রতগান টেপে ধরে বেখেছি তাতে এই প্রচলিত কিংবদস্তীর কোন স্থধ বা নিদর্শন প্রতক্ষতঃ মেলেনি । বরং আমার ধাবণা এই ব্রত আসলে কর্ধব্রত তথা কৃষি উৎসবেব একটি বিশেষ রূপ মাত্র । সাধারণ গ্রামবাসীর মুখে অন্রান্ত স্বাভাবিকভাবে তাই কাপ-ব রূপে উচ্চারিত ও প্রচলিত ।৫ আচার্য ডঃ স্নীতিকমার চট্টোপাধায় এই প্রসঙ্গে সংগৃহীত তথাঁদি দেখে ও টেপরেকডে গৃহীত ব্রত্গান শুনে আমার ধারণার পক্ষে বায় দিয়েছিলেন ।৬ তথাপি পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বাঘনগ্রাম নিবাশী সর্বোদয়-ব্রতী শ্রীপবিত্র দে এই ব্রতকে বাংলার ইতিহাসের বিশিষ্ট হিম্ু রাজা গণেশের সঙ্গে যুক্ত করাষ আমাকে এই ভ্রতের এতিহাসিক সুরের সন্ধানে তৎপর হতে হয়। বিশেষত: তীঁতি গণেশ, কংস ব্রত, মাত্র তিনটি গ্রামে এই ব্রত উদযাপনের বহস্ত ইত্যাদি বিষয়গুলিও আমার মনে খটকা বাধায় । ব্রত উপলক্ষে করধ্ী গ্রামে গিয়েই বুঝেছি, স্থান হিসাবে এর প্রাচীনতা মন্দেহাতীত। অধাঁপক সরসীকুমার সরন্বতী, এইচ ই স্টেপেলটন-এর ৪১ প্রতিবেদনেও ৭ তা উল্লিখিত। ( অথচ জেলা গেজেটিয়ারে এর উল্লেখ মাত্র নেই )। এই গ্রামের পুব দিকে মাইল দেড়েক দুর দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন নদী এবং উত্তর পশ্চিম দিকে মাইল ছুয়েক দূর দিয়ে ক্ষীণন্মোতা শ্রীমতী নদী ( ছিরামতী ) প্রবাহিত । একদা এখানে যে কোন রাজপ্রাসাদ ছিল তার কিছু নিদর্শন এখনো রয়েছে । এই রাজপ্রাসাদ ঘিরে যে তৈরী হয়েছিল কোন পরিখা, তাও চেষ্টা করলে বোঝা যায় । মুসলমান পাড়া পেরিয়ে একটি নীচু জমিতে নেমে সোজা উত্তরমুখে গেলে একটি উচু টিপি নজরে আসে। এর নাম ভীম-দেউল টিপি। ভীমদেউলের মাথায় এখনও একটি উচু বড় আকারের পাথর প্রোথিত। মনে হয় এটি কোন খিলানের ধ্বংসাবশেষ | এখান থেকেই আরো ছুটি টিপি দেখা যায়। একটির নাম কিচিন অন্যটির নাম রাঁন।৮ ভীমদেউলের নীচেই ব্রতের আহুতি জাগানো স্থান বা যজ্ঞস্থল। তারই কয়েক হাত দুরে একটি স্থুউচ্চ তেঁতুল গাছ। পথপ্রদর্শক গ্রামবাসী জানালেন যে, মাঘী পুণিমার দিন যজ্ঞের আগুনে আহুতি দিলে যে হলকা ওঠে তা যদি তেঁতুল গাছের মাথ! ছাঁড়িয়ে যায়, তবে বুঝতে হবে দেশের সুদিন আসন্ন । টিপিগুলির মাঝে দেখা যায় ছোট ছোট প্রাচীন ইটের তৈয়ারী কৃপ। বস্ততঃ এখন এটি কৃপের টিহ্ন মাত্র। এই কূপের দিকি মাইলের মধ্যে একটি পাড়া দেখা যায়, তার নাম গণেশ পাড়া ।»৯ এই গণেশ পাড়ার পশ্চিমে একটি প্রায় ভগ্নন্্‌পে পরিণত জঙ্গলাকীর্ণ মন্দিরটির নাম ছাচিকা থান । এটি প্রাচীন ইট ও পাথর দিয়ে তৈয়ারী। দৈর্ধঘো ও প্রস্থে প্রায় ১৪ হাত এবং উচ্চতায় প্রায় ১৫ হাত। দেখলেই বোঝা যায় মন্দিরের অনেকখানি, অংশ মাটিতে বসে গেছে। দক্ষিণমুখী মন্দিরটির একটি মাত্র দরজা । শোন যায়, এই মন্দিরের সামনের বারান্দায় অনেকগুলো! দেবদেবীর মৃতি ছিলো! ৷ ছুটি বিষুঃ স্মৃতি ( একটি চতুভূজ, অন্টি ছিভূজ যার ভানদিকে লক্ষ্মী ও বা দিকে সরস্বতী শোভা পেত )। পাশে ছিল পাথরের গোৌরী-পষ্টহীন শিবলিঙ্গ । মন্দিরের মধ্যে ছিল ছাচিকা মাতার মূততি ও তার পাশে বিষুমৃতি। তাছাড়া চতুত্জ শিবরুত্তি এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরো! কিছু মৃততি।১০ সাব! বছর প্রতি মঙ্গলবার ছাঁচিকা। দেবীর পৃজে হয় আর মাথী পৃরণিমার দিন তার পুজে! হয় বিশেষভাবে । এখন মন্দিরে দেবীমূত্তি নেই, আছে এক ৪২ ভাঙ্গা বিষু মৃতি। ছাঁচিকা দেবী সন্ধে হনির্দি কিছু জান! যায় না। শুধু পাওয়া! যায় ছুটি মন্ত্। ১১ গ্রামবাসীরা তাকে “ঘরপুড়ী দেবী” বলে মানেন । তাদের বিশ্বাস এই দেবী কষ্ট হলে গ্রাম আগুনে পুড়ে যায়। প্রতি মঙ্গলবার বারেক-অভিহিত একজন তাতি গণেশ এই দেবী মন্দিরের মৃতি স্নান ও মন্দির মার্জনায় নিয়োজিত থাকেন । এই কাজের জন্য বর্তমান বারেক পুরুবানুক্রমে প্রাঞ্চ সাড়ে চারবিঘা জমি ভোগ করেন। একদা এই ভোগ দখল ছিল নিষফকর। কিন্ত এখন সে জমি নিজ নামে রেকভ্ হয়ে যাওয়ায় “বারেক খাজন। দিয়েই ভোগ করেন। ছাচিক1 দেবীর পুজো! করেন মুগঞ্ষি গোত্রের 'দাস' পদবীধারী একজন ব্যক্তি । ১২ তাঁকে বল! হয় মালাকার। তিনি এজন্যে পুরুষান্ুক্রমে প্রাপ্ত সাড়ে চার বিঘা জমি ভোগ করেন । এই মালাকারের বাস গণেশ পাড়ার বাইরে। এই গ্রামে সমগ্র ব্রত অনুষ্ঠানটিতে সরাসরিভাবে নয় ব্যক্তি যুক্ত। দুজন ভক্তিয়ার ( তাতি গণেশ- বর্তমান পদবী বসাক" ), একজন নিশানিয়া ( তাতি গণেশ- বর্তমান পদবী “বসাক? ), একজন বারেক ( তাঁতি গণেশ- বর্তমান পদবী “বসাক? ) দুইজন প্রসাদিয়া ( ব্ৎসরাস্তর একজনের দায়িত্-_এরাঁও তাঁতি গণেশ- বর্তমান পর্দবী “বসাক” ), একজন মণ্ডল ( তাঁতি গণেশ বর্তমান পদবী বসাক? )ও একজন সর্ষেতেলের সরবরাহুক ( মুসলমান )। এছাঁড়া আছেন একজন মালাকার (ইনি তাতি গণেশ নন__ পদবী “দাস? )। ভক্তিয়ারের কাজ ব্রতগান ও নাঁচ। নিশানিয়া ব্রতোপলক্ষে একটি পাঁচ হাতি কাচা বাশ লাল ও সাদা কাপড় মুড়িয়ে তার মাথায় মম্বুরের পাখা বেঁধে শোভাযাত্রার পুরোভাগে অংশ গ্রহণ করেন। প্রসাদিয়ার দায়িত্ব আতপ চাল, কলা, ছুধ, চিনি, বাতাস দিয়ে নৈবেছ্চ সাজিয়ে বারেকের মাধ্যমে পুজো মণ্ডপে পৌছে দেওয়া । মালাকার সারা বছর প্রতি মঙ্গলবারের পুজো ছাড়াও এই ব্রতে প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করেন। তেল সরবরাঁহক ৫ সের সরষের তেল আহ্বৃতির উদ্দেশ্টে দেন। আর 'মগ্ডল” এই ব্রতে প্রয়োজনীয় জালানী (বাঁশ, কাঠি ইত্যাদি ) ৩ জোড়া কধুতরের বাচ্চা, ৫ ঝুঁকি কলা, ঢাকুন, ধুপধুছচি, প্রদীপ, হাড়ি, পাতিল প্রতৃতি দিয়ে থাকেন। বাগ্যকরের মন্ভুরী তাকেই দিতে হয়। বন্ততঃ এই পূজে| ও ব্রতের মূল দায়িত্ব এখন মণ্ডলের । ৪৩ এসব কাজের জন্য সকলেই কিছু কিছু নিফর জমি পুকুষান্গক্রমে ভোগ করে আসছিলেন। দুজনের কথা পূর্বেই উল্লিখিত। আমি এদের দলিল দেখে জেনেছি যে এদের অব্যবহিত পূর্বপুরুষের! ছিলেন চুড়ামন এস্টেটের রায়- চৌধুরীদের প্রজা । এবং এই করঞ্ী ও তার ব্রতাহুষ্ঠান এই জমিদারীর অস্তভুক্ত ছিল। এখানে ব্রতগান ও পুজা তিনভাগে বিভক্ত । একভাগ শুক ত্রয়োদশী রাতে ভীম-দেউলের পাদদেশে আহৃতি জাগানো! থান বা যজ্ঞস্থলে অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ভাগ শ্তক্লা-চতুর্শশীর রাতে সা-পুক্ুরের পাড়ে বর্ম বা ব্রহ্মাপূজোর স্থানে । তৃতীয় ভাগের আবার দুটি অংশ। প্রথম অংশ মাধী পূর্ণিমার দিনে দুপুরে ছাচিক1 দেবীর থানে ও অপর অংশ এদিন সন্ধার পূর্বে আহুতি জাগানো স্থলে পালিত হয়। ব্রতগাঁনের অবশ্য ছাচিঞ। দেবীর স্থ।নেই সমাপ্তি ঘটে । ভক্তিগ্নাররা তারপর সা-পুণবে গিয়ে স্নানাদির পর ব্রত সাঙ্গ বরেন। শুরু ত্রয়োদশীর রাতে ভামদেউলের পাদদেশে আহৃতি জাগানো পদ্ধতিটি এই রকম £ এদিন ছুপুরে যক্স্থলে মাটি খুড়ে মাঠ থেকে শুকনো গোবর এবং খড়ি কুড়িয়ে এনে জড়ে! করা হয়। বাতে সেখানে ব্রতগান ও নাচ করার পর ভক্তিয়ার গর্তের মধো রক্ষিত শুকনো গোবর ও খড়িতে আগুন জালান । সে আগুন একটি খছের আটিতে দেওয়া হয়! সমস্ত আগুনই পরে তুষ ও মাটি চাপা দিয়ে দুদিন রাখা! থাকে । গ্রামবাসীদের বিশ্বাস শত ঝড়-জলেও এ আগুন নিভে যায় না। অন্ত ছুই স্থানে ব্রতের আগুন ঝড়জলে নিভে গেলেও করঞ্ী'র আগুন নেভে না। কেন না, তাদের মতে করঞ্ীই হলো! “কাষ-ব'র মূল ও আদি স্থান। আহন্ৃতি জাগানো স্থানের ব্রতগান ও নাচের সঙ্গে ঢাক ও মেহনা! (এক ধরনের মানাই ) বাজে । গানটির আরম্ভ হলে। এই রকম £ সর ভায়া হে বাম রাম হে ছিরি বাস্থদেবে স্বর্গে জানে ছিরি বাস্থদেবে পাতালে জানে বাস্থকখ নাগে ইথলে হামরা করিম শুদ্ধ ইথলে আছে গহকংকলে 9৪8 পালা পাল! তুই গহকংকলে নাহি পালা তোমারি বলে। হামরা যাঁম গোসাঞ্চি পুরী গোসাঞ্জি পুরীতে আনব এক কোদাই বাণে এহ বাণে শোক সিড়াই দিম ছয় ভাঁনিয়ে ভন্ম করিম জেনে শুনিলে বানি নামে দুর পালাইল গহকংকলে ॥ শ্রীরাম বাস্থদেবের নাম স্মরণ করে থান শুদ্ধব কাঁজ শুরু হয়। থান শুদ্ধ: কথা স্বর্গে বাসুদেব এবং পাতালে বাস্তকি নাগ জানেন। থানে আছে মলঃ (গহকংকলে ) ঝিকট খাতরে ( ভাঙ্গা হাডিব টুকরো ) এবং ছূর্বাঘাস। এগুলি যথাক্রমে কোদাল ( কোদাই ) ঝাঁটা ও খুডপি ( কোলাই ) দিয়ে পরিষার করার কথা ব্রতগানে প্রথমে বাক্ত | থান শুদ্ধির পর ওখানেই ভক্তিয়ার স্তর পাল্টে গায়__ ওতে ভে ধব ধর ভইঞাদেব ভাতের ভামুক খাও। ওহে তাহ] চৈতে চাতি ভামরা ওমতাল ধান । ওতে একথা শুনিয়! ভূই ঞাদেব না থাঁকিল রৈয়| | ওহে মেলাঁতৈর ফালায় ষাট বাঁষেট কোশে ॥ ওহে কতেকদূর যাইতে কতেক দূর যায়। ওহে কতক দূর যাইতে কতেক পন্থ পায় ॥ ওহে কতেক দূর যাইতে কস্তীমার নাগা পাঁয়। ওহে কুস্তীমাক দেখিয়া দিল দণ্ড পরণাম ॥ ওতে বসিবাঁক দ্িিলরে উত্তম সিংহাসন ওতে কুস্তীমায়ের সিংহাসন এশিরে বন্দিয়া | ওহে বসিল ভূইঞ্াঁদেব 'নেপেটি পাঁড়িয়া। ওহে কৌঁথা হইতে আইলেন বাছা কোথা তোরা যাও | ওভে তাহা! হইতে চাহি হামরা ওসতাল ধান । ওহে একঝাড় ওসতাল ধান্য দেবের বরে। ৪৫ ওহে তাহা দিতে না পারোছে আমার পরাণে। ওহে তগ্ধ পৈলাতে যেমন দড়শালের তেল ওহে সেই মতন ভূইঞাঁদেবের কর্দ জলি গেল । ওহে ওসতাল ধানের তোল ভূইঞ্াদেব করিল গমন । ওতে একঝাঁড ওসতাঁল ধামরি মাঁরিল টাঁন ওহে একটানে ওথাঁঙিল ঝাড় ছয় সাত ওহে ইলুয়া কোলাইয়া তখন ভুইঞা ভাভ বাদ্ধে ওহে ভাঁড নোঞ্চিয়া তখন ভূইঞা ভা-ল যায় ওহে কতেক দূর যাইতে কতেক দূর যায় ওহে কতেক দূব যাইতে থলির নাগ্য পায়। ওহে এতগুলা ওসতাঁল ধান কিবা করিস কাজ । ওহে আরগোঁলা ওসতাল ধান ঠাইয়ে ঠাইয়ে থো। ওহে আরগোঁলা ওসতাল ধান বাহুরাইয়! দিল। ওহে সেইগোলা ওসতাল ধান পিরথিমি ঢাঁকিল। [টীক। £ ওসতাল__একরকমের ধান, যা আজ সম্ভবত অপ্রচলিত। মেলাভৈর-_দীর্ঘ-পদক্ষেপ। পৈলা _কভাই। কর্দ _ক্রোধ। তোঁল__ তবে। ওথাঙিল-_উঠাইল। ইলুয়া কোলাইয়া-_ইলুয়া ঘাস পাকিয়ে । থলি _স্থলি। বাহুরাইয়া_ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। পিরথিমি-_পৃথিবী ] এইভাবে তক্তিয়ার তার দোহার সহযোগে গান গেয়ে চলেন । ওসতাল ধানের পর আমে চামপার মকচ ( চাঁপা কলার মোচা )-এর কামনা । তাও অবশেষে পাওয়া যায় এবং ওহে সেগোল! চামপার মকচ পিরথিমি ছাইল বলেও জাননো হয়। তারপর গামার কাঠ, কুশকাটা বাঁশ, কোঁপিলা গাঁইয়ের গোময় ( গোবর )-এর কথ! আছে । তারপর উত্তুরমাঁর কাছে চাওয়া হয় লোনার শিকিয়া (দড়ি) গড়াইং (ভাঁড়) কোদাই ও পিডই | এ সবই উত্তুরমা গ্রাম কামারের কাছে থেকে তৈয়ারী করিয়ে নিয়ে আঁসেন । এরপর ভূইঞ্গদের কুস্তকারের কাছ থেকে তৈয়ারী করিয়ে আনেন মাটির ঢাকুন। ওহে কেহ মাটি কাটে কেহ মাটি বাছে কেহ মাটি নান্দিয়া পাঁকায় ৪৬ ওহে কেহ মাটি চাকে] চড়ায় | ওহে একোচাকে গড়াইল একচাড় ঢাকুন | ওহে ধর্মের দোহাই দিয়। পৌনিতে চড়াইল ॥ ওহে গড়িয়া পড়িয়! কুমার করলে নিশিপন ওহে তাহা নৈয়া ভুইঞ্দেব সত্বরে গমন ॥ কলা চতুর্দশীর রাতে ভক্তিয়ারের কাধে গাহুল বীধা হয়। 'গাহুল' হল পাঁচটি ধানের থোপ। গাহুল বেঁধে ভক্তিয়ারদ্বয় দাড়ান নিশানধারী ( নিশানিয় )-র পেছনে । তারপর, মালাকাঁর, বারেক, মগ্ডল প্রভৃতি ব্রতীগণ। সকলে মিলে. শোভাযাত্রা করে বাজনার তালে তালে নৃত্য করতে করতে সা-পুকুরে এসে উপস্থিত হন । সা-পুকুরে ভক্তিয়ার ঘাট শুদ্ধর গান করেন-__ বলকোটদানি ঘাটৎ ছাঁনি ই ঘাটে হামরা করিম শ্রদ্ধ ই ঘাটে আছে ধাইধামনকাটি পাল! পাল! তুই ধাই-ধামনকাটি নাহি পালাব তোমারি বলে হামরা যাম গোসাঞ্রি-পুরী গোসাঞ্জি পুরীতে আনব এক কোদাই বাণে। ইতাদি। [টীকা ঃ দিঘি বা! পু্করিণী কাটানো বা পরিষ্কার করার দরকার পড়লে যাদের ডাকা হয়, তারাই এই অঞ্চলের ভাষায় বলকোটদানি'। ধাইধামন-_ কচুরীপানা। কোদাই--কোদাল। ] কচুরীপানা, মত্ম্তমকর, ঝিম্ুক, শামুক, কুমীর ও নান জলজ উত্তিদে ঘাট অশ্তুদ্ধ তথ! বিপজ্জনক | এসব পরিষ্কার করে ব্রন্ষপুত্র, গঙ্গা, পুনর্ভবা, তুলাই, টাঙ্গন, শ্রীমতী, বালিয়া প্রভৃতি নদীর জল এনে ঘাট ধুয়ে পবিত্র করে তোলার কথা গানে প্রকাশিত | ঘাট-স্ত্ধ গানের পর মালাকার ত্রহ্মপূজো করেন। ঘাটের কাদামাটি দিয়ে বর্ষের একটি ছোট বেদী তৈয়ারী করা হয়। তার ছু'পাঁশে ছুটি ছোট কাঠি (কঞ্চি) পুঁতে তাঁর উপর দুটি শোলার কদমফুল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দুটি হীসের ডিম এ কঞ্চির কাঠির উপর ভেঙ্গে আটকে দেওয়াই রীতি। ছুটি ছোট ছোট শব্ধের উপর কল! ও আতপ চাল রেখে পুজো করা এই থানের ৪৭ বৈশিষ্ট্য । সেখানকার পুজে৷ সেরে হাটখোল। থানে দেউলানী কালীর পুজো দিতে যাওয়া হয়। এরপর সকলে ফিরে যায় যে যার বাড়ীতে । সু ভক্ভিয়ার দুজন সে-রাত কাটান ছাচিক1 দেবী থানে । পরের দিন মাধী পুণিমা । হাটখোলা থানে বসে মেলা । সকাল থেকে আশপাশের গায়ের থেকে লোকজন ছুটে আসেন ব্রত আর মেল! দেখতে । সেদিন কবঞ্তীর গণেশ পাড়া লোকারণ্য। ছুপুরেই ছাচিক1 দেবীর থানে পূজোর বাজনা আর মেহনা বেজে ওঠে । ভক্তিয়ারদ্বয়ের অবশিষ্ট ব্রতগান ও নাচের পালা হয় শুরু। এই তিনদিনের কঠিন ব্রত পালনের ছাপ তখন তাদের চোখে মুখে স্পষ্ট। গানের কণ্ঠ ক্ষীণ, উচ্চারণ অস্পষ্ট । এখানকার গানে আছে শণের চাষ করার আকাজ্জা (ওহে তাহা হৈতে চাহি আমরা শণের ক্ষেতি)। ব্রত-কথায় আছে ভাই ভাতিজা গোসাইপুরীতে শণের ক্ষেতি করার কথা জানালে গৌসাই শণের গুরুত্ব তাদের বোঝান । শণের বীজের সন্ধানে ভাই-ভাতিজা বর্মপুরী (ব্রহ্ষাপুরী ) হয়ে শিবের পুরীতে এসে উপস্থিত হন। ভাই-ভাতিজার প্রার্থনায় শিব বীজের ধাম! এনে গোটা কয়েক উদুটিয়া বীজ দেন। তারপর ভাই-ভাতিজা শিবের কাছে শণ চাষের রীতি পদ্ধতি জেনে নিতে চান। শিব তখন বলেন, সোনার লাঙ্গল সোনার জুঙ্গাণ জুডাবেন রূপার ফাল। মামা ভাগিনা গোরু জুডিবেন হাল ॥ বারে! পাট চাষ দিবেন, তেরো পাট মই। তবু তো না মরে কেন্না ছুববা নই | অতএব, কেন্না ছুব্বা বাছিয়াক ফেলাবেন অনেক দুর । এই শণের বীজ- বোনার আগে, আতপ চাইলে ব1ইঞ্চ। দুধে সংযম খাবেন । তাহাক পোহালেক শণ বুনিবারে যাবেন। যখন বাঁডিবেক শণ একেক পাতেসে। তখন আঘুরিবে শণ একে! আদেশে ॥ যখন বাঁড়িবেক শণ ছুই ছুই পাত। ৪৮ তখন আঘুত্িবে শণ দুই আদেশে | যখন বাড়িবে শণ তিন তিন পাতে। তিরশাল কুড়িবর পাইয়া শণ হলফল বাড়ে ॥ ব্রতগান শেষ হলে মালাকারের ছাচিক। দেবীর পুজো আরম্ভ হয় । পূজোর মন্থের একাংশ এইরকম আঙ্গটি মাঙ্গটি শিবের ঘরণী বাদে যাও বাদে আইস বাদে ঠাকুরানী আমার হাতে লয় ফুলপানি । [টীকা ঃ পুজোর মন্ত্র থেকে স্পষ্ট ছাচিকা-__সতীকা ৷ ইনি সম্ভবত মঙ্গলচণ্ডী। মতি পরিচয় অজ্ঞাত। বাদে যাও বাদে আইস-_কখনে। যাও কখনো আস । ] পুজোর পর বাজন| ও মেহন। বাঞ্জানো। হয় খুব ভ্রুত লয়ে। যালাকার একটি হাঁড়িতে জলস্তভ পাটকাঠির গোছা নিয়ে কোমরে একটি লাল কাপড় জড়িয়ে জ্তপায়ে পাঁচবার মন্দির প্রদক্ষিণ করেন । তারপর তার মধ্যে দেবীর ভর হয় । স্থানীয় ভাষায় এই হাড়িকে বল হয় পাগলের হাণ্ডি। ভর-পডার নাম-_ পাতাপড়া ব “ঘাড়! নাম] । ভর মুক্ত হলে মালাকার-সহ সকলে যান ব্রতের শেষ কাজ ধর্মের আগুন জালাতে আহৃতি জাগানে। থানে। ভক্তিয়ারদ্বয় তখন দেবীথান থেকে সোজা চলে যান সা-পুঝুরে ব্রত সমীপন স্থানে । আহৃতি জাগানো থান তখন ভীড়ে ভীড় । ছপুরের মধ্যেই সেখানে একটি বড় গর্ত খোঁড়া হয়ে আছে। ১৩ সেই গর্তের ঠিক মাঝখানে ঠিক চিতার মত করে তেঁতুল কাঠ ও বাশ সাজানো । এরই ফাঁকে মাঝখানে বালি ভন্তি একটি মাটির সরা এবং তার উপর একটি মাটির বড় হাড়ি বসানো । সে হাঁড়িতে তেল সরবরাহকের দেওয়া ৫ সের তেল চালে গ্রামেরই একজন নাউ (নাপিত )। আর সেই সঙ্গে হাঁড়িতে দেওয়া হয় পাঁশোমি বা পাঁচ শস্ত (যেমন £ পাট, ধান, সধে, কলাই ও ছুর্বা ) সম্ভবত এই ৫ শম্ গ্রামীণ মান্গুষের কাছে গুরুতপূর্ণ । এবার পাশের গর্ত থেকে ত্রয়োদশীর রাত্রে আগুন জালানো খড়ের আি' শুকনো! গোবর ও খড়ি তুলে নিয়ে এলে যক্পস্থানে ধর্মের আগুন দেওয়া হয়| ধীরে ' ধীরে জলে ওঠে আগুনের লেলিহাম শিখা । তখন মালাকার তিন জোড়া! ৪৯. উঃ গ্রাঃ চঃ--৪ কবুতর বাচ্চার ঘাড় ছিঁড়ে রক্ত ছিটিয়ে দেয় আগুনের কুণ্ডে। ভ্রমশ আগুনের তেজে হাড়ির সব তেল যায় পুড়ে। তারপর একটি লম্বা বাঁশের মাথায় বাঁধা ছোট ঘটি থেকে ছধ মধু মেশানো! পবিত্র জল পাঁচবার পাঁচটি প্রশ্ন স হাড়িতে দেওয়া হয়। আর সঙ্গে সঙ্গে হাঁড়ি থেকে লাফ দিয়ে ওঠে একটি আগুনের হলকা। তখন উপস্থিত সকলে কাস-ব কাস-ব বলে সহর্ষে চেচিয়ে ওঠেন। এই আগুনের হলক1 যত উঁচুতে ওঠে তদনযায়ী মেলে প্রশ্নের জবাব । প্রশ্নগুলো এই রকম £ ১। আগামী সনে পাটের ফলন কি রকম ?২। আগামী সনে ধানের ফলন কি রকম? ৩। আগামী সনে সর্ষের ফলন কি রকম? ইত্যাদি | ১৪ যদি এই স্ব প্রশ্নের সঙ্গে আগুনের হলকা! খুব উঁচুতে ওঠে তবে তাঁব উত্তর হল আগামী সনের ফলন ভালো । বিপরীত হলে খারাপ । যজ্জের আগুন নিভে গেলে হাঁড়ি ও বালি ভন্তি মাটির সরা এঁ কুণ্ড থেকে তুলে আনা হয়। উত্তপ্ত মাটির সরাব গনগনে বালির উপর ছড়িত্বে দেওয়া হয় নানা শশ্ত । দেখা যায় এতে কোন শশ্ত যায় পুডে, কোন "শঙ্কু থাকে অক্ষত। যে শশ্ত পুড়ে যায় আগামী সনে তাঁর অভাব হবে বলে গ্রামবাসীদের বিশ্বাস। হাঁড়ির নীচে সামান্য যে পোঁড়া তেল থাকে তা সংগ্রহ করার জন্য উপস্থিত সকলের মধো কাডাকাড়ি পড়ে যায় । এই তেল নাক্ষি ঘা সাবাঁবার মহৌষধ । করঞ্জী গ্রামে তিনদিন ধরে যেভাবে ব্রত পালন করা হয় ধাওয়াইল-এর অনুষ্ঠান তাঁর তুলনায় অনেক সংক্ষিপ্ত । সেখানে ছাচিকাদেবীর থান নে, নেই কোন টিপি বাস্তুপ। ব্রতগানও সেখানে অপ্রচলিত। সেখ্খনে যাবা এই ব্রত পালন করেন তাদের পদবী পাল। ধাওয়াইল গ্রামে আহুল মারা অনুষ্ঠনিই প্রধান । করঝ্ী গ্রামের আহতি জাগান বা ধর্মের আগুনের সঙ্গে এই অস্থ্ষ্ঠানের বিশেষ কোন পাঁর্থকা নেই । এই গ্রামে একটি কংসের . বেদী আছে। ১৫ কিন্তু তার সঙ্গে কাষ-ৰ অস্ানের কোন যোগ পাওয়া কঠিন। একটি প্রতিবেদন ১৬ থেকে জান! যায় যে এই গ্রামে অয়োদশীর দিন সন্ধ্যায় ঢাকছচোল বাজিয়ে নিকটস্থ পুকুরের জলে ডুব দিয়ে একটি কাষ্ঠখণ্ড তুলে আনা হয়। তারপর সেটিকে প্রচুর পরিমাণে তেল সিদু মাখিয়ে ভক্তরা মাথায় নিযে দমন্ত গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন। (এও শোন! যায় যে, অঙ্গুরূপ অনুষ্ঠান করঞ্ীতে এক সময় প্র -” ছিল। বস্তুতঃ আমি নিজে ওই গ্রামে গিয়ে এই তথোর কোন স্থৃত্র পাইনি । অধ্যাপক মিহিরবঞ্ীন লাহিড়ি যে অভিজ্ঞতা ১৭ বর্ণনা করেছেন তাতেও এই তথখাটি অন্ুপস্থিত। তার বিবরণীতে আছে মাঘী পূর্ণিমার সন্ধায় প্রায় তিন ফুট লম্বা একখণ্ড চৌকো মস্থণ তেল-সি ছুরচর্ঠিত খোঁদিত শালকাঠ ১৮ যার উপর গোটা তিনেক ত্রিশূল লাগানো তা পাটকাঁলীর মৃন্তিরূপে গ্রামবাসীদের কাছে পূজিত হয়। আহুল মারা হল চারপাশের কর্ষিত জমির মাঝখানে অকর্ধিত একখণ্ড জমি। ( এই জমি কখনোই কর্থিত হয়নি বলে গ্রামবাসীদের দাবী ) সেই জমিতে এই পাঁটকালীর পূজো হয়। পৃজান্তে পাটকালী তার থানে ফিরে যান। তার থান হল একজন গৃহস্তবের বাড়ীর বারান্দার উচৃতে ঝোলান একটি তাক । স্বতরাং এ থেকে বোঝা যায়, যে পুফবিণী থেকে কাষ্ঠথণ্ড তোলার পুরানো নিয়ম এখন উঠে গেছে। তাছাড়া ধাওয়াইলের অনুষ্ঠানে ইদানিং বহু শিক্ষিত ব্যক্তি অংশগ্রহণ করায় প্রাচীন প্রথার অনেকটাই ক্রমশঃ বিনষ্ট হয়ে পড়েছে। করঞ্ীতেও এই অনুষ্ঠানের অনেক অংশ ক্রমশঃ লোপ পেতে স্তর করেছে । সম্ভবত এখন সেখানে আর ব্রতগাঁন চালু নেই। এপর্যস্ত এ ব্রতের যে পরিচয় পাওয়! গেল, বোধকরি তা থেকে স্পষ্ট যে এটি কর্ষব্রত। ফলতঃ কাষ-ব কর্ষব্রত-এর অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত প্রারৃতরূপ | গ্রামগুলিতে প্রচলিত যে ব্রত প্রায় চার-পাঁচশ, বছরের পুরানো । ব্রতের পদ্ধতি ও ব্রতগানের ভাষায় একে অর্বাচীন বলা চলে না কোন মতেই! এর মধ্যস্থিত বহুশব্দের সঙ্গে আদি-মধ্য বাংলার স্বারূপ্ায মেলে । এমন বহু শব আছে যার অর্থ উদ্ধার করা এখনে সম্ভব হয়নি । যে বুদ্ধ ভক্তিয়ারের কাছ থেকে এই গান আমি শুনেছি, তিনি নিজেও বলতে পারেন না এর অনেক শব্দের অর্থ বা পরিচয় । পুরুতান্গুক্রমে প্রাপ্ত এই গান তার স্থ্বতিতে বক্ষিত। তীর জ্োঠামশাই মীরা যাবার পর এ গান সেই করে থাকে । তবে তীর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্থতিভ্রংশ ঘটেছে । ফলে ব্রতগানের কিছু অংশ লুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে হয়। এই তক্তিয়ারই হচ্ছে সম্ভবত এর শেষ গীয়ক। কেনন!, এই ব্রতগান করা৷ ও শেখার জন্য যে নিষ্ঠা, সংযম ও আগ্রহ আবস্টক তত! একালের গণেশপাড়ায় কারো মধ্যে নেই বলেই বৃদ্ধ তক্তিয়ারের ধারণ] । £১ এ ব্রত যাত্রাভাঙ্ষিতে যেভাবে লুপ্ত হয়ে গেছে ধাওয়াইলে যেভাবে একটি সংক্ষিপ্ত ও প্রক্ষিগুরূপে এসে দাড়িয়েছে ঠিক সেভাবেই এই ব্রত ক্রমশঃ অবলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে করঞ্রীতেও । ব্রতকথা বা৷ ব্রতগানের পরিবেশন ভঙ্ষিটও বৈশিষ্টাগ্ভোতক । সংগৃহীত সমস্ত ব্রতগানটি দিতে পারলে পাঠক হয়ত ভালোভাবে ধারণা করতে পারতেন। তবে উল্লিখিত অংশগুলি থেকেও পাঠকের মোটামুটি একটা ধারণা বোধকরি হতে পারে। ভক্তিয়ার প্রথমে ব্রতবথার এপটি পদ সুরসহযোগে বলেন। পরে দুজন দৌহাঁর ওই পদটি ভক্তিয়ারের স্থরে গেয়ে ওঠেন। পদগুলি প্রায়শই পুনরুক্ত। অতি সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ। করলে দেখা যায় ব্রতগানে ক্রমশই একটি করে নতুন শব ও পদ যুক্ত হচ্ছে । এই ব্রতের অদি গায়েন কী আশ্র্য কৌশলে উপস্থিত শ্রোতাদের মধো যোগ্য শি্কের স্থৃতিতে এই ব্রত ধরে রাখার শিক্ষ। দিয়েছিলেন । বেদ-বঞ্চিত এইসব এ ?লব।রা পুরুতাঙ্গুক্রমে এইভাবে বন্ধ বছর ধরে এই ব্রতকথা স্থতিতে রক্ষা! করায় সচেষ্ট । পশ্চিম দিনাজপুর ও মালদহ জেলার যুক্ত মানচিত্রে লক্ষা করা যায়, এই ব্রত পালনের জন্য নির্দিষ্ট তিনটি গ্রাম উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমমুখী টানা একটি সরলরেখার উপর অবস্থিত। এবং এই তিনটি গ্রামই একটি অপরটির থেকে সম পরিমাণ দূরে চিহ্কিত। শুধু তাই নয় ইতিহাস বিখ্যাত বৈরহাট্া করঞ্জী ও ধাওয়াইল গ্রামের ঠিক মধ্যবর্তী একডালা অংশ অবস্থিত। ইলিয়াসশাহী রাজবংশের রাজধানী পাগুয়া থেকে যাত্রাডাঙ্গা গ্রামও দূরে নয় । প্রসঙ্গত ম্বরণীয় যে, করঞ্ীর নিকটবর্তী টাঙ্গন নদী দক্ষিণে যাত্রাভাঙ্গার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। তছুপরি একটি প্রশ্ন প্রায়শ মনের মধো উবিঝুকি দেয়। কাঁষ-ব যদি নিতান্তই একটি কষি-উৎসব ক লৌবি ক-ব্রত হয়ে থাকে তবে তা কেন মাত্র নির্দিষ্ট তিনটি গ্রামেই সীমাবদ্ধ । এবং এই ব্রত করঞ্জী গ্রামে তাতি গণেশ, ধাওয়াইলে ও যাত্রাডাঙ্গায় পাল ব' কুন্তকার ছার পালিত। এবং এই নির্দিষ্ট তিনটি গ্রামের বাইরে বসবাসকারী গণেশ ও কুম্তকারগণ বলাই বাহুল্য এই ব্রত পালনের অধিকারী নন। তাদের অধিকাংশই এ ব্রতের কথা জানেন না। তখনই কিছু সঙ্গত কারণে রাজা গণেশ প্রসঙ্গ এসে পড়ে। ফেনন৷ এই করঞ্জী একদ। ছিল তাঁর বাসস্থান ১৯। এবং সম্ভবত এই ব্রতের প্রবর্তক" ছিলেন তিনি । প্রচলিত কিংবদন্তী ও এতিহাঁসিক স্থত্রগুলি মেলালে দেখা ৫২ যায় এই ব্রত প্রবর্তনের পশ্চাতে তার একটি গুরুতর রাজনৈতিক উদ্দেগ্ত সম্ভবত কাজ করে থাকবে। বিভিন্ন এতিহাসিক নিদর্শনস্থত্রে জানা যায়, যে বাংল! ত্রয়োদশ শতাৰী থেকে অষ্টাদশ শতাবী পর্যন্ত প্রায় একটান। মুদলমান শাসনের অধীন, তাঁর মধ্যে আকম্মিকভাবে একজন হিম্কুর পক্ষে কয়েক বছরের জন্য হলেও সমগ্র বাংলায় সিংহাসন অধিকার করাটা যথার্থই বিষয়ের বিষয় । ইতিহাসে কোন ঘটনাই আকন্মিক ঘটে না। বরাজশক্তি অর্জন কোন দৈব ঘটন। দ্বাবা চালিত হয় না। রাজা গণেশ দীর্ঘদিন ধরে ইলিয়াসশাহী বাজবংশের একজন প্রভাবশালী হিম্বু মাতা যে ছিলেন তা ইতিহাস-বিদ্িত। তীর বংশ এবং তিনিই স্বয়ং বাজশাহীর ভাতুরিয়া পরগণার জমিদার হলেও পববর্তীকালে পাতুয়ায় ইলিয়াসশাহী রাজবংশের অমাত্য থাকাকালীন কবগ্্রীতে তাব পক্ষে একটি জমিদারী নির্মাণ করা অস্বাভাবিক নয়। তিনি যে অত্যন্ত বাক্তিঃশালী প্রখর বুদ্ধিমান, কুটনীতিজ্ঞ ও দূরদর্শী মানুষ ছিলেন তাব উল্লেখ ইতিহাসে বয়েছে |২* ফলে অমাত্য থাকাঁকাপীনই সামরিক শক্তির উপব তার প্রভাব ছিল অপরিসীম | শুধু তাই নয়। ইতিহাস বলে, সলতানী আমলেই তিনি নিজেই সামবিকবাহিনী সংগঠিত করেন। এঁতিহা সি সুত্র থেকে এ-কথাঁও জানা যায় যে, স্থলতানের দরবারে তার প্রভাব ক্রমশ বুদ্ধি হওয়াধ দকুন তিনি ধীরে ধীরে তার জমিদারী দক্ষিণাঁভিমুখী একভাল। বৈরহাট্টা পর্যস্ত বাডিয়েছিলেন এবং সেখানে তাঁর ছেলে মহেন্দ্রকে ২১ অধিপতি হিসাবে নিযুক্ত করেন । ২২ ইলিয়াশাহী বংশের এই ক্ষমতাবান অমাত্য ও “একাস্ত মিত্র সেবককে” স্থলতান গিয়ান্থদ্দিন আজমশাহ ধর্মান্ধতার বশবর্তী হয়ে পদচাুত করেন। ফলে এই মিত্র সেবকই ইলিয়াসশাহী বংশের উচ্ছেদকল্পে নানা গোপন পন্থা গ্রহণ করতে বাধা হয়েছিলেন । বোধকরি, এই ব্রত তারই একটি ছদ্ম অঙ্গ । করধ্ী ও তৎপার্খ্বর্তা অঞ্চল যে দশম থেকে ত্রয়োদশ শতাবীর শেষভাগ পর্ধস্ত হিন্কু রাজবংশ ও হিন্দু ধর্মের অধীনস্থ ছিল তা এই অঞ্চলে প্রাপ্ত মৃন্তিগুলি থেকে প্রতীয়মান হয়। পশ্চিম দিনাজপুর জেলার ভাষা ও সংস্কৃতিতে এখনো যাদের প্রাধান্ত রয়েছে তারা দেশী ও পলি ( দেশীয়! বা পলিয়1) বলে পরিচিত। করঝ্ী গ্রাম থেকে ত্রিবিক্রম বিষ্ণুর যে মৃত্তি পাওয়া যাঁয় তার শিলালিপিতে ৪৩ ২৩ উল্লেখিত পলেরয়ং ঠন্কুরঃ বা! পলিদের ঠাকুর ২৪ এ থেকে বোঝা! যায়, সেই প্রাচীনকাল থেকেই-এ অঞ্চলে পলিয়াদের বেশ প্রাধান্ত আছে। রাজ গণেশ সম্ভবত তাদেরই তার পাইক ও সামরিক বাহিনীর অস্তভুক্তি করেন। ২৫ আমি বর্তমান ব্রতীদের চেহারার কারো কারো মধ্যে কিছু কিছু পলিয়া জাতির ছাপ দেখেছি । আমার ধারণ! পলিয়াদের মধ্যে যারা রাজ! গণেশের পাইক ও সামরিক বাহিনীর অন্তভুক্ত ছিলেন, তারাই গণেশ সম্প্রদায় বলে পরিচিত। এ বিষয়ে গবেষণার যথেষ্ট অবকাশ আছে। করঞ্জী গ্রামের গণেশপাড়ার এক মাইল দূরে যে হাট আছে তার নাম আগছুয়ার, সম্ভবত সেটি ছিল রাজপ্রাসাদের অগ্রবর্তী দ্বার । আর গণেশপাড়ার ভেতরেই ছিল পীঁছদুয়ার হাট । সেটি হয়ত পশ্চাদবর্তীদ্ধার । উল্লিখিত টিপিগুলি প্রাসাদ মন্দির ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষ মাত্র । প্রাসঙ্গিক যে কিংবদস্তীটি আছে তাও রাজপ্রাসাদেরই সাক্ষা দেয়। ছাঁচিকাদেবীর মন্দির ও তার ভাস্কর্য দেখে মনে হয় এই কীতি স্বয়ং রাজা গণেশের । তিনি চণ্ডীর উপাস্ত ছিলেন একথা ইতিহাস-বিদিত। ছাঁচিকা- দেবী হয়তো সতীকা দেবী যিনি প্রতি মঙ্গলবার আজও নিয়মিত পূজো পেয়ে আসছেন । সমগ্র ব্রতানুষ্ঠানের মধো বনু লৌকিক ধর্মবিশ্বাস মত ও রীতিনীতি যুক্ত থাকলেও এজন নিষ্ঠাবান হিন্দু ব্রাঙ্গণই যে এর প্রবর্তক তার নিদর্শন মেলে । কিংবদস্তীতেও এর সংকেত পাওয়া যায়। হিন্ষু ধর্মের প্রভাবের ফলে হিন্দু পুরাণের উল্লিখিত কংসের কাহিনী এ অঞ্চলে সকল মান্ুষের মধোই শ্বিদিত। ধাঁওয়াইল গ্রামে একটি ভগ্ন নারায়ণ মৃত্তিকে কংসরূপে পুজো! করতে দেখেছি। তা কি অনেকটা অলম্ষ্মীর পূজোর মত? তাছাড়। প্রচলিত লোকবিশ্বাসকে কংসবধের ব্রতরূপে পালনের নির্দেশ দিয়ে রাজা কি তার পাইক-ব্রতীগণ ও অন্তান্ত হিন্দু প্রজাদের শক্র নিধনে উৎসাহিত করেছিলেন? কেনন। ব্রতীবা সকলেই এই ব্রত পালনের জন্য নিষ্কর জমি ভোগ করতেন । এই ব্রতে বহু লৌকিক শাস্ত্রীয় পৃজাবিধি লক্ষণীয় । অনেক সময় রাজ-নির্দেশে প্রবর্তিত শাস্ত্রীয় আচার অন্ুষ্ঠান সেই রাঁজার পতনের ফলে ধীরে ধীরে লৌকিক আচার অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়ে যাঁয়। ( অথবা লৌকিক কর্ব্রতের সঙ্গে কঠিন কঠোর শাস্ত্রীয় আচার অনুষ্ঠান যুক্ত হয়ে একটি এতিহাসিক রাজনৈতিক ঘটনা সাধিত করেছে। আবার সেই ঘটনার অভাবে ধীরে ধীরে সে শধুসান্র লৌকিক আচারে ফের পরিণত হয়ে গিয়েছে । ) অর্থাৎ লৌকিকত্রত থেকে রাজনৈতিক উদ্দেস্তে ব্যবহৃত শান্তীয় আচারযুক্ত ব্রত এবং ফের লৌকিক ব্রত। আলোচিত ব্রতে তার প্রচুর নিদর্শন মেলে । উল্লিখিত জনশ্রুতি থেকে বোঝা যায়, করপ্ী হল এই ব্রতের মস্তিষ্ক এবং একডালা বৈরহাট্রার নিকটবর্তী ধাওয়াইল হয়ে পাওয়ার সন্গিকটস্থ যাত্রাডাঙ্গি পর্যস্ত তা প্রসারিত। এরমধো হয়তো লুকিয়ে আছে রাজ! গণেশের কোন রণকৌশল। সম্ভবত এই ব্রতের ছদ্ম-অনুষ্ঠানের মাধামে তীর সামরিক বাহিনী দিয়ে তিনি ধীরে ধীরে পাওুরা ঘিরে ধরেছিলেন । ইতিহাসে তো উল্লিখিত যে গিয়ান্দ্দিন আজমশাহকে তিনি ষড়যন্ত্র করে হতা। করেন। এবং তার ছু বছরের মধো তিনি ধীরে ধীরে বকলমে রাজা হয়ে বসেন। | প্রসঙ্গত লক্ষণীয় যে, এই ব্রতে একজন মুসলমানও অংশী। এটি যদ্দি অর্বাচীন কালের প্রক্ষিপ্ত ব্যাপার না হয় তবে ধরে নিতে হবে গণেশ তার জমিদারী অংশের মুসলমানদের উপরও প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলেন। এবং গিয়ান্থদ্দিন উচ্ছেদে তিনি হয়তো৷ তাদের কিছু অংশকে স্বকৌশলে কাজে লাগিয়েছিলেন । এই ব্রতে যে +ঠিন সংযম ও নিষ্ঠার সাধনা, পৌরাণিক বিশ্বাস পরিলক্ষিত তা থেকে অন্থমতি হয় বাঁজা গণেশ কিভাবে শক্র হতায় তাঁর বাহিনীকে অনুপ্রাণিত করে তুলেছিলেন । আহ্‌তি থানের হাড়ি থেকে যে হলকা ওঠে তার মাধামে তিনি হয়তো কোনো গোপন সংকেত রচনা করতেন । অথবা এটা হয়তো যুদ্ধ-বিজয়ের উল্লাস প্রকাশের একটি রূপ মাত্র। আজও পশ্চিম দিনাজপুর জেলার গ্রামে গ্রামে উৎসব উপলক্ষে বিশেষত নবান্নে মাংস কাটার পর একটি মাটির হাঁড়িতে এ মাংসের চবি পুড়িয়ে জন ঢেলে হলকণ তোলা হয়। তখন গ্রামের আবালবুদ্ববণিতা আনন্দে কাস-ব ধ্বনিতে ফেটে পড়ে। করঞ্ী গ্রামে আইতি জাগানোর থানে মাটি চাপা আগুন সম্পর্কে গ্রাম- বাসীদের প্রচলিত বিশ্বীস ( ঝড় জলে যদি অন্ত দুই স্থানের আগুন নিভে যায় তবে করপ্ী থেকেই ব্রতীদের আগুন নিতে হয় ) থেকে মনে করা যেতে পারে যে ইলিয়াস-শাহী সৃলতানদের বিরুদ্ধে রাজ! গণেশ যে ষড়যন্ত্র রচনা করেছিলেন তা মূলকরপ্ী থেকেই পরিচালিত হতো।'। ৫৫ যোগ চিহ্বের মত মাটি খুড়ে হিন্দুদের চিতা সাজানোর পদ্ধতির মতো যজ্জরুণ্টি নির্মাণের মধ্যেও হয়তো! গণেশের কোন রাজনৈতিক কৌশল লুক্কায়িত। কংসব্রত-_কংসরাজার থান, এই কিংবদস্তীগুলির মধো কতখানি এঁতিহাসিক সত্য আছে জানি না, তবে সে সময়ে ও তারপরে মুসলমানদের কাছে গণেশ রাজা “কাণস' নামে উল্লিখিত ছিলেন। পৌরাণিক কংস কাহিনী ও রাজা কানস কাহিনী এক্ষেত্রে একত্র সন্গিবেশিত হলেও খুব স্ববিরোধী খলে মনে হয় না। তবু মনে রাখতে হবে এব তিনটি স্থত্র। এক, করণ থেকে ংস। ছুই, পৌরাণিক কংসেব কাহিনী গণেশেব হিন্দু প্রজাদেব স্থলতানেব প্রতি বৈরী মনোভাব স্থষ্টিতে সহায়তা । তৃতীয়তঃ মুসলমানদের কাছে রাজা গণেশ কানস বলে উল্লেখিত। কাঁলে কালে এই সব বিষয় সাধাবণ গ্রামবাসীর ধারণায় মিলে মিশে গেছে যা আপাতভাবে স্ববিবোধী বলে মনে হতে পাবে । তবে লক্ষণীয় যে এইরকম একটি ঘটনার খুব উল্লেখযোগা এঁতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া কঠিন। এই অঞ্চলে প্রচলিত সৈতপীবেব মধ্যে এইচ, ই, স্টেপেলটন গণেশ কাহিনীর সামান্য ছায়াপাত দেখলেও অন্যান্ত লোকগাথায় এর লন্ধান ছুলক্ষ। প্রসঙ্গত সক্ষোভে উল্লেখ কব! যেতে পাবে যে সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পনা মাফিক ক্ষেত্র-গবেষণাৰ অভাবে এ অঞ্চল থেকে বহু পু'খি এবং বহু মৃত্তি আজ লুপ্ত। জূত্র-প্জী * গণেশ জাতি প্রসঙ্গে হামিলটল বুঝানন £ € 8195, [)011))8106) 5, 48101500810 010 019 806102765০0 6)9 78091 1 189 1019090. 8101017% 0109 01055 0/ 13870681. 1 ৮2) 90010100915 0001)61] 0010002731116 1715 90007:8,05, 1]1)15 621109 15 0077101790. 00 6179 100100600 08765 01 70178] 70০০: 81)0 079 201890106 008869 01 01015 01502106 আব 1)101) ৪79 770৮ 170010090. 11) 01191707700. 11116002104 4317881) & 1: 800 096 00 50900906 01786 61195 819 01 0108 0 109 0716161 (711069 ০ 711890558 1095. গ1)25 10785 109 8000৮ 06) 1)00999. [78562 [15015 (18:510) 084380০০0:) 889 531. ১। জে এল নং ১০৭, ১৭৩ যথাক্রমে পঃ বিনাবঘপুয় ও মাহ জেলা । ্ত ২। জে এল নং৮৩, হালন। ৭৭ মালদহ জেলা । ৩। পশ্চিমবঙ্গের পৃজ! পার্বণ ও মেল! (প্রথম খণ্ড) সম্পাদক £ অশোক খিত্র ৪। কংসত্রত একটি প্রাচীন অনুষ্ঠান £ ৫। কর্ধণ,১কষণ১কন-স, কংস। মূল অর্থ ছাড়িয়ে পৌরাণিক কংম প্রাধান্ত পেয়েছে। ৬। তার নিজের হাতের লেখা পত্র লক্ষা করন । | 7.1১.,.3.3. (ব.5) ৬1. দম্ভ] (1999) & (1999) ৮| অনথরূপ বিবরণ পশ্চিমবঙ্গেব পুজা পার্বণ ও মেলা (১ম খণ্ডে) রয়েছে। ৯| ...009 0070৭ 001 (আ1110]) 1৭ ০৮০৪]]5 চ0। 80010708169) নন, 96910050.. 7.5. (ঘি. ৬০]. জুস, 1932 ১০। পশ্চিমবঙ্গের পূজা-পার্বণ ও মেলা (১ম খণ্ড) ১২৭ পৃঃ । ১১। একটি মন্ত্রঃ সিন্দুরের আসন, সিশ্গুরের বসন পিম্দুরের সিংহাসন । এই সিন্ুর দিস্থু মা গারম কি, চণ্ডী কি বিষহরিকি। আমার হাতের জল ফুস নিয়া শান্ত কর মা। অন্য জায়গায় যদি যাবে ডাইনে বামে কণ্ঠে বপিবে। € পঃ বঙ্ের পৃজা-পার্বণ মেলা প্রথম খণ্ড ) ১২। পঃ বঙ্গের পৃজা-পার্বণ ও মেলা ১ম খণ্ড। ১৩। ধাওয়াইল গ্রামে আহুল মারা থানে যোগ চিহ্বের মতো একটি গর্ত খোঁড়া হয় দেখেছি। ১৪। অনুরূপ ধাওয়াইল গ্রামেও অন্থষ্িত হয় দ্রঃ কংসব্রত একটি প্রাচীন অন্গান__যধুপর্ণী শারদীয় ১৩৮৪ ১৫। এই কংসের বেদি আর কিছু নয়, কষ্টি পাথরের ভগ্ন নারায়ণ মৃত্তি। ১৬। পশ্চিমবংগের পুজা-পার্বণ ও মেল! প্রথম খণ্ড ১৭। ষধুপর্ণী ( বালুরঘাট ) শারদ? সংখা 1117. 96801096010 7.0১.8.9-3. ৮০] স্ডোা (1999) ২০। বাংলার ইতিহাসের দুশো বছরঃ স্বাধীন স্থলতানদের আমল £ সুখময় মুখোপাধ্যায় । ২১। ওই অঞ্চলে মহেন্দ্র নামে একটি গ্রাম এই এঁতিহাসিক বিষয়ের এখনো! সাক্ষী । ২২ এবং ২৩. 1709. 3690196০079 0১, উউ০ত ৯0], ৯৬111 (1939) ২৪। ১৯৩২ সালে এশিয়াটিক সোসাইটিব জর্নাশে (৮০14,:৬]]1) প্রকাশিত অধাঁপক সরসীকুমার সরন্বতীকৃত এই ব্যাখ্যাটি ডঃ স্থুক্মার সেন গ্রহণ করতে অসম্মত | বছর তিনেক আগে “অমৃত” পত্রিকায় এই লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর ডঃ সেনের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাব আলোচনা হয়। কিন্তু, এ বিষয়ে তার কোন লিখিত প্রতিবাদ পত্র আমার কাছে নেই। ওই শিলালেখটির পাঠ ডঃ সেন আমাকে বলেন__ বলিবধং ঠককরঃ | অর্থাৎ বালিকে বধ করে ছিলেন ষে ঠাকুর । হাওক্জাইলেন্র কহ সাক্ত্রতি মেতা ॥ মালদহ জেলার উত্তর প্রান্তে পঃ দিনাজপুরের গ! ঘেসে যে গ্রাম সেই ধাওয়াইলের“কংসব্রত মেলার কথা প্রথম জানি ভারত সরকার প্রকাঁশিত (১৯১৮। পশ্চিমবঙ্গের পূজা পার্বন ও মেলা_-১ম খণ্ড বইটির একটি প্রতিবেদনে । তারপর, ১৯২২ মালে পঃ দিনাজপুর জেলার বাঘন গ্রাম নিবাসী সর্বোদয়ব্রতী পবিত্র দে সেই মেলা ও অনুষ্ঠানের রিপোর্ট সংগ্রহ করার জন্তে পাঠান কালিয়াগঞ্চ থানার. রামপুর গ্রামের শ্রহরেন দেবশর্শাকে। আমি সেই বছরই পবিভ্রবাবুর সহযোগিতায় করপ্ী (পঃ দিনাজপুর ) গ্রামের কাষ-ব অথবা কংসব্রত দেখতে যাই। এবং পরের এক বছরের চেষ্টায় আমি করগ্রী গ্রামের কংসতব্রত অনুষ্ঠান ও তার গীত সংগ্রহ করতে সক্ষম হুই। ১৯২২ বঙ্গাব্ধের মধুপর্ণী (বালুরঘাট) পত্রিকার শারদ সংখ্যায় অধ্যাপক মিহিররঞ্জন লাহিড়ী কংসব্রত--একটি প্রাচীন অনুষ্ঠান নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। তাছাড়া, যুগাস্তর সাময়িকীতেও এই বিষয়ে একটি লেখা দেখেছি। লেখকের নাম মনে নেই । করজী গ্রামের অনুষ্ঠানের সঙ্গে ধাওয়াইলের অনুষ্ঠানের সময়গত ও নাধগ্গত মিল দেখে ১৯২২ বঙ্গে আমি নিজে এই গ্রামে এই অচ্ষ্ঠান দেখতে যাই। সে গ্রামে গিয়ে জানতে পারি ষে অধ্যাপক ডঃ প্রস্োত ঘোষ আগের বছর এ গ্রামে এসেছিজেন। তিনি, আনন্দবাজার পত্রিক গোষ্ঠির ভূমিলক্ষমী পত্তরিকাঁয় + ২৯ মাঘ ১৯২২ সংখ্যায় কংসব্রতমেলা শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। একই বিষয়ে চারজন ব্যক্তির সরেজমনৈ ক্ষেত্র-অভিজ্ঞতাঁর ভিত্তিতে চারটি লেখা পড়ার পরও কিছু কথা থেকে যায়। আপাততঃ ডঃ গ্রচ্োত ঘোধ গ্রসঙ্গে কিছু কথায় আসছি। এক ॥ ডঃ ঘোষ নিবন্ধটির নাম দিয়েছেন কংসত্রত মেলা । কিন্ধ মেলা বিবরণী বয়েছে মাত্র কয়েকছজ্জ। অথচ এই মেল! বিবরণী বিস্তৃত হলে এই অনুষ্ঠানটির প্রাচীন সাংস্কৃতিক এডিহা এবং তাঁব ক্রমবিবর্তন ও পরিবর্তনের ধারা সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কতকগুলি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া যেত। গ্রামীণ মেলাগুলি নিযেুউল্লেখযোগ্য গবেষণা এখনও হয়নি। মেলার মধা দিয়ে জনজীবনের বিভিন্ন দ্রিকেব সন্ধান পাওয়া যায় । উত্তরবঙ্গের দেশী পলিয়াদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, এখানে এক দিনের জন্য মেল| বসলে বল! হয় বাজার । একাধিক দিনের জন্য হলে বলা হয় মেলা। এ বিষয়টির উপর গবেধকদের নঞ্জর দেওয়! দরকার । প্রসঙ্গত ম্র্তবা যে এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস বাংলার ইতিহাসের ক্ষেত্রে এক গুক তৃপূর্ণ অধ্যায়। যার বিস্তৃত বিববণ এখনও অজ্ঞাত। ছুই ॥ অধাঁপক ঘোষ একজন ধীমান গবেষকের মতোই মেল! ও অন্যষ্ঠানটিকে কয়েকটি পর্যায়ক্রমে সাজিয়েছেন । কিন্তু এর বাখ্যা অংশটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর বলে আমার ধারণা । তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে এই একই অনুষ্ঠানের কথা করপ্ী ও যাত্রাডাঙ্গাতেও শোনা গেছে। কিন্তু এই দুর্টি গ্রামের অস্ুষ্ঠান তিনি দেখেছেন বলে মনে হয় না। যেহেতু, একমাত্র ধাওয়াইলের মধ্যেই এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি সীমাবদ্ধ নয়, সুতরাং ধাওয়াইল- নির্ভর এই ব্যাখা। সমীচীন নয়। বাছাড়। একটি গ্রামীণ অনুষ্ঠানের উপর তার পশ্চিমাঞ্চলের প্রভাব পড়তে পারে । *নৃতাত্বিকর! এমন কথা বলেন । প্রসঙ্গত জানাই, যাত্রাডাঙ্গাতে দীর্ঘকাল ধবে আর এই অঞ্ুষ্ঠান হয় না। ১৯৭৮ সালের মারচ মাসে পঃ দিনাজপুব-মালদ। জেলার লেটেলমেন্ট অফিসার বন্ধুবর কাঁনাইলাল মুখোপাধায়ের সঙ্গে মালদা থানার হালনা খাল্জাডাক্গা গ্রাম ণ অধুনা লুপ্ত * সুত্রঃ ডঃ এন. চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক, সোন্সিওল্‌জি এড €সাসাল এনখ পলি, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিস্ভালয় । গিয়েছিলাম । হালনা একসময়ে বসতিহীন ছিল (দ্রঃ সেন্সাস রিপোর্ট )।; যাত্রাডাঙ্গ৷ বর্তমানে মুপলমান-প্রধান গ্রাম । তবে একসময়ে হালনা -যাত্রাডাঙ্গার মধাবর্তী অংশে কয়েকঘর পাল পদকীধারী মানুষ বাস করতেন বলে ওই গ্রা্ থেকে জানা যাঁয়। যাত্রাডাঙ্গ গ্রামে কেউই কাষ-ব অথব] কংসত্রত অনুষ্ঠানের কথা জানেন না। তাই আমার বিদ্মিত প্রশ্ন £ অধ্যাপক ঘে!য কী করে সেখানে ব্রত গানের সন্ধান পেলেন? করধী গ্রামে 'কাষ-ব' উপলক্ষে যে গান হয়, তার সন্ধান আমিই প্রথম নিই ও সংগ্রহ করি। ১৯৩২ সালে তৎকালীন বাংলার শিক্ষা অধিকর্তা এইচ ই স্টেপেলটন ও অধ্যাপক সরমীকুমার সরন্বতী করক্ত্রী গ্রামে এসেছিলেন। স্টেপেলটন সাহেব কংসপৃজার কথ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ব্রতগান নয় । পঃ বঙ্গের পূজাপার্বনেও তা অনুল্লিখিত। তাছাড়া ব্রত গায়কগণ ও গ্রামবাসীরাই স্বীকার করেছেন যে, আমার আগে ১৯২২ কেউ এই ব্রতগান বিষয়ে কোন আগ্রহ প্রকাশ করেননি । অধাঁপক ঘোষ ব্রতগান বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছেন, তা সম্ভবত কাল্পনিক । তাই বলা যায় £ মেলা অনুষ্ঠান সম্পর্কে গৃহীত তথ্য থেকে খুব দ্রুত কোঁন সিদ্ধান্তে আসতে গেলে প্রায়শঃই ভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। বরং সাধারণ: গ্রামবাসীর ব্যাখ্যা ও মতামত এ ক্ষেত্রে গ্রহণীয় এবং তা থেকে কোন স্ৃত্রের আভাস পেলে তা উল্লেখা । তিন॥ করঞ্জীর অনুষ্ঠানে গানে ব্রহ্ম প্রসঙ্গ রযঘেছে। এ তথাটি জানলে অধ্যাপক ঘোষের স্থবিধে হতো। চার ॥ ধাওয়াইল গ্রামে কংসের ধড বলে বণিত মৃত্তিটি আসলে একটি ভগ্ন নারায়ণ মৃতি | ধাওয়াইলের কংসত্রত ও মেল অনুষ্ঠান সম্পর্কে আমার সংগৃহীত তথ্যগুলি এ পর্যস্ত সর্বত্রই অনুল্লেখিত। এই অবকাশে নিচে তা দেওয়া হলো! । এক ॥ পাটকালী বহনকারী ও প্রধান ভক্তার চার পুকুষের নাম যথাক্রমে £. কুড়ানুচন্ত্র পাল, হরিশচন্দ্র পাল, ভোল। দাস, দিনেশ প।ল এবং লক্ষণীয় বাতিক্রম শ্তোল। দাস । দুই ॥ আহুলমারা৷ স্থানটি দেবোত্তর নয়। প্রাক্তন জমির মাপিক কৃষ্ীবন সান্তাল। তাঁর ম্যানেজার মনোহর ঘোষের উপর পরবর্তীকালে তার মালিকান।, বর্তায়! মনোহুর ঘোষের কাছি থেকে তর. আখিয়ায় চাকচন্্ ৬১৭ পাল এই জ্রমি কিনে নেন। তারপর চারচন্্র পালের কাছ থেকে ওই জঙ্গি ৪1৫ বছর আগে কাঁতিক ও গণেশ পাল খরিদ করেন । কান্তিক গণেশ পালেব সঙ্গে চারুচন্ত্র পালের সম্পর্ক হল £ আপন মামার জেঠতুতো ভাই | ফলত চারু পাল কান্তিক গণেশের মামাতে। ভাই। তিন ॥ পূর্বে এই গ্রামে জমিদার ছিলেন পাওযার সামস্তর নাহার বিৰি। এই জমিদারের পাশেই ছিল চডামন জমিদীবের মৌজা । এই চুডামন জমিন করপ্রীর জমিদাব ছিলেন | ( স্থৃতবাং অধ্যাপক ঘোষ প্রদত্ত তথাটি সঠিক নয়।) চার ॥ ধাওয়াইল গ্রামের লোকসংখা। কয়েকজন গ্রামবাসীব মতে ৬*ব মতো । এব মধ্যে মুসলমান ৭ জন। পলিয়া' ৬* জন। তাঁতি ২ ঘব ( পদবী গান) সীওতাপ কোল কোডা প্রভৃতি যাবা বাইরে থেকে এসেছে ৭৫ জন। কুম্তকাব প্রায় ২০০ জন। বর্তমানে ব্রাহ্মণ নেই কিন্থ আগে তিনজন বারেন্দর ব্রা্ষণ ছিলেন । পাচ।॥ আহুলমাব! থানের ভাবপ্রাপ্ত বাক্তির নাম শ্তক সিং। তিনি জাতিতে পাহাঁড়িয়!। এরা পুরুষান্থুত্রমে অনেক দিন ধরেই এখানে আছেন। তাব পূর্বে থোকা পাহাঁড়িয় এই দায়িত্ব বহন করেছিলেন। কিন্তু বহু পূর্বে এই কাঁজ করতেন ডোথল জাতি (তথ্য সরবরাহক নরেশচন্ত্র পাল )। শুক সিং এর কাঁজ আহুলমারা থানের যজ্ঞ-স্থল নির্মাণ, তেতুল কাঠ জোগাড কৰা ইতাঁদি। 'ছ্য়। পঁটকাঁলী নিম্সিত হয় শাল অথবা নিম কাঠে। বর্তমান পাটকালী নিম কাঠের তৈরি। ১২১৪ বৎসর আগে নগেন্দ্রনাথ পাল ২১ হাতেব একটি নিম কাঠের তক্তা দেন পাটকালীর জন্য । সাত | ধাওয়াইল গ্রামের পূর্বদিকের গ্রামের নাম উত্তর বিজলবাডি। এখানে আগে কোচ ও পলিয়াদের বাস ছিল। এ অঞ্চলের পুকব থেকে ১৫ বখ্সর আগে শিব, বিষু, ও বড় বড় শাথরের ঠাই পাওয়া গিয়েছিল । দক্ষিণদিকে জোর দিঘি ও পাঁচাহার নামক ২টি সাঁওতাল পল্লী। পশ্চিমে পঃ দিনাজপুরের মূলা-হাট নামক মুসলমান পাড়া । উত্তরে পাঁকোর ও দান গ্রামে 'ষখাক্রমে মুসলমান ও হিন্দু ঘোষ ) সম্প্রদায়ের বাস। আট ॥। ধাওয়াইল গ্রামটি ঠিক সমতল নয়। বেশ কটি সজল টলটলে দীষ্ধি আছে, একটি পুরানে! কুপও আছে। এই গ্রাম থেকে অনেক কষ্ট পাথরের মুর্তি এক সময় পাওয়া! গিয়েছিল। গ্রামের চেহারা বেশ সম্পন্ন । এখানকার মাটিতে ফসলের ফল্ন ভাল। গ্রামে বিছ্বাৎ এসেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরেশ পাল প্রমুখের চেষ্টায় । নয় || গ্রামের পুরোনো কথা জানতে গেলে বয়েস বপতে না পারা অথর্ব বুদ্ধ ভূষণচন্দ্র পালের কাছে যেতেই হয়। আর অতিথি সেবার জন্য হাসিমুখে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক নরেশ পাল । দশ ॥ নরেশ পাপ বলেন, এই গ্রামের প্রধান ও একমাত্র বড় উৎসব .এই কংসত্রত। দুর্গোত্সব এ গ্রামে প্রচলিত নয়। সাংবাৎ্মরিক এই অনুষ্ঠানের মেলায় গ্রামের সকলে সার। বছরের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে রাখেন ঘরে । কিন্তু ক্রমশঃ এই মেলা দূর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। পূর্বে মুনলমান জমিদাররা এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেছিলেন । তা সত্বেও গ্রামের মানুষের আগ্রহেই এই অনুষ্ঠান ও মেলা টিকে আছে। | প্রসঙ্গত ল্মরণীয় যাত্রাডাঙ্গার অনুষ্ঠানের কথা এ গ্রামে প্রচলিত ছড়ায় পাওয়া যায়। কিন্ধ এ গ্রামে এই অন্ত্ঠান অপ্রচলিত ) এগাঁরো || এ বছরের মেলায় পুতুল খেলা, কূপের সাইকেল খেলা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল। দোকানপাটগুলো৷ জমেনি তেমন। বিভিন্ন দোকানদাঁরদের যে সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তা থেকে পরিষ্কার যে, ক্রেতার সংখা কম, তাই লাভের বদলে লোকসানই হয়। মহম্মদ হোসেন মেদিনীপুর ও অন্তান্য জায়গার মাছুর নিয়ে এবার এসেছিলেন । ৫ বছর বাদে তিনি এলেন এই মেলায় । মা ভারতী পতুল নাচ নিয়ে এসেছেন নালাগোলার কীরেন বিশ্বাস। মুদি মনোহাঁরি দৌকান, হরেকরকম জুতোর দোকান, খাবার দোকান, কাপড়ের দোকান সবই আছে-_কিস্ত বড় নিশ্রাণ। মেলার উদ্বোক্তারা তাই চিস্তিত-_কতদিন টিকিয়ে রাখা যাবে এই মেলা কে জানে গানেল্ল মাঙ্ম চৈতা1॥ পশ্চিম দিনাজপুর জেলার সীমান্তে : একটি গ্রাম। নাম বীশবাড়ি। গ্রামণভা তাব নলবাঁডি। মকলা বাঁশে ঘেরা এই গ্রামের ধার দিয়ে বয়ে গেছে মাহান্দী বা মহানন্দা! নদি। বীশবনের ফাক দিয়ে দেখা যায় দুরাস্তে এক পীচ ঢাল! জাতীয় সড়ক। শান্তপ্র গ্রামে ভেসে আসে সীই সাই শব। কোন যন্ত্রধান চলেছে তখন আসাম শিলিগুড়ি অথবা কলকাতার পথে । ৰাশবন ছাড়িয়ে কয়েক মাইল পশ্চিমে হাটলে নজরে আসে ব্রড-গেজ ও মিটার গেজ রেল লাইন। মাইল ত্রিশেক দুরে যে রেল ষ্টেশন তাঁর নাম আলুয়াবাড়ি। ওই বাঁশবাড়ি গ্রামে চৈত্র সন্ধ্যায় চারদিক থেকে মেয়ে-পুরুষের যে গান ওঠে তার নাম চৈতা। এই চৈতা ছড়িয়ে পড়ে মহানন্দা নদী পাড় তুরিয়াখালি চিতোল ঘাটা! গ্রামে। জেলার নাম তখন দাজিলিও। এই চৈতা গানের শুরু পহেল! চৈত্রের নন্ধ্যায়। আর শেষ চৈত্র-সংক্রান্থির রাতে। পুরুষেরা সঙ্গতে নিয়ে বেরোয় খোল, মঞ্ুরা আর দোঁতারা। মেয়েরা! শুধু গলায় ঘরে বসেই স্থর তোলে গানের রেশ ধরে | 'পড়ি গেল চৈতকে ধুপ আরে নেহারোয়া কৈসে যাইবহোরে-_” “চৈত্রের রোদ শুরু হল। এখন কি করে ওই প্রখর রোদের দিকে তাকাঁব ?” এবপর' এক তা গায়ক গ্রন্থ ছে ড়েন £ “কোনা যাসে আমআরে মঞ্জুরী গেলহো রামা কোনা মাসে ধরলে টিকর ? “কোন মাসে আমের মঞ্জরী (মুকুল ) কোন মাসেই বা তার গুটি ?) চৈতা গায়িকার জবাব £ 'মাঘমাসে আমআরে মঞ্জরী গিল চৈতা মাসে ধরালে টিকর।” “মাঘ মাসে আমের মগ্ররী আর চৈত্রমাসেই তার গুটি । চৈত্রের ধুপ অসহা হ'তে পারে, কিস্ত এ মাস উৎসবের | ঘাটো' ব্রত, গমীরা আর সিকুয়া। বিশেষত সিকুয়া পরবে একে অন্যের গায়ে ছড়ে দেবে ধুলো মাটি আর কাদা । প্রেম ভালবাস! মিলনের পরব এই সিকুয়া। ঘাটোব্রতকে কেন্দ্র করে বাড়ি বাঁড়ি উৎসবের সাজ। ঘরের দেওয়ালে পড়বে রঙের ছোঁপ। আঁকা হবে কত ফুল, পাখি । এই সময়ে প্রোষিত ভত্কার বিরহ বেদনা জাগে “স্তন হরি নগরিয়া, ৈঁয়ারে বিনে হায়রে মরি, রামা সৈঁয়! বিনা শুন্ত ভেল।। অনধন যৌবন কি লাগি বাঢ়ালি ছোট্‌ ননদি হো! হায়রে মরি রামা, কি লাগি বাঢ়ালি নবকেশয়া ।” 'নগরিয়া শোন, নৈয়াবিহীনা আমি হায়! সেঁয়া বিনা সবই শৃহ্য হলো । অন্ন- ধন-যৌবন কি জন্য সমৃদ্ধ? কি লাভ! কি জন্যই বা কেশের এই নবসাজ ! এই রকম বিরহ-বেদনার ছবি আছে অসংখ্য চৈতা গানে। আবার এমন ছবিও আছে যেখানে যুবতী নারীর বালক সোয়ামী। উত্তর-বিহারে, উত্তরবঙ্গে কোন কোন সমাজে এই সামাজিক ছবি দুর্লভ নয়। ৬৫ উঃ গ্রাঃ চ-_€ 'শ্ুতালারে বালে মোছারে হায় কৈঁসে কেরে জাগায়মো৷ হে। গটাভরি অগর চন্দন লহ হে রামা ছিটি ছিটি সৈঁয়ারে জাগায়েরে হে বামা ছুডি ফিকি মারাঁল পাঁজর ডাকি হে রামা। তাহ কি জাগে মূর্খ গামারিল হে রামা ।' 'ঘুমিয়ে আছে আমার বালক সোয়ামী। কি করে ওকে জাগাবো? পাত্রতরা অগ্ুরু চন্দন ছিটিয়ে সঈৈঁয়াকে জাগাতে যাই। ওর গায়ে পাঁজবে খোঁচা দিই তবুও কি ও জাগে! ও একটা মূর্খ অবোধ, হায় 1, যন্ত্রণাময় দাম্পত্যজীবনের ছৰি । যৌনকাঁতির রমণীর কান্না । এই সব গানের ভাষা লক্ষণীয়। ব্রজবুলীর কথা মনে পড়ায়। চৈত! গানের গ্রাম তো মৈথিলী ভাষাভাষি এলাকার মধ্যেই । যদিও এই গ্রামের বাসিন্দার| বাঙালী এবং নিজেদের মাহিহ্য বলে পরিচয় দেন- কিন্তু চৈতা গানে তারা প্রতিবেশি সকলের সঙ্গী | আমি জিজ্ঞাসা করেছি ঠৈতা গায়ক স্থরেন দাসকে জ্ঞানদাসের গান জানেন আপনার1?' স্থরেনেব সহজ সরল চোখে অজ্ঞতার ভাষা । তবু আমার জ্ঞানদাসের কথা মনে পড়ে যখন শুনি__ বাশী না দিলো রছিতেরে অহোরে মোর চরার বাশীরে এখেতো বাশের ঝাশীবে ফিন্দো৷ গটার গটি কেমন জানিল বাশীরে রাধা কলঙ্কিনী এখেতো বাশের বাশীবে পিতলারে ছাউনি আঙুলে টিপতে ধাশীরে ৬৬ বলে রাধা বাধা অহোঁরে মোর চরার কাশীরে লাগাল যদি রে পাউ আগা গোচ কাটিয়া বাশীবে সাগরে ভাসাউ ॥ গত বারো বছবে উত্তববাঙলার বহু গ্রাম ঘুরেছি, কিন্তু বীশবাডি, তৃবিয়া-খালি, চিতোল-ঘাটা ছাডা আব কোথাও চৈতা গান শুনিনি । -৬গ তুইধকমোক্গ্রচাড়িস্া পালাল গেগুঁতিদেল্ণ ॥ মহানন্দা এখানে পচ্চিমমুখী । 'তারই/$ঘোপা জলে ঠশান আবীর,-.'লাল ধুআবীরএএপশ্চিমের ' আকাশেও। অস্তাচলে সুর্য । পুবের আকাশ- থেকেএখুবই দ্রতএগুড়ে। ও ডো” অন্ধকারছড়িয়ে পড়ছে?। মহানন্দার আবীর মাখা.জলে সে গুড়ো পড়ছে। ঠুঅদুরেইঃ:জাতীয় সড়কের ব্রীজ। অন্ধকার সেখানেও ঝরছে। উত্তরের ঝোপঝাড় ততক্ষণে কালিঝুলি মাখা । ওরা সারবদ্ধ দাড়িয়ে আছে মহানন্দার দক্ষিণ পাড়ে। কতক নেমেছে নদীর জলে. কলার ভূর! ( ভেল1) নিয়ে, পেইসব ভুরায় জেলে দিচ্ছে চেরাগ বাতি। ছোঁট ছোট ভূরায় ভেসে চলে সার সার চেরাগ বাতি। এরপর ওরা মহানন্দ! পাড়ে নদীজলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে-_ তুই মোক্‌ ছাড়িয়া পালাল্‌ গে বিদেশ ও মুই বেড়াউ কান্দিয়া। ওদিকে মহানন্দার ব্রীজ কাপিয়ে জাতীয় সড়ক দাপিয়ে গুই গুই আওয়াজ তুলে ছুটে চলেছে যন্ত্রধান কলকাতা অথবা শিলিগুড়ির পথে । ওদের কান্নার সুর নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে হাওয়ায় ভেসে ছড়িয়ে যায়। সন্ধ্যার আলো-আধারি কাপড়ে ঢাকা মহানন্দার বুকে ছোট ছোট চেরাগ-গুলো. তখন কয়েকটি আলোর বিন্কু। সুঠো মুঠো জোনাকি অন্ধকারের বুকে । ওর! ফেরে গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে। গলায় ওদের কান্ন! গান হয়ে স্থর তোলে-_ শুনি হামরা মাইবাবার রুধুন! ওরে তোর মায়ের কান্দনে মাহান্দি লোদি বহে ওরে তোর বাপ কানেছে বাইরি ঘরৎ বসে ওরে তোর ভাইর কান্দনে বুক ভিজি যাছে। (আমরা! শুনি তোর মা বাবার কাদন । তোর মায়ের কাদনে মহানন্দা নদী বয়ে যায়। তোর বাবা কাদে বাইরের ঘরে বসে। ও তোর ভাইয়ের কাদনে সবার বুক ভিজে যায়।) :ওদের সকলের হাঁতে হাতে বলি দেওয়া কোতরের ( কবুতরের ) ভালি। “অস্তাচল ত্ুর্ধের রক্তিম আলোয় মহানন্দীর জলে ওরা সকলে কোতর উৎসর্গ করেছে তিন্তাবুড়ির নামে । তিস্তাবুডি সালাম দে__ তিস্তাবুড়ি বাটথরা কুয়র। প্রতিটি কোতরের গলা! ছিড়ে ছিড়ে রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছে মহানন্দার জলে, তিস্তার নামে। তারপর শেষ পূজো পৃজেছে ঘাটো-মণি, ভায়া ঘাটো আর কৃতুয়ালকে । ছোট ছোট কলার ভূরায় জালিয়েছে চেরাগ বাতি, ভাসিয়েছে মহানন্দার জলে একে একে । এইভাবে সাঙ্গ হয় মাসজোড়া ঘাটে ব্রত। আবার আসবে ফিরে পয়লা চেত্র। আবার আয়োজন হবে ঘাটো ব্রত। সারা চৈত্র মাস ধরে চলবে গান অনুষ্ঠান আর সাঙ্গ হবে ব্রত এইভাবে পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যারাগে । ওরা ঘাটো ব্রতিনী। জাতিতে কেউ রাজবংশী, কেউ নবশাখ, কেউ মাহিহ্য। ওরা চৈত্রমাসের জন্য ছট্ফট্‌ করে পুরুতঠাকুর-_-পার্জিয়ার ভাইয়ে'র কাছে যায় বুঝ করতে । লেখাপড়ি করছে পাঞ্জিয়ার ভাই চৈতের আছে কতদিন। কারো কারো বুঝ করতে দেরী হয়ে যায়। “পাঞ্জিয়ার ভাই” বলে--'সারা চৈ গেল হে গিরসের বহু" € চৈত্রমাস সারা হয়ে গেল হে গেরস্থের বউ ); এ কথা ৬৪৯ শুনে গেরস্থের বউ 'ধলো৷ ঘাটর গে চরণ / কলোয় মাটি গে গিরসের বউ / ঢালায় গে পিড়া। তারপর সিন্দুর দিয়ে সেই “পিড়া' বা আসন গেরস্থের বউ পুজো! করে । ঘাটো ব্রত কাহিনীতে জানা যায় এ সব। ঘাটে! পুজোয় কি লাভ হয়? তার উত্তরও আছে ব্রত-কাহিনীতে । গোল! ভরে যায় ধানে । নদী বা সাগরে ডুবে যাওয়া সওদাগর স্বামী বেচে ওঠে আর কোল ভরে যায় পুত্র-সস্তানে। হারিয়ে যাওয়া ভাই পায় বোন । ননদ-ভাউজির সম্পর্কে হয় সুমধুর । যদি বা এসব না পাওয়া] যায়, তবু ব্রতিনী ঘাটে পূজো করে। চৈত্রমাস এলেই গায়ের মেয়ে-বউর1 কারো একজনের বাড়ি একত্র হয়ে ঘাটে কাহিনী স্থুর করে গান গায়। ঘাটোমণি এক কুমারী মেয়ে । নানা ঘটন] তাঁকে-নিয়ে। অবশেষে একদিন তার বিয়ে হয় নগর কোটালের সঙ্গে । সেই বিয়ের অনুষ্ঠান চৈত্র মাসের শেষ দিন। ২৯ চৈত্র তার অধিবাস, আর পয়লা বৈশাখ শ্বশুরবাড়ি পথে যাত্রা। গায়ের মেয়েরা ঘাটোমণির বিয়ে দেয় নিজের মেয়ের মতোই | 'বাইজন' বাজে অধিবাসীর দিন সকাল থেকেই । মাদলের গুমাগুম শবে চারিদিকে সাড়া পড়ে যায়। তাতিভায়! খানচারি কাপড় দিয়ে যায়। বানিয়াভায়! ! হ্বর্ণকাঁর)) দিয়ে যায় গহনা, শাখারিয়াভায়া শাখা, সিন্দ রা- ভায়! সিন্দুর গুড়িয়ালভায়া চার টিন গুড়। কাশাই (এক ধরনের গাছ) হলুদ সবই জোগাড় হয় ঘাটোমণিব বিষের অনুষ্ঠানে | ২৯ চৈত্র সারারাত ধরে ব্রতিনীরা অধিবাসের গান করে। ৩০ চৈত্র সকাল থেকেই বিয়ের গান। বিয়ের আয়োজন | ছাম গাইনে ( উদুখলে ) কোটা হয় হলুদ, কাশাই । ব্রতিনীরাই সেই সব গায়ে মেখে ত্রান করে কল্পিত ঘাটোকে নিয়ে । এই ক্সানের পূর্বে হলুদ ছোড়াছু ডিও হয় পরস্পর | সেদিন গায়ে গায়ে সব ঘরবাড়ি, উঠোন তকতকে নিকোনো৷ | বাড়ি বাড়ি মাটির দেওয়াপে লাল সাদা রঙের পরশ | লতা-ফুল-পাখির চিত্রন। প্রতিটি ঘরেই যেন 'ফুলকোফুবা” অর্ধাৎ ঘাটোমণির বাসর ঘর | দুপুরে গায়ের ঘর ঘর থেকে আকুয়ার কুঁয়ার ( কুমারী-অকুমারী ) মেয়ের! সাজিতে ভরে নিয়ে আসে ধুতুরা ফুল। আর ঘাটো, কুতুয়াল, মালিন, তায়! ঘাটোশির ( ঘাটগ্রী) মুত্তি। সবই মাটির তৈরি। বুতুয়াল বা কোটালের ৭০ মুক্তি শুধু একটি পুরুষ জননাঙ্গ | মালিয়ান বা মালিনী হলো একটি ছোট হাঁড়ি। আর ঘাটো হলে! একটি বড়োসড়ো ঘট। আর কয়েকটি ছোট ছোট ঘট হলো ভায়া ঘাটো। এইসঙ্গে ব্রতিনীরা নেয় ছাতুর নৈবেগ্ভ। গায়ের একটি বাড়ি আগে থেকেই স্থির কর] থাকে সেখানে সবাই দেবে পুজে| | সেদিন দুপুরে ব্রতবাড়ির অঙ্গনে একটি চাদৌয়া টাঙ্গানেো! । সেই বাড়ির ধাপিতে (বারান্দায়) থাকে সদলে ঘাটে! । একে একে নানা বয়সের ব্রতিনীীরা আসে সাজি ভরে ধুতুরা ফুল আর ছাতুর নৈবেদ্য নিয়ে। ঘ্বাটোর আসনে তা নিবেদিত হয়। ফুল-নৈবেছ্যে ধীরে ধীরে ঢেকে যায় ঘাটো। কৃতুয়াল, মাঁপিয়ান আর ভায়া ঘাটো। এই ঘাটোর মূল পৃজারিণী সেবাড়ির গিরসের বহু। নাচে গানে চৈত্র সংক্রান্তির রাত শেষ হয়। শুভ নববর্ষের আলো ফুটে ওঠে । প্রহরে প্রহরে সকাল গড়িয়ে ছুপুর, ছুপুর গড়িয়ে বিকেল। এরই মধ্যে ব্রতিনীরা নিজের! কলা গাছের বাঁকল কেটে গড়ে তোলে ছোট ছোট ভূবা, ভেলা, বা নৌকো? । আর কলার বাকলেই তৈয়ারি হয় চিরাগ ব৷ প্রদদীপ। ঘাট! ব্রৃতিনী মেয়েরা স্ূর্ধান্তের আগে মহানন্দা নদী পাড়ে গিয়ে দল বেঁধে দাড়ায়। সঙ্ষে তাদের বলি দেওয়ার জন্য কোতর বা! কবুতর | স্র্যান্তের রক্তরাঙ্গী মহানন্দার জলে কবুতরের মাথা ছিড়ে রক্ত ছিটিয়ে দেয় তারা । বন্দনা করে তিত্তাবুড়ি, উত্তরাকালী, আর হরেক দেব-দেবীর । তারপর একে একে পুজে। করে কুতুয়াল, ঘাটোশির, মালিয়াঁন, ভায়া ঘাটো আর ঘাটোমণিকে। তারপর স্থর্য ডুবুডূবু মৃহূর্তে উরায় তুলে দেয় তাদের একে একে । সাজিয়ে দেয় চেরাগবাতি। তারপরই তাদের গলায় কান্না গানের স্থর তোলে । তুই মোক্‌ ছাড়িয়া! পালাল্‌ গে বিদেশ . ও মুই বেড়াউ কান্দিয়া। * * ঘাটো-ব বা ঘাটে! ব্রত উত্তরবঙ্গের বহু গাঁয়েই পালিত হয়। তবে এখানে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার পিয়া ঘে ষা বাশবাড়ি গ্রামের অভিজ্ঞতাই বর্ণনা করা হয়েছে। ১৯২২ সালে এপ্রিল মাসে ঘাটো ব্রতর সময় ওই গীয়ে গিয়ে আমি এই অনুষ্ঠান দেখেছি, গান ও তথা সংগ্রহ করেছি। বিষুণপদ দাস ( বর্তমানে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান) স্থরেন দাস এবং অন্তান্য গ্রামবাসীদের সহযোগিত! এই প্রসঙ্গে সকতজ্ঞচিত্তে মরণ করি । ৭১ ॥ গম্ভীর! শবটির সঙ্গে আমরা অনেকই পরিচিত। কিন্তু, 'গমিরা'ঁ আমাদের অনেকেরই অপরিচিত। চৈত্র সংক্রান্তি কি তারও ছু” চারদিন আগে থেকেই উত্তরবঙ্গের গাঁয়ে গায়ে বিশেষতঃ পশ্চিম দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে এই মিরা শুরু হয়ে যায়। রাজবংশী, পলিয়া অধ্যুষিত গাঁ গুলোতে গমির! চলে আষাঢ় মাসের অস্থুবাচী তিথি পর্যস্ত। কাঠের মোখা বা! মুখা পরে তক্কের দল বাড়ি বাঁড়ি ঘুরে নাচে। এর নাম ফুল ঝারি। তারপর গমিরা তলায় জড়ো হয়| পূজো দেয় । চামাড় কালী, মাশনি ও মাশনি কালী, বুড়া-বুড়ি, চণ্তীও শিকনি ঢালের মুখোশ তো একান্তই আবশ্তক । বাঘ, তালুক আরো! হরেক রকমের মুখোশ পরে তক্তদের নাচতে দেখেছি এই সময় । এমন কি ছুর্গা-অস্থরও সাজতে দেখেছি কোন কোন গাঁয়ে। ঢাক বাজে, কাসি বাজে এই মোখা নাচের সঙ্গে । একজন দেবাংশী বা পুরোহিত নাচের ক্ষেত্রে মন্ত্রপৃত ফুল.জল নিয়ে ভক্তদের পাশে পাশে স্দাই প্ররস্তত। নাচের আগে, নাচের সময় সেই মন্ত্রপুত জল ফুল ছিটিয়ে দেন তিনি তক্তদের মাথায় মুখোশগুলোর উপর | মুখোশগুলে যাতে প্রাণ পেয়ে ভক্তদের উপর ভর না করে, সে চেষ্টাই দেবাংশী করেন। মুখোশ নাচের আগে একজন ভক্ত কোমরে লাল কাপড় জড়িয়ে একট! হাঁড়িতে পাঠ কাঠি জালিয়ে ঢাকের তালে তালে মুখোশপরা তক্তদের আরতি করে। এই হাড়িটার নাম “সাঞ্চলের হাণ্ডি। মুখোশ পরে শুনেছি, অতীতে 'গমির' নাচের আগে “দেবাংশী কোন কবর থেকে মৃত মান্থষের মাথা সংগ্রহ করতেন । নাচের সময় তার হাতে থাকত সেই মড়ার মাথা । গাঁয়ের মান্গুষের যার ঘা কিছু মানত কবুতর, পায়রা তা৷ এই সময় শিকনিঢাল, চামাড়কালী প্রভৃতি দেবতার্দের কাছে উৎসর্গ করা হয়। শ্তনেছি অতীতে কচি-শিশ্তও বলি দেওয়। হতে! | এখন অতীতের সেই ভক্তি বিশ্বাস নেই বটে, কিন্তু 'গমিরা' নাচ লুপ্ত হয়ে যায় নি। খ পাশোনসি লোক্মাত্রা ॥ ছু-পাঁশের সবুজের মাঝখান দিয়ে একটি কালো৷ সিল পথ। রাতের অদ্ধকারে সব একাকার । মুঠোমুঠো জোনাকি পোকার উল্লাস। সেইসঙ্ষে ঝিল্লির সানাই । ঠিক সেই সময় হাড়-কাপানো উত্তরের বাতাসে হ্বাজাকবাঁতির রোশনাই থেকে ছিটকে আসে এক ককুণ সুর দাদাগে, তোমার লেগে পাগলিনী। স্বপ্ন দেখি দিবানিশি ও না, শিশিরে কি বনসিজে ফোট দেখি কি মন বুঝে ।' ওই স্থুরের প্রতি কান ফেলে এক পা এক পা করে হেঁটে ছিরামতী গামারের দেশে যে আসরে এসে হাঁজির হওয়া গেল, তার নাম খনের আলর। “কি গাউন হচ্ছে হে?” গলা খাঁকারি দিয়ে একজন জবাব দেয়, খন্‌ 'বুলোসরি গে। উত্তরবাংলার এই হল খাঁটি গ্রামীণ যাত্রা। মাথার উপর টাঁঙানে! একটা ছেঁড়া চাদোয়া। তাতে গোটা আসর ঢাকে না। শুধু কুশীলবদের আর বাস্যন্ত্রীদের মাথা ঢাকে। নীচে মাটিতে পেতে দেওয়া! ধোকরার উপর ঘন বৃত্তাকারে বসে আছে ডুগি-তব.লা, খোল, হারমোনিয়ম, মঞ্জুরাবাদকের দল। আর তাদের ঘিরেই পুরুষ নায়িক] কেঁদে কেঁদে নায়কের কাছে প্রেমভিক্ষা করছে। সেই কাঙ্নাভেজা গানে মশগুল হয়ে আছে আশপাশের ছু-চার গায়ের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। এক পাঁশে ঝোলানে! হাজাকট। যেন সেই কান্নার অংশী | রাত কেটে ভোর হয়। খনের গানের বুলোসরী পালায় নায়ক-নায়িকার মিলনদৃশ্টঠে দর্শকরা উদগ্রীব । ওদিকে তখন একে একে উকি মারে মাওয়া ঘরা, স্ততপা ঘরার শনের চাল । মাটিতে গড়াগড়ি খায় গোরুগাড়ির চাকা, 'বিধা আর নাঙ্গল জুঙ্গাল । রোদ ওঠবার আগেই আসর ভাওে। সারারাত অক্ঠিনয় করে ক্লান্ত শ্রান্ত কুশীলবের1! ঘুমিয়ে পড়ে ফাঁকা আসবে । আর দর্শকরা তখন ভয়ানক ব্যস্ত হয়ে ওঠে তাদের দৈনন্দিন কাজে । উত্তববঙ্গের গ্রামীণ জনসাধারণের জীবন অবলম্বন কবে এইরকম কত পালা মুখে মুখে রচিত হয়েছে, তার হিসেব নেই | বংপুরের নয়নসরী'র স্থৃতি এপার বাণ্লায় বাহিত্ত হয়ে পশ্চিম দিনাজপুবে বেশ সচল । সেই ধাঁচে গড়ে উঠেছে এখানে বর্মেসরীর গান। অবৈধ প্রেম, নিপীডনমূলক ঘটনা, যা কিছুই সমাজমাঁনসে ঢেউ তোলে তাই কাধা পড়ে খনের গানে । পালার চরিত্রগুলি কথা বলে কখনো গছ্ে, কখনো গানে । সে গগ্য আসরেই রচিত । গান গুলি শুধু আগে থেকে বীপ! । যেখানেই আবেগ, যেখানেই হৃদয় উজাভ করার প্রশ্ন, সেখানেই গানের নির্কর | শুধু গান, শুধু সংলাপ নয়, সেই সঙ্গে আছে প্রয়োজনীয় নাটক ক্রিয়া বা ৮61৮7 | গানের স্বরে স্থুরে কশীলবদের পায়ে জাগে তাল, নতোর দোলায় তখন মঞ্চ ভরপুর ৷ এই নৃত্য উত্তরবঙ্ষের সমস্ত পালাগানের এক বিশেষ অঙ্গ । সৈতগীর বা বিষহরা গানেও আছে নৃত্য । 'ব' খেল! গানও নৃত্য-প্রধান । জলপাইগুড়ি জেলায় খনের গান নেই। সেখানে পালাটিয়া” আসর জমায় । দিনাজপুরের মতো পাঁলাটিয়া এখন কোনো গৃহস্থের অঙ্গনে পরিবেশিত হয় না। কোনো পুজা বা উৎসব উপলক্ষে দেবতার ধামে নানা গ্রাম থেকে আসে নানা দল। তাঁরা এসে কেউ নামায় পালাটিয়া কেউ বা “মাখা” । তাই বোধ করি পালাটিয়ার আরেক নাম ধাম গান। পালাটিয়ার তিন ভাগ । এক, মান পাঁচাল। ড্রই, রঙ পাচাল। তিন, খাস পাচাল। বলাবাহুল্য, এখানে পাঁচাল আর পাঁচালি সমার্থক । “মান পাঁচাল' মানী বাক্তিদের উপস্থিতিতে পরিবেশিত হয় | বিষয়বস্ত প্রধানত ইতিহাস বা পুবাণাশ্রয়ী। ভাষায় আঞ্চলিক শব নেই বললেই চলে। “রঙ পাঁচাল'-এর বিষয় সামাজিক, তবে কাহিনী নিতাস্তই কাল্পনিক । এ-সব ভাষায়ও মাটির গন্ধ পাওয়া মুশকিল। কিন্তু খাঁস পাঁচালের বিষয়বস্ত গ্রাম- ১, ৷ জীবনের ত্/মূলক ঘটনার উপর প্রতিষ্ঠিত | এমন-কি, চরিব্রগুলির নাম পর্যন্ত: অবিকল থাকে । ভাষা সবটাই আঞ্চলিক। জলপাইগুড়ি কুচবিহার অঞ্চলের সাধারণ মান্য দৈনন্দিন কথাবাতীয় যে ভাষ৷ ব্যবহার করে তাই খাস পাচালের ভাষা । তাই, এর সংলাপ উচ্চারণে কুশীলবদের কোনো জড়তা নেই। বস্তত খাস পাচালের কোনো সংলাপই পূর্ব থেকে নিন্দিষ্ট নয়। এগুলি আসরনিরভর ও উপস্থিত মতো! তৈয়াবি। খাস পাচালের সঙ্গে খনের সাদৃশ্য আছে। তবে বৈসাদৃশ্য অনেক। এ আলোচন] অবশ্ত এখানে অবাস্তর। পালাটিয়ার তিন অঙ্গেরই প্রয়োগরী'তি একেবারেই অভিন্ন । সাবা উত্তরবঙ্গে প্রায় সমস্ত পালার ক্ষেভেই তার মঞ্চগঠন, বাচ্যযন্ত্রীব অবস্থান এবং অভিনয়রীতি একই রকম। বিষহরা, পক্ষমীয়ালা বা বুশাণ, সৈতপীর পালাগানের ক্ষেত্রে যেরূপ, খন পালাটিয়ার ক্ষেত্রে সেই একই রূপ । অর্থাৎ মঞ্চ হল গৃহস্থের অঙ্গন বা বারোয়ারীতলা বা ধামতলার একটি সমতপক্ষেত্র | মাথার উপর একটা চাদোয়া বা পরিবর্তে একটি বর্গ।য়ত চর । তারই নীচে ঠিক মধ্স্থলে বাচ্যন্ত্রীদের বৃত্তাকার ঘন অবস্থান । এদ্দেরই ঘিরে ঘিরে যেমন বিষহরা, লক্ষ্মীয়াল, সৈতপীরের গায়েনের গান, ছোকরীদের নাচ পরিবেশিত হয় তেমনি খনের ব] পালাটিয়ার কুশীলবদের অভিনয় । ধর্মীয় বা শাস্বীয় গানের ক্ষেত্রে বাড়তি একটি আসর থাকে । সৈতপীরের ক্ষেত্রে তা পশ্চিমণুখী, অন্যদের ক্ষেত্রে উত্তর বা পূর্বমুখী । সমস্ত পালার ক্ষেত্রেই প্রথমে বন্দনা গান_-ষা অবশ্ঠ-করণীয়। তবে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার গায়েন বা ঝুশীলবদের বন্দনার অংশে উত্তরবঙ্গের অন্য অঞ্চলের, এমন-কি মালদহেরও পার্থক্য বিছ্যমান। বন্দনা অংশের এই পার্থক্টের পেছনে গায়েন বা ধুশীলবদের তৌগোলিক স্বাতদ্যই যে শুধু কাজ করেছে, তা নয়। একটি জাতিগত ও সামাজিক তাৎপর্য এতে ক্রিয়াশীল। এ কথা শুধু “বন্দনা সম্বন্ধেই প্রযোজ্য নয়, সমস্ত পালাগানগুলি সম্বদ্ধেই প্রযোজ্য । উদাহরণস্বরূপ £ 'দেশপলি'-অধুষিত এলাকায় খনের গান প্রচলিত। জলপাইগুড়ি, কুচবিহারের গ্রামাঞ্চলে এ গানের নাম বোধকরি কেউ জানেন না । পালার বন্দনা গানে ধারা! অংশগ্রহণ করেন তারাই সেই পালার বিশিষ্ট কুশীলব। বন্দনা অংশে পালার নাম ঘোষিত হয়। লক্ষণীয় যে প্রতিটি ৭৭ পালায় একটি “ওসিয়া” বা “রসিক' চরিত্র থাকে । অনেকটা সংস্কৃত নাটকের বিদ্বষক বা ভাড়ের মতো । এই রসিক অনেক সময় শ্ুত্রধারের মতে। কাজ করে থাকে । তার মানে এই নয় যে, এই-সব পালাগানগুলির উপর সংস্কৃত নাটকের প্রভাব রয়েছে। যদিও জনৈক বিশিষ্ট গবেষক মনে করেন যে সংস্কৃত বা শান্ত্ীয় নাটা থেকেই লোকায়ত নাট্যের জন্ম। শাস্ত্রীয় নাটাগুলি এক সময় জনমানসের উপর এমন বাপক প্রভাব ফেলেছিল যা! পরবর্তীকালে লোকায়ত সংস্কৃতিতে শিখিলভাবে আশ্রয় লাভ করে । এ*এ-সব যুক্তি কতটা গ্রহণীয় তা বিচারসাপেক্ষ । কেননা! সামাজিক সাংস্কৃতিক শোষণের ধারাবাহিক ইতিহাসের পর্যালোচনায় এ কথা ক্রমশ পরিস্কট হয়ে উঠছে যে লোকায়ত সংস্কৃতি হল আদি সংস্কৃতি। বহিরাগত শোষক সম্প্রদায় হকৌশলে সে-সব আত্মসাং করে প্রবল প্রচারযন্ত্রের সাহায্যে তা নিজন্ব ও উচ্চমানের বলে ঘোষণা করেছে। বিস্তৃত আলোচনায় এ বিষয়টি পরিষ্ক,ট করা সম্ভব। আপাতত সে-সব আলোচন। এখানে অবাস্তর | পশ্চিম দ্রিনাজপুর জেলার খনের গান গ্রামীণ জীবনের কোনো কাণ্ড বা খণ্ডকে ( কলঙ্কজনিত ঘটন! ) কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে । ঘটনা ও চরিত্রগুলি প্রায়শ অবিকল থাকে । এই গান একটি গ্রামে পরিবেশিত হলে ক্রমশ তা লোকমুখে গ্রামাস্তবে ছড়িয়ে পড়ে। এখানেই তার অসামান্ত লোকপ্রিয়তা! । আমি দেখেছি, অধিকাংশ পালা তার উতৎ্সভূমি হারিয়ে ফেলে একাকার হয়ে গেছে গ্রাম গ্রামাস্তরে । ফলে, একই পালার বহু দল বিভিন্ন গ্রামে রয়েছে। খনের একটি সামাজিক নৈতিক দিকও রয়েছে । খনের ঘটনা, যা সমাঁজ- অসমন্থিত, তা গানের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামাস্তরে | ফলত অবৈধ ক্রিয়ায় ভীতি জাঁগে সামীজিক মানুষের । এবং সম্ভবত এর প্রচারধন্ষিতায় গ্রাম্য দেউনিয়া মাতব্বর শ্রেণীর লোক একে খুব ভালো চোখে দেখে না । আমি দেখেছি, এই-সব শ্রেণীর লোক এ-গানের আয়োজনে ও প্রচারে উৎসাহহীন ও বিরোধী । খনের গানের সামাজিক নৈতিক বৈশিষ্ট্য যাই থাকুক-না কেন, এতে শিল্পগুগের প্রাধান্য সমধিক । এর গীতিরস ও নাট্যগুণ এমনই ষে দর্শকের কাছে এর ফোক থিয়েটার অব ইত্ডিয়া-বলবস্ত, গাগা ভ্রঃ প৮ ঘটনা ও চরিত্রের বাস্তবতা বাহৃবিষয় মাত্র । এর স্থর ও অভিনয় এমনই হাদয়- গ্রাহী ও জীবন্ত যে রসিক দর্শক তা ভুলতে পারে না সহজে । যার ফলে, সে নিজগ্রামে ফিরে গিয়ে হুবহু ওই পালার একটি দল তালিম দিয়ে তৈয়ারী করে এবং অভিনয়াহ্ষ্ঠানের আয়োজনে বান্ত হয়ে পড়ে । স্থৃতরাং এই গানের পালাগুলিতে অসামাজিক ঘটনার প্রতি যে ধিক্কার নিহিত তা পরিশেষে করুণ মধুর রসে পরিসিক্ত হয়ে যায়। সমস্ত ক্লেদ ও ব্যতিচার সেই বসপ্রতিষ্ঠায় পুণাতোয়া হয়ে ওঠে । সেই রসে অবগাহন করে দর্শক এমনই মাতোয়ারা যে তার দৈনন্দিন কঠিন শ্রমের কাজে কখন জানি বুকের মধো গুনগুনিয়ে ওঠে খনের কোনো! আবেগমধুর অংশ । সে তখন উথাল হাওয়ায় গল! ছেড়ে দেয়। এছাড়া, হাট-ফিরতি নিঃসঙ্গ পথিক তার নিঃসঙ্গতা ভুলতে সঙ্গী করে খনের স্বর । তাই, এ গানের বিষয়বস্ততে যে কষকজীবনের যে নীতি-নৈতিকতাব কথাই থাকুক না কেন, এ গান কৃষকের হৃদয়ের গভীরে স্থপ্রোথিত। এ গানে নায়িকা প্রধান । তাই, বুলোস্রী, বুধোসরী, নয়ানসরী, বর্মেসরী প্রভৃতি পালার নাম। “সরী” বা “শোরী কথাটির ছুটি অর্থ। এক, বাচ্যার্থে নারীবোধক | ছুই, লক্ষার্থে, বৈধ জীবনযাপনে যে নারী চ্যুতা। নায়িকার অন্তভূতি এতে বিশেষভাবে প্রকট হওয়ায় এই পালাগুলিতে লিরিক আবেদন স্পষ্ট হয়ে ওঠে । জলপাইগুড়ি জেলার পালাটিয়ার অন্তভূ্ত খাস পাঁচালে' এই লিরিক অনুভূতির অভাব। সেখানে ঘটনাই প্রধান । ফলে, খনের মতো! সে অঞ্চলের কৃষকের হৃদয়ে খাস পাঁচাল বাসা বাঁধতে পারে নি। সং না না এক সময়ে সারা পৃথিবীতেই লোকায়ত নাট্যমঞ্চগুলি একই রকম ছিল। সমতলভূমি মঞ্চের তিন দিক ঘিরে দর্শক, একদিকে ছিল একফালি সক পথ - কুশীলবদের সাজঘর থেকে মঞ্চ, মঞ্চ থেকে সাজঘরে ফিরে যাবার জন্য। জাপানে “কাবুকি' নাটকের এই ছিল মঞ্চরূপ। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশেও অনুরূপ মঞ্চের ছিল ব্যবহার | কিন্তু ক্রমশ যখন সমাজে ওপর তলার সংস্কৃতি নীচুতলার সংস্কৃতির মধ্যে অনুপ্রবেশ করে পুঁজি বাড়াবার চেষ্টা করল তখন নাঁটকই হল প্রথম বলি। বলাই বাহুল্য, নাট্যই আদি শিল্প। ফলে, মঞ্চ ৭৪) জনগণ থেকে ধীরে ধীরে স্বাতন্ত্য অর্জন করতে শুরু করল। নির্মিত হল উচু প্রটাটফরম। এখন বাংলার জনপ্রিক্স “যাত্রা” এবং ভারতের প্রায় সব প্রদেশেই লোকনাটকে উচু প্ল্যাটফরম ব্যবহৃত। পালার বিষয়গুলি প্রায় সব প্রদেশেই পৌরাণিক বা! দৈবীকাহিনীভিত্তিক । কর্ণাটকের লোকপ্রিয় যক্ষগণ, মহুরাষ্ট্রের “তামাশা”, উত্তর ভারতের বিখ্যাত রামলীলা, রাসলীলা, গুজরাটের ভবাই ( ভওয়াই ), প্রভৃতির ভিত্তি ভারতীয় পুরাঁণ। সার। ভারতে কৃষ্ণকথ! যে কী প্রবল প্রিয়্তা অর্জন করেছে তা ,বাংলার, কষ্ক্াত্রা থেকে মহারাষ্ট্রের তামাশা, উত্তর ভারতের তগৎ, দক্ষিণের লবকুশ নাটকগুলির কাহিনী কিংবা মঞ্চপ্রয়োগে নিহিত। এ- সবের একমাত্র ব্যতিক্রম পাঞ্জাবের “নকল”, কাশ্মীরের “ভন্দ জস্না” কিংবা উত্তর ভারতের নৌটংকি এবং উত্তর-বাংলার খনের গান। পাঞ্চাবের নকল, কাশ্মীরের ভন্দ জস্নার সঙ্গে উত্তরবাংলার কৌতুক নকৃশা-নাটক “ব' খেলার সবিশেষ মিল রয়েছে । উত্তর ভারতের নৌটংকির সঙ্গে যেন জলপাইগুড়ি অঞ্চলের মান পাঁচালের একটা সাদৃশ্য পাওয়া যায়। কিন্তু লোকায়ত মঞ্চ ব্যবহারে উত্তর বাংলায় এখনে। সেই আদি রূপ পরিলক্ষিত হয়। অথচ ন্টাপ্রয়োগে বাগ্যন্ত্র ইত্যাদিতে হারমোনিয়ম তবল বেশ জুড়ে বসেছে । কোথাও কোথাও বেহালাও 'বেয়ালা রূপে স্থান পেয়েছে। পোশাক-আশীকের মধ্যে সমকালীন সমাজ্জীবনের ছাপও হ্ম্পষ্ট। স্থানীয় ও গোষীগত স্বাতন্ত্রা থাকলেও উত্তরবাংলার লোকযাত্রাগুলির সঙ্গে সাবা! ভারতের ্বারূপ্য মেলে । যেমন, বাছ্যন্ত্রের ক্ষেত্রে মঞ্জুরা এবং চরিক্রাভিনয়ে ভাড় _ এই ছুই-এর ব্যবহার সর্বত্রই রয়েছে। গুজরাটের ভবাইর সঙ্গে উত্তরবাংলার খনের গীনের একটি বিস্ময়কর স্বারূপ্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। মঞ্চে যখন কোনো অভিনেতার কোনো অভিনয় বা সংলাপ থাকে না, তখন পে মঞ্চের কেন্্রস্থলে বাচ্যযন্ত্রীদলের মধ্যে আদন নিয়ে কখনে! দোহার হিসেবে কোরাসে যোগ দেয়, কখনে। বা পড়ে-থাকা কোনে। যন্ত্র তুলে নিয়ে বাজাতে থাকে । আবার, অভিনয়ের প্রয়োজন পড়লে লাঁফিয়ে উঠে তার দায়িত্ব পালন করে। এ-ভাবেই উত্তরবাংলার লোকযাত্রা সারা ভারতের লোকযাত্রার অংশী হয়ে পড়ে। লেলীবকক দেক-চেজী ॥ পশ্চিম দিনাজপুব জেলায় দেবতাদের তুলনায় দেবীদের প্রাধান্য বেশি ।এএ জেলার জনজীবনে বন্ধ প্রাচীনকাল থেকে যারা যুক্ত, তাব! সম্প্রদায়গতভাবে পলিয়া ও দেশী বলে পরিচিত। এদের সামাজিক জীবনে একদা হয়তো পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের প্রাধান্য ছিল অধিকতর । আজও সমাজ জীবনেব খুটিনাটি দিকে লক্ষ্য করলে এই প্রাধান্য ছুলক্ষ নয়। বিশেষভাবে এই সমাজে প্রচলিত লোকগীতিগুলির মধো এই পবিচয় নিহিত। এ জেলার গ্রামে গ্রামে বুড়ী মা, বসন্ত ঠীকুরণ, বুড়াকাঁলী, সর্পকালী, মশানকালী ব্বমহিমায় বিরাজিতা। তাদের অপংখ্য থানে বিভিন্ন তিথি ( লৌকিক ) উপলক্ষে সাড়ম্বরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই বলে দেবতাদের সংখ্যাও অল্প নয়। কিন্তু দেবীর! দেবতাঁদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক বেশি এবং কালের বিচারে বেশ প্রাচীন | দ্বেব-দেবীদের নাম পরিচয় নিলেই একথ। বোঝা যাঁবে। এই জেলার সাংস্কৃতিক পরিচয়ে এই সাক্ষ্য মেলে ষে নান! ইতিহাসের স্রোত বয়ে গেছে এক উপর দিয়ে। তারই প্রভাব দেবদৈবীদের উপর পড়া স্বাভাবিক । বিশেষভাবে দেখা? যায় দেবদেবীদের পাশেই স্থান পেয়েছে- উই প্রাঃ চস সংখ্যাতীত পীর | যেমন মুশকিল আসান পীর, মুকছুম পীর তাঁজবাজপীর, একিন পীর, বুড়া পীর, জেঠা পীর, চেল পীর, বার পীর প্রভৃতি । এইসব পীরের ছারা এই অঞ্চলের হিম্ু মুদলমান উভয়েরই জন-জীবন অনেকখানি নিয়ন্ত্রিত ও নির্দিষ্ট । এই পীরের অনেক সেবায়েত মুসলমান পর্যন্ত নন। দেশী অথব! পলিয়া সম্প্রদায়ের কেউ। পীরের কাছে মানৎ কবে অভীষ্ট লাভ হলে ভক্ত পীরের দরগায় দ্বেন সিন্নি মাটির ঘোড়া । ঘোড1 মানাটাই চল বেশি। অধিকাংশ পীরেব থান গাছের নীচে । এ জেলার ধলদ্িঘির পীর খুবই বিখ্যাত। প্রতি বৎসর মাঘ মাসে ধলদিঘির পীরের উরস উৎসব হয়৷ এবারে কয়েকটি দেবদেবীব পরিচয় দেওয়া যাক । গঙ্গারামপুর থানার দেবীপুর গ্রামের খুব প্রাচীন এক লৌকিক দেবীর নাম বুডী মা। তিনি বয়সের ভারে ঝুঁকে পডেছেন। তার মাথার চুল পেকে শাদ। হয়ে গেছে কিন্ত গায়ের বড অতদী ফুলের মত। বুডী মা তক্তের সব দায়ভার নেন। এই দেবীর পুজ! প্রায় তিনশ বছরের পুরানো । প্রাচীন বটগাছের নীচে জীর্ণ খড়ের চালের তলে তার থান। এই থানের লাগোয়! দক্ষিণ দিকে একটি পুকুর। জ্ষ্ঠ মাসের কোন এক শুভ সোমবারে তার পৃজা! স্বর হয় । আর এক সোৌমবারে হয় শেষ। পুঁজোয় পায়রা বলি অবশ্ঠ প্রয়োজনীয় অঙ্গ । এর সেবয়েত স্থানীয় রাজবংশী সম্প্রদায়। পুজোর কদিন গ্রামেব কয়েকজন ভক্ত মুখোশ পরে নাচ ও গান করে বেডায়। এই পৃজে৷ উপলক্ষে গ্রামে একটি বড মেলাও বসে। এই জেলার বাগছুয়ার গ্রামে বুডিজাড়ি পাড়ায় আরও এক বুড়ি মার খোজ পাওয়া গেছে! তার গায়ের রঙ সাদা । পুজার সময় হল ছুপুর । এই দেবীর সেবায়েত পলিয়! সম্প্রদায়ভু্ত। পতিরাম গ্রামের এক জাগ্রত দেবীর নাম বসস্ত ঠাকুরণ। তার কোন মৃত্তি কল্পিত হয়নি। তীর থান একটি রক্তচন্দন গাছের নীচে। সেখানে একটি পাথর খণ্ডকে বসম্ত ঠাকুরণ রূপে পূজা করা হয়। এই পূজো প্রায় দেঁডশ বছরের পুরোনো বলে স্থানীয় লোকের ধারনা । তগন থানার অভিরামপুর গ্রামে চৈজ সংক্রান্তির দিন বুড়া কালীর পুঙ্গে! খুবই আকর্ষণীয় । এখন ৮৭ খানিকটা শাস্তীয় মু্তির ধাঁচে বুডাকাসীর মৃত্তি তৈরি হয়। কিন্তু স্থানীয় বৃদ্ধদের মতে মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে বুডা কালীব কোন মৃত্তি ছিল না। প্রাচীন বটগাছের নীচে কালো পাথরটিকে বুডাকালী রূপে পূজা করা হত। এই থানার তিলিঘাটা গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তির সাতদিন আগে থেকে গভীর! উৎসব আবন্ত হয। এই পূজা উত্সব প্রা ২৫ বছরের পুরোনো । এখানে দেবতা মশান ও দেবী ক্ষেত্রকানী। তাদের কোন মৃত্তি নেই, তবে থান আছে। গভীরা তলায বাজন]| বাজিযে দেব-দেবীদের জিযানো! হয়। তীদেব জিয়োনোর দুদিন পরে খুব ভোবে ক্ষেত্রকাঁলীর পুজো! কব! বিধেয় ৷ এইদিন ছুপুর বেল! অন্য এক থানে বুডাকালীর পৃজা হয এবং পরেব দিন বাত্রে গন্তীরা তলাষ শ্বশানকালীর পূজ প্রচলিত। এই পৃজোব জন্য গ্রামের কযেকটি বাড়ি থেকে ঢেকি কুলো লাঙল লাঙলেব ফাল প্রভৃতি চুরি কবে দেবীর থানে নিয়ে আসতে হয় । রাত্রি জাগার পর ভক্তরা মশান অর্থাৎ মৃত মানুষের মাথ! নিয়ে গ্রামের প্রতোক বাডিতে নৃত্য কবে বেডান। এইদিন বিকেলে মশান তলায় মশান ঠাকুরের পুজো হয। লক্ষণীয যে দেবী তখন দেবভায পরিণত হযে গেছেন। এই পুজোর অন্য নাম ভাসাঁন। এই পুজোয সকল গ্রামবাসী যোগ দেয়। তাঁদের মধ্যে সাঁওতাল ও ও রাও সম্প্রদীধের লোকেরাও আছেন। কালিষাগঞ্জ থানাব মোস্তাফানগর গ্রামে এক দেবীর পুজো হয। তাঁর নাম সাপকালী । এই কালীর মুক্তিতে শান্ত্রীয কালীর ছাপ আছে। কিন্তু তার পদতলে শিবের বদলে সফণী সাপ। এই রকম সাঁপকালীর আরো! খবর পাওয়! গেছে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায। এবার কয়েকজন দেবতার পরিচয় নেওয়া যাক। প্রথমে নাম করি মহারাজ- ঠাকুরের। তিনি কোথাও দ্বিভূজ, কোথাও চভূভূর্জ। ছিভৃজ মৃর্তিতে তিনি হাতির পিঠে উপবিষ্ট | এক হাতে তীর ব্রজ, অন্য হাতে ধানের মঞ্জরী। চতুতূ্জ মহারাজা বাঘের পিঠে আমীন। এই মহারাজা সকল দেবতার বাজা। তিনি হয়তো! ইন্ত্রদেব। কোন গ্রামে অহুখ বিস্খ দেখা দিলেই মহারাজ পূজোর আয়োজন হয়। বলাবাহুল্য, এসব পুজোয় ত্রাঙ্গণ পুরোহিত থাকে না। মাহাত বা ফকির বা দেশি মালাকার এর পুরোহিত । রায়গঞ্জ থানার ধুসমল গ্রামের এই পুজে! বেশ প্রোচীন। বংশীহারী থানার দৌলতপুর গ্রামের পরিচিত দেবতার নাম গ্রামবাবা। তিনি ৮৩ দেখতে অনেকটা বিষ্ুর মত। তবে তার ছুই হাত। প্রকাণ্ড গাছের নীচে লতা-পাতায় ঘেরা তার থান। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস ইনি গ্রামের রক্ষক । তার পুজে! করলে গ্রামে চোর ডাকাত আসতে পারে ন1। গ্রামের যে কোন বাড়িতে গাভী প্রসব করলে, সেই গাভীর প্রথম দিনের দুধ দিয়ে গ্রামবাবাকে চান করাতে হয়। প্রথম সন্তান হলে তার চুল বাবার কাছে উৎসর্গ করাটাই বিধি। ইসলামপুর মহকুমায় রহৎ্পুর গ্রামে চোর দেবতার পুজে| গ্রচলিত। কান্ডিক মাসের অমাবস্ত।য় কালীপুজোর বরাতে পুজাটির শুরু । এই দেবতার কোন মুর্তি নেই। ভক্তরা স্থানীয় মালাকাবের কাছ থেকে শোলার বীভৎস মুখোশ তৈরি করে মুখে পরে। তারপর তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করে। পুজোর নৈবেগ্ভ আলোচাল, ছুধ কলা গুড় ঘি প্রভৃতি আর বলি হল পায়রা । বৈরহাট্টরা গ্রামে কান্তিক মাসের শেষে বুড়ীকালীর পুজো হয়। কুলোর উপর তার মুখ আক] | আবার কাঠের উপর খোদাই করে তার ওপর শোলাঁর নকস! কেটে মুকুট বসিয়ে এবং শোলার জিহব৷ লাগিয়ে কয়েকটি মুখোশ তৈরি করে থান-তলায় রাখা হয়। এগুলি সবই বুড়ি কালী। এই বুড়িকালী বৈরহাট্টা গ্রাম ও তার পার্থব্তী সকল অঞ্চলের কল্যাণ সাধন করেন । এই কালী খুবই জাগ্রত বলে নকলের বিশ্বাস । করঞ্ধী গ্রামে ছাঁচিক! দেবীর পুজে! হয় প্রত্তি বসব মাঘধী পুণিমার দিন সকালে । গ্রামের মানুষের ধারণা, এই দেবী কুষ্টা হলে গ্রামে আগুন লাগে। গ্রামের সব ঘর পুড়ে যায়। তাই এই দেবীর আরেক নাম ঘরপুড়ি দেবী । এগুলি পঃ দিনাজপুর জেলার অসংখ্য দেবদেবীদের কয়েকটি নমুন! মান্র। সঙ্ঘবদ্ধভাবে ব্যপক অন্ুপন্ধান করলে এই জেলার দেবদেবীদের বিচিত্র ইতি- হাসের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। গ্রামে গ্রামে মৃতিহীন অনেক থান পড়ে আছে কিস্ত বিশেষ সময়ে সেই থানে স্থানীয় অধিবাসী! পুজোয় মেতে ওঠেন। আর স্থানীয়ভাবে নিশ্সিত হয় দেব বা দেবী, তা কখনো মাটির, কখনো! শোলার বা কাঠের । ৮ বোঁক্চল্া-কাতনহশ্ক্িচহান্ন ॥ আপনি যদি পশ্চিম দিনাজপুর জেলার গ্রামে কোন"“দেশী সম্প্রদায়ের বাড়িতে কখনো! গিয়ে উপস্থিত হন, তবে দেখবেন 'অতিথিবৎসল এই সম্প্রদায়ের বাড়ির লোকজন আপনাকে অভার্থনা করবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বেন । বাইরে দাড়িয়ে আপনাকে কথা বলতে হবে না, তারা সাদরে আপনাঁকে নিয়ে তুলবেন তাদের 'মাওুয়াঘরা” অর্থাৎ বৈঠকখানায়। আপনি ঘবে ঢুকে অবাক হয়ে যাবেন এরই মধ্যে তার! মাটির ধাপে অথবা বাঁশের মাচার ফালায় ( তকতোপোশ ) বিছিয়ে দিয়েছেন স্মৃ্ঠ মোটা সতবঞ্চি ও চাদর । এখানকার গ্রামের ভাষায় ধোকরা-ঝালং অথবা বিছান। ধোকরা৷ এবং ঝালং পাটের তৈয়ারী। আর স্থতোয় তৈয়ারী বিছাঁন। আপনি মাও্য়াঘরায় প্রবেশের সময় লক্ষ্য করেন নি দাওয়ার দিকে । লক্ষ্য করলেও পাশাপাশি ছুটো বাশের খুটি দেখে গুরুত্ব দেন নি কিছু। আসলে, ধোকরা ঝালং-বিছান বয়নের ওই ছুটিই মূল যাছুদও্ড। নাম তার তীঁতপোই । যদি একটু কৌতুহলী হন, তবে বাঁড়ির ভেতর গিয়ে দেখুন, একটু উকি মেরে স্ততপা ঘরার ( শোবার ঘর ) ধাপে (দাওয়ার ) ত্বাকান, সেখানে নিশ্চয়ই তাতপোই জোড়া আছে এবং তাতে চড়ে আছে কোন ধোকরা ঝালং বা বিছানের কোন ফাটি। অথবা নিজেদের পরিধেয় দোসতি ছেওটা (বস্ত্র )। এই দৌসতি ছেওট মেয়েদের লঙ্জ। নিবারণ করে, বুক চাকে কোমর ঢাকে আজান । তার নাম বুকানি বা 'কাঁপানি'। এরই এক ফাটি দিয়ে মেয়েরা সম্ভান পিঠে বেঁধে নেয়। তার নাম ফাটিয়া।, একেকটা তাঁতপোইতে মাত্র দেড় হাত চওড়া, সাড়ে চাঁর হাত থেকে পাঁচ হাত লম্বা! একট! ফাটি তৈয়ারী সম্তর্‌। চুই ফাটি জোড়! দিলে 'ছেওটা' । তিন ফাটি জোড়া দিলে তৈয়ারী হয় একেকটা ধোকরা, ঝাঁলং বা বিছান । এই তাঁতের শিল্পী দেশী সম্প্রদায়ের মেয়েরা । যদি তার! দৈহিক লম্বা হতো৷ আরে! কিছু বেশি, তবে ফাটি লম্বায় বাড়ত আন্থ্যায়ী। এই ফাটি দিয়ে তৈয়ারী হয় এ অঞ্চলের হাতঝোলা, কাধঝোলা। বল] যেতে পাকে এর নাম দিনাজপুরী ঝোল]। এখন স্থুতোকলের কল্যাণে ঘরের ধাপিতে তাতপোইতে চড়ছে নানা ফাটি। গায়ের জন্য চাদর । পরনের জন্য দোসতি ছেওটা । কাচুয়া ছুয় (বাচ্চা ছেলে-মেয়ে) পিঠে বাঁধার জন্য ফাটিয়া আঁর ফাল!র ( তকতোপোশ ) জন্য বিছান। স্থতো কলের স্থতো৷ কেন, তুলোজাত কোন স্থতোই আগে এ অঞ্চলে আমদানী হত না। তখন চলত কি করে? কেন, জমিনে হেউতি € হৈমন্তী ) পাটা আছে না ! তার গ! থেকে সযত্বে ছাল বা খোয়া ছাড়িয়ে নেওয়] হত। তাই দিয়ে তাকুবের সাহায্যে তৈয়ারী হতো যে পাটা স্থতো, সেই স্থত৷ চড়তে ভাতপোইতে। বেরিয়ে আসত পাটের স্থতোর ফাটিয়া! দোসতি ছেওটা, আর ধোকরা । পরে, হেউতি পাটার অভাব হল ) এল, নান! বিদেশী পাটা । আর সেই সঙ্গে এল হাট-গঞ্জে কলের স্থতো৷ । তখনে। ফান্তনে শিমূলগাছ লালে লাল আর চচত্র গায়ের মাঠ পথ সাদা করে ঝরতো শিমুল তুলো । সেকালে কেউ এর 'দিকে ফিরে চায়নি । একালেও তেমন নয়। পাটার ছাল থেকে স্থতো তৈয়ারীর সেই সাবেকী পদ্ধতিটা একালেও রয়ে গেছে। রয়ে গেছে তাতপোই থেকে ধোকরা ঝালং, বিছানের অপুর্ব বয়ন- কৌশল। এই কৌশল শিক্ষিত বহিরাগতদের কাছেও খুবই কৌতুহলজনক। স্বাধীনতার পরে এক জেলাশাসক ও তার স্ত্রী টুঙ্গুল গ্রামের হরেন দেবশর্মার ম! কান্দেরী দেবীর কাছে জানতে চাইলেন এর বয়ন পদ্ধতি। জেলাশাসকপত্বী বালুরঘাটে তাঁর বাংলোয় নিয়ে রাখলেন কয়েক মাস কান্দেরী দেবীকে, কিন্তু শত চেষ্টায় নাকি জেলাশাসকপত্বীর আয়ত্তে এল না সে পদ্ধতি । বৃদ্ধ কান্দেরী দেবশর্মার গর্ব সেখানেই । জলে তেজা পাট থেকে ছাল ছাড়িয়ে ছালের আশ বা এদের ভাষায় খোয়া- গুলোকে এমনভাবে চিরে চিরে লাছি ট্য়ারী করতে হয়, ঠিক ষেভাবে মেয়েরা চুলের জটা ছাড়িয়ে খোঁপা বাধে আলগোছে। পাটের গোড়ার দিকে আশ- গুলোকে বলা হয় ফোতো। আর মাথার দিকের খোয়া ব1 আশকে বলে পাইন। স্বাভাবিকভাবেই, গোড়ার দিকে ফোতো হয় মোটা । ফলে এর ৮৬ স্থতো হয় মোটা । আর পাইন-এর খোয়! হয় সরু । সব খোয়ার লাছি (নছো) থেকেই তাকুরের সাহায্যে তৈয়ারী হয় স্থতো। লাছিবাবড় জোর স্থতে৷ তৈয়ারী পর্ধস্ত পুরুষের কাজ । কিন্তু তাতপোইতে তাত বোনা একমাত্র মেয়েদেরই ব্যাপার । পুরুষের ধোকড়া বোনা নিষিদ্ধ | ঝাঁলং বোনার জন্য প্রয়োজন হয় রভীন সরু স্থতো আর ধোকরার জন্য মোটা । ঝালং হবে রভ্ভীন, আর বাহারী নকসায় ভরপুর। ধোকরা পাটের মূল রঙ নিয়েই তৈয়ারী। সাদামাটা । তাই মোটা ধোকরা গ্রামের মানুষেরা পেতে দেন কঠিন মেঝেতে অথবা বীশের মাচার তকতোপোশে। উঠোনে বিছিয়ে স্তকুতে দেন ধান কলাই নান] শস্ত। এমন কি ধোকবার বস্তায় তার] ধান গম কলাই লঙ্ক! হাটে নিয়ে যান বেচতে । তাছাড়া, মোটা! ধোকরা গরীব মানুষের দারুণ 'জাব' বা শীতের বন্ধু। তাই, ধোকরার ব্যবহার তাদের কাছে শখ শৌখিনতার নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় । কিন্তু, বরণীন সোহাগী ঝাঁলং বা বিছানের ব্যবহার কালেভদ্রে--অতিথিঃআপ্যায়নে, বিয়ে-পার্বনে | ঝালং বোনা শ্রম ও বায়সাধা | তাই, এর বয়ন হাত গুণতি। ইদানীং হাটে হাটে বুতীন ধোকবা উঠছে। শহুবে শিক্ষিত জনের হাতে বডীন ধোকরা একবাব এলে, সে তার কর্দর না করে পারে না। তার প্রধান কারণ, স্থতো! তৈয়াবী থেকে বোনার গুণে এই ধোঁকর1 তেমন খসখসে নয়__বরং মোলায়েম আর আটোর্সাটে1, টেকসই । যত্ব কবে রাখতে পারলে ১০১৫ বছরেও এর গুণ নষ্ট হয়না । তাছাড়া, নকসাকাট। রবীন হওয়ায় দেখতেও বেশ আর দামেও শস্তা। এক সময় এই স্থতো রাঙানোর জন্ত বয়নকারিণী মেয়েরা বাজারের রঙের ওপর শ" এ অঞ্চলে প্রচলিত একটি প্রবাদ থেকে জানা যায় যে যদি কোনো পুরুষ ধোকবা বোনে তবে সে তার পুরুষত হারায়। এর মধ্যে সম্ভবতঃ একটা তাৎ্পর্য আছে। দেশী সম্প্রদায় আদিতে মাতৃশাসিত সমাজের অন্তর্গত ছিল। কিন্ত, আজ আর তানয়। তবু, এই সম্প্রদায়ের মেয়েরা এখনো! বেশ কিছু স্বাধীনতা বজায় রেখেছেন। তীবা ছাগল হীস প্রভৃতি জীব্জন্ত পালন ও বিক্রি করেন। সর্বোপরি ধোকরা বুনে ও তা নিজেরা হাটে হাটে বিক্রি করে তারা সামান্ত কিছু আঘধিক স্বাধীনতা এখনো রক্ষা করে চলেছেন । সম্ভবতঃ ওই প্রবাদটি তাদের এই আর্ধিক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। ৮৭ নির্ভর করতেন না। গ্রামেই আছে বসত বৈর, জিয়া বা আমের গাছ। জিয়া! ফল থেকে এরা নেন লাল, বসতবৈর থেকে খয়েরী, আর আমের কুসি থেকে কালো । ভালোভাবে দেদ্ধ করলেই এসব রঙগুলে বেরিয়ে আসে। এ বুঙ সহজে ওঠে না। এখন কে করে অত পরিশ্রম । কাজ-কামও গেছে বেড়ে আর পয়সা ফেললেই হাতের কাছে মেলে হরেক রঙ। সাডে চার হাত চওডা আর পাঁচ হাত লম্বা রীন ধোকরা! হাটে হাঁটে বিকোয় বারো থেকে আঠাবো টাকার মধ্যে ।৭ ঝালং কচিৎ্, কদাচিৎ মেলে । পাটের দাম চডলে, ধোকরার দামও হয় চড়া । আড়াই সের পাট লাঁগে তিন ফাটির একটি ধোকারায়। ১৯৭৭ সালে গেছে পাটের মন একশ টাকা । তাহলে, হিসেবে দীড়ায় ছণটাঁকা পঁচিশ পয়সার পাট লাগে একটি তিন ফাটির ধোঁকরায়। অথচ, নামমাত্র মজুরী যুকত হয়ে হাটে বিক্রী হয় তা। এর বয়ন-পদ্ধতি এবং তার শ্রম বিচাব ক্লে অবাক হতে হয় শ্রমের তুলনায় মজুরী এখনো কত কম এদের কাছে। সারাদিন খেটে বড়জোর একটি পূর্ণাঙ্গ ধোকরার সাড়ে চার হাত-পাঁচ হাত মাত্র ছুটি ফাটি বোনা যায়। তারপব জোড়াবান্ধা এ সব আছে । ঝালং এর এক ফাটি বুনতেই লেগে যাবে সারাদিন । এত পরিশ্রমের মূলা দেবে কে? তাই, ঝালং বোনা হয় না বড়। এগুলো সবই মেয়েরা বোনেন, হাঁটে হাঁটে বিক্রী করেন তারাই । গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখেছি, ধোকারা, ঝালং বিছান মেয়েদের অবসর বিনোদনের কর্ম । যেমন শহুরে শিক্ষিত! মেয়ের বোনেন উলের সোয়েটার । পশ্চিম দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ মহকুমার হাটগুলিতে ধোকরা ঝাঁলং বিছান পাওয়া যায় বেশি। যেমন বংশীহারী থানার সরাই, ইটাহার থানার পতিরাজ আর কালিয়াগঞ্জের ধনকৈল। এই অঞ্চলের গ্রামগুলিতে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার স্থযোগে দেখেছি ধোকরা৷ ঝাঁলং বিছান তৈয়ারীর কৌতু- হলোদ্পিপক পদ্ধতি । দুটি বাঁশের খুটি ধাপের (বারান্দায়) উপর ছু হাত বাবধানে পাশাপাশি মাটিতে পৌতা। ওই খুটি ছুটির সঙ্গে একটি! বাঁশ মাটির সঙ্গে সমাস্তরালভাবে ৮৮ বাধা । তাঁর নাম তাছল!। তার থাকবে একটি উপর কাঠি, তার নীচে যে বাশের কাঠি থাকবে বাঁধা তার নাম দণ্ডর কাঠি। এবার নীচে পরপর যে কাঠিগুলে! থাকবে সেগুলোর নাম যথাক্রমে জলোকাঠি, পিপড়ি কাঠি, কপনি কাঠি। এগুলো! সবই বাঁধা থাকবে টান! সুতোর ভাজে ভাজে । প্রথমে স্থতো টান পড়বে কপনি কাঠির সঙ্গে । কপনি আবার টান! থাকবে ছোট ছোট দুই খোটা দিয়ে। এরই নাম টানো। তাকুর থেকে স্থতো যখন মাকুতে যাবে তখন তাঁর নাম কাণ্ড । এইসব অংশের সাহাযো ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হবে দেড় হাত চওড়া আর পাঁচ হাত নাম্বা (লম্বা) ফাটি, যখন চাওড়া (চওড়া) হবে ফাটি, তখন তার নাম হবে পেটোয়ান। পেটোয়ানের সময় যত নকসার কাজ । টানো হবে মোটা স্থতোয় আর পেটোয়ানের হবে সরু । মোটা তো গেঁথে নিতে গেলে একটা আলগা! মোটা ও চওড়া! লাঠি দরকার । তার একধার অর্ধচন্দ্রকার। তার নাম বেওন। আর সরু স্থতো গাঁথার সময় দরকার সরু কাঁঠি। তার নাম অলানি। নান1 কাঠির ফাঁকে ফাকে টানা স্থতোর সময় বেওন দিয়ে বোনা-গাথা শকত করে তুলতে হয় । অলানি দিয়ে পেটোয়ান গাঁথা মজবুত করা! প্রয়োজন | নয়তো স্থতো কোথাও আলগা হয়ে থাকতে পারে । ফলে, শিথিল হয়ে পড়বে বোনা । বয়নকারিণী যে দড়ি দিয়ে ( মোটা শকত ও ঘন জালেব মতো! দেখতে ) নিজের কোমরের পশ্চাৎ অংশ বেঁধে বোনার কাজ করেন তার নাম নেত্ত,রং । টানো স্থতো প্রথমে তাছলাকে ঘিরে একভাগ উপরিকাঠির নীচে দিয়ে দণ্ডর কাঠির উপব দিয়ে জালোকাঠি আড়াআড়িভাবে ডিঙ্গিয়ে পিপড়ি কাঠির উপর দিয়ে দণ্তর কাঠি জালে! কাঠির নীচ দিয়ে যাবে। আরেকভাগ, উপরি কাঠির উপর দিয়ে দণ্ডর কাঁঠি জালে! কাঠির নীচ দিয়ে যাবে। আরেক ভাগ, উপরি কাঠির উপর দিয়ে দণ্ডর কাঠি জালে! কাঠির নীচ দিয়ে গিয়ে আড়াআড়িভাবে পিপড়ি কাঠির নীচ দ্বিয়ে কপনি কাঠির উপর দিয়ে ঘাবে। এই জটিল টানা পোড়েনের মধা দিয়ে গড়ে উঠবে দেড় হাত চওড়া আঁর পাঁচ হাঁত লম্বা! একেকটা ফ্লাটি। আর এই ফাটির তিনটি জুড়ে তৈয়ারী হবে পূর্ণাঙ্গ একটি ধোকরা। চাকচন্জ্র সান্তাল তীর রাজবংশীস অব নর্থ বেঙ্গল গ্রন্থে অবশ্ত ধোকরাঁর বয়ন পদ্ধতির বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু সে বিবরণ যেহেতু শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি অঞ্চলে তীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখিত, তাই পশ্চিম দিনাজপুরে ৮৪ অঞ্চলের সঙ্গে বন্থবিধ পার্থক্য বিচ্যমান । মনে রাখাতে হবে, দেশী সম্প্রদায়ের সঙ্গে রাজবংশী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বিষয়ে নান! পার্থকা আছে-__যদিও হয়তো! মূলে একই জনগোষ্ঠী থেকে উভয়ের জন্ম । এই জেলার “পলি' সম্প্রদায় নিজেরা খুব বেশি এই ধোকরা তৈয়াঁরী করেন না। দেশী সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের বাড়িতে এই শিল্প চর্চা আছে। মূলতঃ নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি রোজগারের আশায় মেয়েরা হাঁটে হাটে বিক্রী করতে নিয়ে আসেন। এবং এই ধোকরা বিক্রীর টাকা নিজেদেব কাছেই গচ.ছিত রাখেন । বাড়িব মেয়েরা এইগুলিব মাধামে তাই আর্থিকক্ষেত্রে স্বয়ংভ্তরও বটে । কিন্ত, ছুঃখের বিষয় এমন একটি অপাধারণ শিল্প যা শুধুমাত্র দেখতে স্থুচারু নয়, কাজের উপযোগী টেকসই বটে তা! প্রচারেব অভাবে এই জেলার কয়েকটি হাঁটেব মধ্যে সীমিত হয়ে আছে। পুনশ্চ | এই 'ধোকবা' আমার নজরে প্রথম আসে ১৯৭০ সালে বাঘন গ্রাম ( থান কাপিয়াগঞ্জ ) নিবাসী পবিত্র দেব বাড়িতে । তাঁর মেয়ে আমার ছাত্রী বস্থমতী এ সম্পর্কে কিছু তথ্য আমাকে জানায় ১৯২২ সালে। তারপরেই ধোকরা সম্পর্কে আমার আগ্রহ বাডে। এ জেলায় কলকাঁতা৷ থেকে নানা সময়ে আগত পরিচিত কবি সাহিত্যিকদের ধোকরা উপহার দিয়েছি। কিন্ত ধোকরা প্রচার পায়নি। ১৯২২ সাল নাগাদ বুনিয়াঁদপুরে ধোকরা সমবায় সমিতি তৈয়ারি হয়। ডাঃ জয়নাল আবেদীনের চেষ্টায় খাদি গ্রামোস্ঠোগে কিছু ধোকরা বিক্রীর জন্যে আসে। কিন্তু তা সত্বেও ধোকর! বছল প্রচারিত হয়নি । ফলে, ধোকরার দাম উঠল না। ১৯২২ সালে, পতিরাঁজ হাটে রডীন ধোকরা ঝাঁলঙের গড় দাম ১* থেকে ১২ টাকা । ১৯২২ সালে ১১ থেকে ১৪ টাকা । ১৯২২ সালে ১১ থেকে ১৫ টাক।। ১৯২২ সালে ১২ থেকে ১৮ টাকা । ১৯২২-এর ডিসেম্বরে কলকাতায় জনমেল! ৭৮ এ কুশমণ্ী থানার ক্ষয়ানগর গ্রামের অজিত সরকার, লক্ষ্মণ সরকার, দেবেন দেবশর্মা, মাস্তাবালা এবং দিনোর সাপাড়া গ্রামের মলিন সরকারকে দিয়ে পশ্চিম দিনাজপুরের হস্তশিল্প নামে প্রধানতঃ ধোকরার একটি প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করি। দুরদর্শন, আকাশবাণী এর প্রচারে এগিয়ে এলেন। বিশেষভাবে দুরদর্শনে ধোকরানহ শিল্পীদের সাক্ষাত্কার নিঃসন্দেহে এর প্রচারের ব্যাপারে স্মরণীয় ঘটনা ॥ এ-ব্যাপারে স্বপন রায়চৌধুরী, অলোক সেন, শরিষ্টা দাশগুপ্ত, পদ্কজ সাহা,. সাংবাদিক প্রণবেশ চক্রবর্তীর অবদান অবিস্মরণীয় । ষুগাস্তর পত্রিকার সাংবাদিক অমিতাভ চক্রবর্তী, ভূমিলক্ষ্মী পত্বিকার সম্পাদক শাস্তিকমার মিত্র এবং বস্থমতী পত্রিকার দেবব্রত ভট্টাচার্যও এর প্রচারে যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছেন। কিন্তু ধোকরা শিল্পীদের তখনও কেউ সংঘবদ্ধ করেন নি। তাই কিছু প্রচার পেলেও সেই সময় বিদেশের বাজার পাবার সুযোগ হাতের কাছে এসেও নষ্ট হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পশ্চিম দিনাজপুর জেলা শিল্পকেন্দ্রকে ধোঁকরা বিষয়ে আগ্রহী হতে দেখা গেল। ধীরে ধীরে গ্রাম পঞ্চায়েত, বিশেষতঃ কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত, সমিতি স্টেট ব্যাঙ্ক ইত্যাদির মাধ্যমে ধোকরা শিল্পীরা সজ্ঘবদ্ধ হ'তে শুরু করেছেন । রাজ্য সরকার ধোকরা! শিল্প বিকাশে ও প্রসারে স্বনিদ্দিষ্ট পরিকল্পন। নিয়ে এগিয়ে এসেছেন । “উত্তরবঙ্গ লোকযান” তার সীমিত সাধ্যে ধোকরার প্রচার ও বাজার স্থ্টির কাঁজ করে চলেছেন । ১৯২২ সালের রাজাকাকশিল্প প্রতিযোগিতায় ধোকর! কার্পেট হিসেবে দ্বিতীয়স্থান অধিকার করেছে । তবুও ১৯২২ সালের মার্চ মাসে পতিরাজ ও সরাই হাটে' একটি উৎকৃষ্ট বড় ধোকরার দাম মাত্র ২২ টাঁক1। ৪১ বুুনোল্ হাউ পাড়ান্র ম্বতু্পিক্লী ॥ গায়ের নাম কুনোর হাটপাডা। জেল! পশ্চিম দিনাজপুর | থানা কাঁলিয়াগঞ্জ । এই গাঁয়েই বসতি নাইলু রায়, লক্মীকাস্ত রায়, হেমেন রায়, গণেশ রায়, কাল্টু রায় গ্রভৃতি মৃৎশিল্পীদের | এরা উত্তরবঙ্গের প্রাচীন পলিয়া জনজাতির অস্তভুক্ত। বর্তমানে তফসিলী। হাঁটপাড়ার ১৬ ঘর বাসিন্দারা হাটে হাটে ঘুরে তাদের সাবেকরীতির তৈরি মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করে। এটাই তাদের প্রধান জীবিকা । সম্ভবত সেই কারণেই সড়কের ধারে এই গাঁয়ের নাম কূনোর হাটপাড়া। সেই কবে থেকে পুরুষ পরম্পরায় ওরা মেয়ে-পুরুষে এখানে বাস করছে তা তারা জানে না। শুধু জানে বাঁপ, ঠাকরদারও আগেকার বহুদিনের এই বাস, এই কাজ। মাটি ছেনে চাকে-পনিতে চড়িয়ে গড়ে তুলছে হাঁড়ি, পাঁতিল, মাটির নানা ভাড। সেই সঙ্গে গডে তুলছে পীরের ঘোড়া, হাঁতি, তেল রাখার নানা আকারের পাক্জ, ধুপদ্ান, প্রদীপ প্রভৃতি । এসব জিনিসের প্রত্যেকটির আলাদ! আলাদা নাম দিয়েছে তাঁরা নিজের ভাষায় । যেমন, তেলের ভাড়ের ছুই ধরণ। একটির নাম পেচি। অন্যটির নাম ঠেকি। পেচি অনেকটা কুঁজোর মতো দেখতে হলেও শিল্প সৌকর্ধে অপূর্ব। জঅমস্তই পোৌড়। মাটির এবং তুষের ধোঁয়ায় তার কালো রূপ। ঠেকি দেখতে হাঁড়ির মতো। টেরাকোটার ছোয়া রয়েছে তাতে। হাটপাড়ার ১৬ ঘর পলিয়া কুমোরদের অধিকাংশেরই প্রধান জীবিকাস্থল ছু; মাইল দুরে কালিয়াগঞ্জের ধনকোল হাট। সপ্তাহাস্তে প্রত্যেকের ২০/১২ টাকার জিনিস বিক্রি হয় সেখানে । সেহাটে ভিড় হয় প্রধানত সাধারণ চাষীদের আর ব্যাপারীদের | সেখানে চাষীরা পীরের ঘোড়া কেনে মানত দেবার জন্য আর রান্নাঘরে তেল রাখার জন্য পেচি ঠেকি। বিয়ে বা পার্বণ হলে বিক্রি হয় সব জিনিসই দেদার । হাটপাঁড়ায় তখন আসে একটু উল্লান। নয়তো অধিকাংশ হাটেই তারা মালপত্র বাকে ভর্তি করে নিয়ে যায় আর ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তাই হাটপাড়ায় দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী । অথচ শিল্পরসিকজনের নজরে পড়লে হাট-পাঁড়ার শিল্পীদের তৈরি পোড়া মাঁটির ঘোড়া, পেচি ঠেকি, ধুপদীন, কূপী, ঘরে ঘরে শোভা পেত। শোভা পেত তাদের তৈরি আদিম রীতির পুতুলগুলি। বৃদ্ধ গবেষক পবিত্র দে-ই সম্ভবত প্রথম এই শিল্পের গুরুত্ব অনুভব করেন । আমার মনে পড়ে, বাঘন গাঁয়ে ( থানা কালিয়াগঞ্জ ) তার বাড়িতে আজ থেকে বছর বারো আগে এ অঞ্চলের লোক-শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ে কথ! প্রসঙ্গে তিনি কুনোরের শিল্পীদের প্রশংসা করছিলেন । আমার আগ্রহ সেখানেই প্রথম জাগে । তার মেয়ে বস্থমতী দে ১৯২২ সালে সাহিত্িক-সাংবার্দিক সম্তোষকুমীর ঘোষকে এক জোড়া পীরের ঘোড়া, তেলের পেচি-ঠেকি উপহার দেয়। সন্ভৌষকুমারের দামী ড্ইংরুমে রাশিয়ার লোকশিল্লের পাশে আজও তা দিব্যি শোভ। পাচ্ছে। ১৯২২ সালে কলকাতার জনমেলায়' আমি কয়েকজন গ্রামবাসীর সহায়তায় এসব শিল্পসভ্ভার সর্বপ্রথম উপস্থিত করি। সাংবাদিকদের নজর পড়ে । একজন তো! বললেন, 'বাকুড়ার সতীন কলকাতায় এসেছে' ৷ দৃরদর্শনের মাধ্যমে কনোর হাঁটপাড়ার শিল্পসন্তার দেখানো! হলো | এরপর পশ্চিম দিনাজপুর জেলার শিল্পকেন্দ্রের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার সত্যেন মিত্রর এদ্দিকে নজর এলো । তিনি শিল্পীদের উৎসাহ দিতে শ্তরু করলেন । শির্পসম্ভার বিশেষভাবে ঘোড়া, হাতি, পুতুল বরাত দিয়ে শিল্পকেন্দ্রে আনালেন । জেল! প্রতিযোগিতায় লক্ষ্মীকান্ত রায়, নাইলু রায় পুরস্কৃত হলো । গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সজ্বের জেল! সম্মেলনে কাকশ্শিজল্পর স্টল থেকে এসব জিনিস বিক্রি হলে! । ববীন্দ্রভবন সম্পাদক অধ্যাপক জ্যোৎস্না কুমার সেন রবীন্দ্রনাথের এক জন্মদিনে কুনোর হাটপাড়ায় মৃৎ্শিল্পীদের সম্বর্ধন! দিয়ে সন্মান জানালেন । শিল্পীরা এতে উৎসাহিত সন্দেহ নেই, কিন্তু তাদের উৎসাহে জোয়ার আসে শিল্পত্রব্য বিক্রি হ'লে। ৯৩ বাজার এখনো সীমিত। প্রচার নেই কোনে! ৷ জেল শিল্পকেন্দ্রের বিপনন ব্যবস্থা কমজোরী | একমাত্র উত্তরবঙ্গ লোকযান অনিয়মিত সীমিত ও বিপনন ব্যবস্থায় কলকাতার কয়েকটি মেলার মাধ্যমে কুনোর হাটপাড়ার যাবতীয় পোড়ামাটির শিল্পসম্ভার বিক্রি করেছে। ক্রাফটস কাউন্সিলের সম্পার্দিক1 কৰি পাঁল চৌধুরী, শিল্পী প্রভাস সেন এদের শিল্পত্রব্যগুলোর সমাদর করেছেন। তারা লগুনের মেলায় এসব জিনিস বিক্রি করেছেন । এই শিল্পীরা এখনে! অসংগঠিত । অধিকাংশই নিরক্ষর এবং দারিপ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। সরকারী সহায়তা ব্যাঙ্কের সাহায্য এসব পাওয়ার জন্য যে নেতৃত দরকার এখনে! সেসব তাঁদের ভাগো জোটেনি । তাই তাদের ধনকোল ও আশেপাশের হাটের সীমাবদ্ধ চাহিদার উপর নির্ভর ক'রে এইসব জিনিস তৈয়াবী ক'রে যেতে হয়। অর্থাৎ সপ্তাহাস্তে তাদের আয় এখন ২* থেকে ৩০ টাকা । কুনোর হাটপাড়ায় মাঝে মাঝে গিয়েছি । ধাপিতে বসে কাজ দেখেছি সাতো, ঢাকো নামের মহিল1 শিল্পীদের । ওব1 গুণ গুণ ক'রে গান গাইতে গাইতে তৈয়ারী করে ভ্রতহাতে মাটির চেবাগপ্রদীপ। ওদিকে লক্ষ্মী রায় রোদ্দ,রে শুকুতে দেয় পীরের ঘোডা | ওদের গায়ে ঘরে ঘরে ঘুরে ঘুরে দেখেছি পনিতে চড়িয়ে কিভাবে তৈয়ারী ক'রে এসব। বাঁশের ঠাচি দিয়ে কি যাছুতে মস্থণ ক'রে টেরাকোটার সুক্্ম আঠড় দেয়, ধীরে ধীরে লাল অথবা চকচকে কালো। রঙে সেজে মাটির জিনিসগুলো শিল্প হয়ে ওঠে ! .নবান্নের সময় এক আটিও খড় দেখিনি ওদের কারো উঠোনে বা ঘরের চালে । রে, তলজ্গান্ল হাটে জম্িলগান্রী ॥ রায়গঞ্জ থেকে বালুরঘাটের পথে প্রতি সোমবার সবকটা বাস ভিডে ভিড | টাঁকসি, মিনি, লরি সবই এখানে এসে লোক উগবে দিচ্ছে। কালিয়াগঞ্জের সব দৌকানই এদিন খোলা" মাছির মতো খদ্দের তনভন করছে। কাতারে কাতারে সব লোক বেন লাইন পেরিয়ে থান! ডানপাশে রেখে চলেছে । রিকসার রেট এদিন বেশি । সারি সারি গরুর গাঁডি পথের এপাশে ওপাশে । উ্রাফিক জ্যাম। কুঠি যাছেন তমরা ? কেনং। ধনকুল। আজ হাট ছে। আশেপাশের গায়ে ছেলেবুড়ো বাদে জোয়ান মর্দ বেচিছুয়া কারো দেখা পাওয়া ভার। চারপাশের সব গ! ঘর সোমবার মিলেছে ওই ধনকৈলে। অমুক সরকারের দেখ! পাওয়! দায়। সোমবার ধনকৈলে এসে খোঁজ করুন পেয়ে যাবেন। অমুক মাস্টারের বড়ো! অন্থখ, কর্দিন বিছান! ছেড়ে উঠতেই পারেন না। কিন্তু সোমবার তার বাড়িতে যান, দেখবেন তার বিছানা তোলা । তিনি টুকটুক করে হাটে এসেছেন। কালিয়াগঞ্জে সোমবার সব ইস্কুল ছুটি। ববিবার খোল! । সরকারী অফিসও বন্ধ রাখতে পারলে ভাল হত। তবে, সে বন্ধেরই সামিল। লোকজনের দেখা পাওয়া ওইদিন বড়ো মুশকিল । সোমবার মানেই কালিয়াগঞ্জের বাজার জমজমাট | ছোট্ট শহরটা লোকে লোকে ভরে যাঁয়। মিটারগেজের রাধিকাপুর-বারসোইর ট্রেনে ওঠে কার সাধ্যি। উত্তরবঙ্গের প্রখ্যাত হাট এই ধনকৈল। যেখানে এলে ধনশালী হওয়! যায়। নাম শুনে অনেকে ধারণ! করেন এইরকম । কিংবদস্তীও সব তৈরি হয়েছে হরেক রকম । কে চিনত মশাই ওই শৈলেন সেনকে ! বয়রাকালীর দুয়ারে হতা! দিয়ে পড়েছিলেন । মায়ের আদেশে এলেন ধন-কুলের হাটে লঙ্কা কিনতে । লক্ষপতি হলেন তিনি দেখতে দেখতে | স্কুলের ভূগোল বইতে লেখ। কালিয়াগঞ্জের লঙ্কা বিখ্যাত। কে জানত মশাই ধনকৈল ন] থাকলে ! থোড়াই কালিয়াগঞ্জের লঙ্কা বিখাত ! আসে তে সব কুশমণ্তী এলাকা থেকে | ধনকৈল যে কালিয়াগঞ্জে । সেই গঞ্টাঁও তো সাবেক- আমল থেকেই বেশ বড়লড়। হাট কালিয়াগঞ্জ বুকানন সায়েব তার বইতেও উল্লেখ করে গেছেন । কিন্তু ধনকৈলের নাম তখন ছিল না। আসলে এই হাটখান তো! হাল আমলের । হ্যা, সাবেককালের হাটের নাম শুনতে চান ! ওই তো] ইটাহার থানার পতিরাজ । এখনও মরে যায়নি । যে-কোন রবিবার গিয়ে দেখুন । তেজী হাট। পাটের মরস্তরমে জে সি আই তার দলবল নিয়ে ওখানে পাট কেনার জন্যে ধরন] দিয়ে বসে থাকে ফি রবিবার | পতিরাজ হাট ভূপাঁলপুরের রায়চৌধুরীদের এক্তিয়ারে। আর ধনকৈল হাটে চাঁরভাগের জমিদারী | রমেত্্ররুষ্ণ, গোপেন্ত্ররুষ্ণ রায় চৌধুরী, শাস্তিলতা আর বীঘিকা ভৌমিকের যথাক্রমে পৌণে পাঁচ আনা, পৌণে পাচ আনা, এক পিকি আর দশ পয়সার 'জমিদারী' বহাল তবিয়তে অটুট । সরকার একবার নাক গলাতে চেয়েছিলেন ওই জমিদারীতে। ধর্মাধিকরণের আদেশে তা নাকচ হয়। বাৎসরিক কৌটি টাকার লেন-দেনের ক্ষেত্রে তোলার অধিকার অটুট। “ছিরামতী' নদীর ধারে প্রতি সোমবার বসে এই হাট । প্রতি সোমবার হাঁজার- হাজার টাকার লেনদেন চলে এখানে । বছরের হিসেবে প্রায় কোটি টাকা । কত ফকির এখানে বাদশা বনেছে, কিন্ত কোন বাদশা এখানে ফকির হয়েছে» ৪৬ এমন খবর নেই (যদিও সা খেলার আসরের অভাব নেই এখানে)। তাই, এ হাট সার্থকনামা | ফান্ধন, চৈত্র, বৈশাখে-_লালে লাল এই হাট, হাট-এলাকা । টকটকে লাল স্ককনে লঙ্কার মরশুম। জ্োষ্ঠ থেকেই ভরে ভাটা । লাল ফিকে হতে থাকে । ওই তিনমাস লঙ্কার ঝাঁঝে বাতাস হয় ঝাজালে। | পেঁয়াজ পাটের মরশুমেও এ হাটের রবরবা । রবরবা ধান-কলাই অন্তান্ট রবি- শন্তে। এই সঙ্গে বারোমাস বসে বিধিমতো! গবাদি পশ্ত, হীস, মুরগী, খাসি, পাঠা, ছাগল। সেইসঙ্গে বসে চামড়া, জুতো, মাঁটির হাঁড়ি কলসী, কড়াই, লোহ।, কাসা, কাপড় চোপড় কি না। বছরের বিক্রিবাট্টার হিসেব নেওয়া গেলে দেখা যাবে সারা বছর কেমন তেজী এই হাট । “মন্দা” কথাটি যেন এর খাতায় লেখা নেই। আঘধিক বছর হিসেবে বিগত ১৯৭৬-৭৭ সাল বিক্রি হয়েছে এই রকম-_ ধান ১২ হাজার কুইণ্টাল | মূলা £ ১১১৪০,০০০ টাক1। পাট ৬,৯৪০ কুইণ্টাল। মূল্য £ ১০,৪১,০০০ টাকা । লঙ্কা ৪,০৪০ কুইণ্টাল। মূল্য £ ২৬,২৬,০০০ টাঁকা। পেঁয়াজ ১১৫০০ কুইন্টাল। মুল্য £ ৫,৭৫,০০০ টাঁকা। আলু ১০,০০০ কুইণ্টাল। মুলা £ ৬১৫ ০,০০০ টাকা! ৃ এছাড়া গরু, মোষ, ছাগলের চামড়া যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে তার আর্থিক মূলা প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা। চল্লিশ হাজার গবাদি পশু বিক্রির মোট দাম প্রায় ১৫ লাখ টাকা । হাঁস, মুরগী, খাসি, ছাগল, পাঠা বিক্রি হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার। এর আধিক মূল্য হল ২ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা । এ সবের মোট হিসেব করলে প্রায় কোটি টাকার পণ্য ৭৬-৭৭ সালে বিক্রি হয়েছে । এই হিসেবের মধ্যে শাড়ি-কাঁপড়-চোঁপড়, ডাল গম ইত্যাদি হরেক রকম পণ্য বাদ । সে সবের হিসেব নিলে আরে] কয়েক লাখ টাকা এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যাই হোক, এখন প্রশ্থ ওঠে__ এসব পণ্য কি সরাসরি উৎপাদক প্রতি সপ্তাহে এ হাটে নিয়ে আসেন ? তার জবাব হল, উৎপাদক চাষীরা কিছুপণ্য নিয়ে এলেও তা৷ উল্লেখযোগ্য নয়। ফি-সোমবারের মধ্যে ধনকৈলকে ঘিরে আবে! কতগুলি হাট সপ্তাহে একবার কি দুবার বসে । সেগুলিকে বলে ফিডার মার্কেট । সেই মার্কেট বা হাটগুলোর নাঁম হল কুশমণ্ডী, ফতেপুর, উষাহরণ, ডালিম গা, রাধিকাপুর, কুনোর, সমাসপুর ধুকুবজারি প্রভৃতি । এই হাটগুলিতে যেসব শো উঃ গ্রাঃ চঃ--৭ পণা উৎপাদকর! নিয়ে আসেন সেগুলি ছোট-মাঝারি পাইকারদের মাধ্যঙ্ে আসে ধনকৈলে । এই সব ছে'টি ছোট হাঁটে বড় বড় মহাজনদের লোকজনও ঘুরে বেড়ায়। সেই সঙ্গে আছে ফড়িয়াদের দল। তবে, ফড়িয়া' মহাজন ধনকৈল হাটে একচ্ছত্র অধিপতি । তাঁদের ভাঁতেই ধনকৈলের দাম কম! বাড়া নির্ভর করে। স্বাভাবিকভাবেই এদের কৌশলে চাষী মার খায়। ফড়িয়া বা দালাল এ হাটে আছে ৩৫০ জন। খুচর] বিক্রেতাদেব সংখা। ৮০০ জন। আর পাইকারের সংখ্যা মাত্র ৭ জন। যে হাটে ফি সোমবার সহন্াধিক মানুষের আনাগোনা! এবং লক্ষাধিক টাকার লেনদেন চলে তার চেহারা দেখলে অবাক হতে য় । কালিয়াগঞ্জ বালুরঘাট পাক সডক থেকে ছুটি রাস্তা হাটে গিয়ে ঠেকেছে । একটি এববে। খেবরো! ভাঙা ইটে সংক্ষিপ্ত পথ | অবশ্য তার মধো আছে কাঠের ভাঙ্গা পুল। নীচ দিয়ে বয়ে গেছে শ্রীমতী না ছিরামতী নদী । একটু অসতর্ক হলেই পা গিয়ে পড়বে ভাঙ্গা! পুলের ফোকরে । অথবা নডবড়ে পুল থেকে আপনি সিধে পড়তে পারেন ছিরামতীর জলে । সেই বিপজ্জনক পুল পার হয়ে বর্ধাকালে ভয়ানক পিচ্ছিল পথে দ্বচারবার আছাড় খেতে খেতে আপনি পৌছতে পারেন উত্তববঙ্গের বিখযান হাট ধনকৈলে । হাটের পুব দিকে পথটি একটু ঘুর পথ। ট্রাক, জিপ, মায় গরু গাির এটিই একমাত্র পথ । প্রায়শঃই ট্রাক, জিপ, গরু গাডিতে এ পথ অবরুদ্ধ ৷ শীত কিংবা গ্রীক্মকালের ধুলোয় গাঁড়ির চাঁক1 বেশ খানিকটা ডুবে যায় । আর বর্ষাকালে ? সে এক অবর্ণনীয় অবস্থা | হাটের ভেতবে দৌচালাগুলি অবিন্যস্তভাবে সাজানো। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নানারকম খোলা খাবার নিয়ে বসে আছে দোকানীরা । যেখানে সেখানে স্পীকৃত লঙ্কার মরশুমে লঙ্কা, পেঁয়াজের মরশ্তমে পেঁয়াজ বা পাটের মরশ্ুমে পাট । ফলে, হাটের ভেতরে চলাচল এক দুর ব্যাপার । একটু বৃষ্টিতেই সেখানে এক হাটু কাদা । একটু বাতাসেই সেখানে ধুলোর ঝড়। তাই আপনি যখন সেখান থেকে ফিরে আসবেন কালিয়াগঞ্জে তখন ধিনি আপনাঁকে দেখবেন, তিনি বলবেন, ধনকৈলে গিয়েছিলেন বুঝি দাদা ! বদি হাট ঘুরতে ঘুরতে আপনার জলতেষ্টা পায়, তবে হা! একটা ভা! শে টিউবওয়েল আছে, পানীয় জল পাওয়! ন। পাওয়া আপনার কপাঁল। আর যদি প্রার্কৃতিক আহ্বনি আসে ? তা, আর কি করা যাবে বলুন, গ্রামের ব্যাপার মনে করে চোখ বুজে কাজ সারুন। এসব দেখেশুনে আপনি যদি ক্ষ হন, ভাবেন, সরকার কি দেখে শ্রনে কোন ব্যবস্থ৷ নিতে পাবেন না। আগেই বলেছি মাননীয় সরকার এখানে নাক গলাতে এসে কিছু করতে পারেন নি। এবার আপনাকে কয়েকটি খবর জানাই । এক, এই হাট থেকে হাট মালিকদের যে আয় হয় বছরে, তারই ভিত্তিতে তার! মরকারকে আয়কর দেন সাড়ে একুশ থেকে সাডে বাইশ হাজার টাকা । আর এই জমির খাজনা দেন ১,৮২৫ টাকা । হাট পরিচালন! বাবদ বায়ের বহর কিন্তু কম নয়। বছর হিসাবে ছত্রিশ হাজার চারশ টাঁকা। হাটের যে হাল দেখলেন তাতে বায়ের খবর ঙ্খনে চমকে উঠলেন তো! এবার ফাইলবন্দী আরো খবর শ্ুম্থন । এখানে হাট কর্মী আছেন মোট দুজন । -্রাদের মধো হাট পিছু একজনের বেতন ১৪ টাকা। ৩ জনের বেতন ৭ টাকা। ২ জনের বেতন ৩টাকা হিসাবে । একজন কর্মচারীর বেতন ৫ টাকা । অর্থাৎ মাসে চারটে হাট পড়লে একজন কর্মচারীর রোজগার ৫৬ টাঁকা। বাকি কর্মচারীরা যথাক্রমে ২৮ টাকা, ১২ টাকা এবং ২০ টাকা রোজগার করে থাকেন। তোলা আদায়কারী হিসাবে কাঁজ করে থাকেন ৩৩ জন। এরা! সবাই কমিশন ভিত্তিক কর্মচারী । ধান, লঙ্কা, মাছ-এর তোলার কমিশন ২৫% আর বাকিপণোর তোলা কমিশন হল ৩০% স্থতরাং সার! বছর যে কি করে হাট পরিচালন! বাবদ ৩৬ হাজার ৪০ টাকা বায় হতে পারে, সেটা নিয়মিত কোন হাটযান্রীর বোধগম্য নয় । এসব বিসদৃশ ব্যাপার এক সময়ে সরকারের নজরে এসেছিল এবং হাট উন্নয়ন পরিকল্পনা রচন1 করার চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্ত আইন আদালত ইত্যাদির কারণে সে পরিকল্পন1! সরকারকে বাতিল করতে হয়েছে ধনকৈলের ক্ষেত্রে । তবে বছর কয়েক হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি বিভাগ কালিয়াগঞ্জে নিয়ন্ত্রিত বাজার নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছেন। যাদের কাজ হ'ল উৎপাদক ৪৪ চাষীকে নানাভাবে সহায়তা দেওয়া। আপাততঃ এদের বড় কাঙ্গ প্রতি সোমবার ধনকৈল হাটে হানা দেওয়া । সেখানে উৎপাদক চাষীরা যাতে ক্থবিধাবাজ ব্যাপারীদদের হাতে কোনক্রমেই হেনস্তা না হয় তা দেখা । কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসাক্ষর বা স্বল্প সাক্ষর সহজ সরল চাষীদের উৎপাদিত পণ্য ম্যাঁধা মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। নিয়ন্ত্রিত বাজারের কাজ প্রতারকদের হাত থেকে উৎপাদককে রক্ষা করা । এছাড়৷ চাষীর উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা, উৎপাদকের প্রাপ্য মূল্যের সঙ্গে ভোক্তার দেয় মূল্যের ব্যবধান কমিয়ে আন] অর্থাৎ ফড়িয়। ব্যবস্থার উচ্ছেদ, চাষীকে অধিক ফসল ফলানোর উত্সাহ দেওয়!, হাটে পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে তোলা, উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু কর! সর্বোপরি উৎপাদক ক্রেতা ও ভোক্তার মধ্যে একটা সুষম সম্পর্ক গড়ে তোল। কাপিয়াগঞ্জ নিয়ন্ত্রিত বাজারের বিশেষ পক্ষ্য। ধনকৈণ হাটে এই ক্ছুদিন আগেও সের বাটখারা চালু ছিল। নিয়ন্ত্রিত বাজার কমীরা ধনকৈপ হাটে নিয়মিত গিয়ে মেদ্রক পদ্ধতিতে ওজনের ব্যবস্থা চালু করেন। সেখানে ওজনের বিরাট কারচুপি চলছিল। ফড়িয়ারা সবল চাষীদের পণ্য নিজেরাই ওজন করে কিনত। বাজার কমীরা উপস্থিত থেকে পণোর ন্যাযা মুল্য নির্ধারণ শুরু করেন এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরীক্ষিত ওজন ব্যবস্থা বসান। তাছাড়। হাট জমিদারের অযৌক্তিক তোলার মুলা কমানোর জন্য বাজার কর্মীরা সচেষ্ট হয়েছেন। গোপন শেনদেন হন্ধ করে প্রকাশ্য নীলামে ক্রয়বিক্রয়ের জন্ত চাপ স্থট্টি করছেন । তাছাড়া নিয়ন্ত্রিত বাজার স্বতন্ত্র একটি সুন্দর পরিকল্পনাও গ্রহ" করেছে । কৃষক, ব্যবসায়ী, ব্যাঙ্ক সরকারী প্রতিনিধি নিয়ে একটি শক্তিশালী বাজার পরিচালকমগণ্ডলী তৈরি করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত বাজার এখন প্রকাশ্ত নিলামের একটি প্লাটফরম। কৃষিদ্রব্য সংরক্ষণযোগ্য উন্নত গুদাম ঘর ও হিমঘর নির্মাণের কাজ চলছে। কৃষি দ্রব্যাদির গুণগত ও পরিমাণগত শ্রেণী বিশ্যাসের কাজ শুরু হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি আরও যে সব কাজ করছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগা হ'ল, চাহিদা যোগান, মূল্য প্রভৃতি বিষয়ে সঠিক সংবাদ সরবরাহের জন্য একটি বিভাগ, সহজ পরিবহণ ও যোগাযোগ, গরু মোষ প্রভৃতি পশ্তর ব্যবহার্য পানীয় জল, শেড ও গাড়ি রাখার ব্যবস্থা । তদুপরি কালিয়া ১৩০ গঞ্জের দশ মাইলের মধ্যে “চান্দোল” নামক জায়গায় নিয়ন্ত্রিত বাজারের একটি আদর্শ কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছে কুশমণ্তী, বংশীহারী থানা এলাকাও এই আদর্শ নিয়ন্ত্রিত বাজারের অস্তভূর্ত হয়েছে । মূল কেন্দ্রকে খিবে কয়েকটি উপকেন্দ্র তৈরি করাব পরিকল্পনা রয়েছে । ৫ বছর আগে এটি /লিখিত। বর্তমানে নিয়ন্ত্রিত বাজার চালু হয়েছে কিন্তু এখনো জনপ্রিয়তা পায়নি । ফলে, ধনকৈলের জমিদারী অটট। গল পিণক্ল॥ উত্তববঙ্গের কারুশিল্প কি? এ প্রশ্নের চটপট জবাব আমাদদেব অনেকের কাছেই তরী নেই। কেন না, উত্তরবঙ্গ এখনো আমাদের কাছে অনধিগমযা। এখনো! উত্তরবঙ্গে বদলির আদেশ এলে মাথায় বজ্রপাত হয়। যদিও বঙ্গ একটাই .-কিস্তু উত্তর দক্ষিণে দূরত্ব বিশাল । অন্ততঃ আমাদের অনেকের ধারণায়। কর্মজুতে বাঁধ! ধার। উত্তরবঙ্গে বাপ ঠাকুরাার আমলে থেকে, তারাও যে কারুশিল্প বিষয়ক প্রশ্নের চটপট জবাব দেবেন, এমন নয়। সেখাঁনকার-মাটি, জল-জঙ্গল এই সব বঙ্গবাসীদের অচেনা, অজানা | তাই, উত্তরবঙ্গের শুধু কার- শিল্প কেন কোন শিল্প-সংস্কৃতির পরিচয় এদের অনেকের কাছ থেকে জানবার উপায় নেই। ব্যাক্তিগত শ্রমসাধা প্রয়াসে এইসব কৌতুহল মেটাতে হয়। আসাম, সিকিম, নেপাল, বিহার আর বাঙ্গলাদেশ ঘেরা উত্তরবঙ্গে শত শত বন্যা, ভূমিকম্প, মহামারীতেও যার! নিশ্চিহ্ন হয়নি, যার] হাজার বছর ধরে তিস্তার বালি দিয়ে কেবলই ঘর গড়েছে, আকাশ-মাঁটি, জল-জঙ্গল আর বিস্তীর্ণ দামাল পাহাড় যাদের শিরায় শিরায় ধমনীতে হৃদয়ে তারাই উত্তরবঙ্গের কারুশিল্প-সংস্কৃতির অষ্টা | শিল্পের জন্য শিল্প এখানে স্ঠি হয় না। শুধু এখানে কেন, কোথাও লোকশিল্প শুধু শিল্পের জন্য তৈরী এমন উদাহরণ বিরল । দাজিলিং জেলার নেপালী, ভুটিয়া, গোর্খা, কোঁচবিহার-লপাইগুড়ি জেলার কোচ রাজবংশী, মেচ, কাছারী, রাভা, টোটো কিংবা পশ্চিম দিনাজপুর মালদহ জেলার দেশীয়া, পোলিয়৷ সকলেই প্রয়োজনের নিরিখে যে সব জিনিস তৈয়ারী করেন আমর! তাঁকেই রলি উত্তরবঙ্গের কারুশিল্প । এই বঙ্গের এরাই আদি নিবাসী । কি তাদের প্রয়োজন ? প্রয়োজন, লজ্জা! নিবারণের কাপড়, শীতের হাত থেকে বাচার জন্য আচ্ছাদন। আত্মীয়-কুটুম এলে বসতে শুতে দেবার জন্ত চাই কিছু । এইসব প্রয়োজনে পাটের স্থতোর তৈয়ারী মেখরী, দোৌসতি ছযাওটা, ফাকচেক, কাম্ধাং, ধোকড়া, ঝালং বিছান এসেছে । দেড় হাত “চ্যাওড়া পাঁচ হাত নাম্বা একটা ফাটি তৈয়ারী হয় বাঁশ দিয়ে বসানো একটি সহজ সরল দেশী তাতে । এই ফাটিগুপি প্রয়োজন মতে জুড়ে তৈয়াবী হয় ধোকভা', ঝালং, বিছান। এখন খলের স্থুতে৷ ছড়িয়ে পড়েছে সব্বত্র। সেই স্থতো দিয়েই আকছাড় তৈয়ায়ী হচ্ছে পরিধেয় বস্ত্র ছাওটা। সেই স্ঁতোয় তেরী হচ্ছে বিছানার চাদর বিছান, কাধেব থলে এমন কি পিঠে ছেলে ঝাধার ফাটি । ধোকড়া-ঝালং সাবেক পালের মতোই পাটেব তৈরী। যদিও কোচবিহার জলপাইগুভিতে বড বড় মহাজনের দাপটে এসব খুজে পাওয়া ভার। তবুও পশ্চিম-দিনাজপুর মালদহে এখনে। এইসব ধোকড়া-ঝালং তৈরী করছেন দেশীয়! রমণী যা আমরা শত্রঞ্জী, কার্পেট হিসেবে বাবহার করতে পারি অনায়াসে । কশঙ দাম এইসব ধোকড়া-ঝালডের । মজুরী হিসেব করলে এর দাম ঢের। কেননা দেড হাতি চওড1, পাঁচ হাত লম্বা একট! ফাটির জন্য একদিনের হাঁডভাঙ্গা শ্রম তো যায়ই। তার আগে আছে পাটের ছাল ছাড়িয়ে স্থুতো! তৈয়াবী খাটুনি। সেই স্থতো৷ রং করারও পরিশ্রম কম নয়। কিন্তু এসবের হিসেব কষেণ না কোন দেশীয়া রমণী। ছাগল চরানে, মাঠ-জঙ্গণ থেকে জ্বালানী সংগ্রহ । রান্নাবান্না আর সোয়ামী, ভাই অথবা বাপকে জমিতে খাবার দেওয়ার কাজের ফাকে ফাকে এই সব তৈয়ারী করেন ওবা। ধোকড়া-ঝালং ছাড়াও ওপার বাংলা আর বাধিয়৷ মুসলমানদের প্রভাবে এসেছে নক্সীকীথা | ঘরে ঘরে যে নক্সীকীথ। তৈরী হয়, এমন নয়। কিন্তু তবু ষে কটির সন্ধান পাওয়া ঘায় তার কাজও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। ১৯২২ সালে পশ্চিমদিনাজপুর জেলার নক্ীকাথা রাঁজা সরকারের কারুশিল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে । ওই কীথাটি নব্বই বছরের বৃদ্ধা শাশুড়ী তার জামাইকে উপহার দেবার জন্য চল্লিশ বছর ধরে বুনেছিলেন। আরেকটি ১৩৩) নক্সীকাথা সম্প্রতি আমাদের নজরে এনেছেন জেলা শিল্পকেন্জ। যার কাককর্মও যথেষ্ট প্রশংসার দাবী বাখে। পিঠে ছেলে বীধার জন্য দেশীয়! রমণী লাল নীল, সবুজ রডের স্থৃতোয় যে ফাটি তৈরী করেন তা আমাদের আরামকেদারাঁর ছাউনি হিসাবে বেশ কাজে লাগে। এই ফাটি দীমেও সম্ভা অথচ টে কমই । মাত্র বারো৷ তেরো! টাকা! এর দীম ৭ জলপাইগুভি জেলার বাড মেচ বমণীদের পরিধেয় বস্ত্রগুলি চমৎকার ৷ শিল্প- নৈপুণ্যে ভরা । কিন্তু, এগুলোর কথা কজন জানেন, জানতে চান ? এবার মুখোশের কথা । চৈত্র মাসে দক্ষিণে মহানন্দা! পাড় থেকে উত্তরে গোটা তিস্তা উপত্যকায় শুরু হয় গমীর! উত্সব । এই উৎসব চলে আধাঢ় মাঁস পর্যস্ত । এই উত্সবে নাচের জন্য চাই কাঠের মুখোশ | মালদহে, জলপাই- গুঁড়িতে যার নাম মুখা, পশ্চিমদিনাজপুরে তারই নাম মোখা। ছাতিম নিম গামারী কাঠ দিয়ে তৈরী হয় এসব । আকারে লম্বায় এক হাত থেকে ছৃ'হাত। পাশে আধ হাত থেকে এক হাত ; এই বিরাট সব মুখোশ পরে শিল্পীরা নাঁচেন । মুখোশ তৈরী করার সময় মন্ত্রপূত জল ছিটিয়ে দেয় কাঠের উপর গ্রামেরই দেবাংশী পুরোহিত । তারপর চরুস, বাইসল। দিয়ে কুঁদে কুঁদে মুখোঁশ তৈরীর কাজ শুরু হয়। শিল্পী নিজেও মন্ত্র জানেন । জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ভুবন মোহাস্তকে তিনি তৈরী করেছিলেন একটা বাঘের মুখোশ ! অয় বড় তেজী! মস্তর না ফুকলে চলে? সতিাকাবের বাঘ হয়ে নাকি খেয়ে ফেলতে পারে শিলীকে ! কিসের কিসের মুখোশ হয়? শিল্পীর উদ্টো জিজ্ঞাসা, কিসের ন! হয়? বাঘ, ভালুক তো আছেই । আর চামাড় ( চাষুণ্ডা কালী ), বুড়া-বুড়ি (শিব- চত্তী হলেও লৌকিক বুড়া-বুড়িই ), সিংহল রাজা, রাবণ রাজা, শিকনিঢাঁল এইরকম হরেক দেব দেবীর মুখোশ! শোলার মুখোশও তৈরী করেন শিল্পী। তার রকম হরেক । জলপাইগুড়ি থেকে মালদার মধ্যে অজন্র মুখোশের ছড়াছড়ি । মাঁলদায় মাটির মুখোশও হয়। জলপাইগুড়িতে মুখা খেলার জন্য কাগজের মুখোশ তৈরী করেন পণ্সম্প্রতি কলকাতার এক মেলা থেকে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার কুশমপ্্রী থানার কয়ানগর গীয়ের আকালী সরকার যে অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন তারই বলে ওই তাতপোইতে উল দিয়ে বুনেছেন চমৎকার একটি স্টোল। ১০৪ শিল্পীরা । এতে দেবদেবী নেই। আছে পেয়াদা, কারকুন (বাজার রাজস্ব আদায়কারী ), চোর-চুরনীর মুখোশ । এসব দামে বিকোয় না। অন্ততঃ এক সময় বিকোত না। এখন এগুলোর ধর্মীয় আবরণ খসিয়ে শিল্পে পরিণত করার চেষ্টা চলছে । ১৯২২ সালে পশ্চিমদিনাজপুর জেলার কাঠের মুখোশ যা কিনা রাম-বনবাস লোকনাট্যে বাবহৃত হত সরকারী কাকশিল্প প্রতিষোঁগিতাঁয় প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়ে এসেছে । ওদের কাছে মুখোশের বাবহাঞ নৃত্যে-নাঁট্যে আর আমাদের কাছে ঘর সাঁজাবার উপকরণ । মুখোশের পর আসে গহনার কথা | বিয়েতে গহনার লেনদেন বাঙ্গালী সমাজে চিরস্তন। উত্তরবঙ্গেও দেখি রাজবংশী দেশী, পোলিয়া সমাজে বিয়ের অনুষ্ঠানে গহনার সমাদর | তবে সোনার চেয়ে রূপোঁর পেতলের গহনাঁরই চল বেশি এখানে | নামগুলোও ক্ন্দর, বিচিত্র। এই গহন! তৈয়ারি কবেন রাজবংশী কর্মকার । রাভা, মেচ মেয়েদের নিজস্ব সুন্দর সুন্দর গহনা আছে । কিন্তু এখন সেসব খুঁজে পাওয়া ভার । রাজবংশী মেয়েরা মাথায় পরেন সিথা পাটি আর সেদবন। সিথাপাটি হ'ল অনেকটা টিকলির মতো । রুপোর একটি সর শিকল সিথি বরাবর থাকে । আর সেদ্বনকে বল! যায় রুপোর শিরন্ত্রীান। কর্ণধূলে কপোর গোলাকার গহনার নাম ওস্তি বা এনস্তি। কানের ওপরের দ্রিকে পরার জন্য যে গহন! তাঁর নাম মাছিয়া পাত। ছোট ছোট রুপোর ফুল কানের লতিতে যখন আটকে থাকে তখন তার নাম পুজি। কর্ণবেষ্টনী শিকলের নাম শিসা | চাকি হল গোটা কাঁন ঢেকে থাকা অলংকার । কানের মাকিরি তো সারা বাংলায় অতি পরিচিত। উত্তরবঙ্গেও সাধারণ রমণীর কানে কানে তা শোভা পায়। নাকের নথ আছে ছু" রকমের । সোলিয়া আর জলট্রপা। আর আছে বালি, নোলোক, ফুল ও ফুরস্কুবি | গলায় থাকে হার । এই হার হরেক রকম । ক্র্যহাঁর, চন্দ্রহার, শিকলি হার । আর আছে মালা__কাঠি মালা, মধুমালা, পোয়াল মাল | কণ্হার আরো আছে। হাস্থলী, গোট, কুচিয়। মার-হাঁর, সিক্কা হার, টাকা চাবা আর জনরা । একেকটি হার একেক রকম । এইসব হার সম্প্রদায়ের্কর্মকার ছাড়া কেউ তৈরী করতে পারে না। আমি নিজে তা খোজ খবর নিয়ে জেনেছি। ১০৫ হাতের বালারও বহু নাম । গোট] খা, গোকুল খারু, মোটাখাকু, মুঠিয়া খার, চুরাতি, রতন চুর। এছাড়াও আছে সমস্ত উত্তরবঙ্গেই মেয়েদের হাতে হাতে শাংখা! খারু আর মোটা খারু। বাহু খারু বা গজরা কিংবা সোমপাপ্রি নামেও ২ ইঞ্চি থেকে ৪ইঞ্চি মোটা হাতের “গাহেনা'র খবর পাওয়া যায়। কোমরে মেয়ের। পরেন সিকোই আর গোট । পদশোভার জন্য আছে ঠ]াং খাক, বাক খাকু, পার খাক, ছর খারু, এবং মল। এছাড়া পায়ের পাতার জন্য পাইজো, পাজোর আর পাঞ্চা। হাতের আঙ্গুলের জন্য আংটি তেমনি পায়ের আঙ্গুলের জন্য আছে আংটি । এরপর আসে শোলার কাজ। শোপার হাতি, ঘোড়া পাখি ছাডাও বিয়ের মালা, ফুল মু্ট তো আছেই । কিন্তু সর্বাধিক উল্লেখযোগা হল ব'। বিশেষভাবে শ্রাবণ পংক্রাস্তির সময় বিষহরা ত্রতে এই 'ব-গুলে। দেখা যায়। শোলার তৈয়ারী মঞ্জুষ। তাতে আক থাকে বেহুলা-লখন্দর আর সাপ। শোলার মঞ্জুষ বা মাজুষের কাজ তো অতি স্ুত্ম। রঙের ব্যবহারও দেখবার মতো । ১লা ভাব্র উত্তগবঙ্গের গ্রাম গ্রামান্তরে ঘুরলেই দেখা যাবে দিঘি বা পুফরিণীর মাঝখানে এটি বাশের মাথায় সেগুলে ঝুলছে। আকৃতিটি গোলাকার একটি চোঙের মতো । তার চারপাশে কদম ফুল দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো । ব্রিকোনাকৃতি একটি শোলার মধ্যে বিষহরি তথা মনসা আকা। ওই ত্রিকোনাকৃতি চারটে “ব' জুড়ে একটি 'মুন্দিল' (মন্দির ) হয়। কখনে] বা বলা হয় লখাইয়ের বাসর ঘর। এ রচনা কর্ম এক কথায় অপূর্ব । এর একেকটি দিকে একেকরকম আকা । হাতি তো থাকবেই । বেহুলা, লখীন্দর, মনসা ও শিব এতে শোভা পায়। যদিও “পট' নামট? উত্তরবঙ্গে কেউ জানেনা, কিন্ত আমলে এই 'বগুলেো উত্কৃষ্ট পটের নিদর্শন । শোলার এইসব শিল্পীর) মালাকার নামে পরিচিত ! পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বংশীহারী থানায় বৈরহাট্টা গ্রামে কর্তিকমাসের চণ্ীপুজোর সময় কুলোর পিঠে আকা ভুষোকালির ওপর সাদা খড়ি মাটি দিয়ে একটি কালীর মুখ দেখছি । কাজটি সরল হলেও অসাধারণ শিল্প নেপৃণ্যের পরিচায়ক | শিল্পীকে খোজ করে পাইনি। ওই জেলারই কালিয়াগঞ্জ থানার -.নোর গ্রামে পোলিয়৷ মৃত্শিল্পী আছেন: কণ্ঘর। তাদের তৈরী ছোট ছোট পীরের ঘোড়া যে কোন শিল্প প্রত্বশালার: ১০৩৬ উৎকষ্ট সংগ্রহ হ'তে পারে । এই গ্রামেই দেখেছি আরো কতকগুলে। ছোট ছোট: মনোহারী কাজ। সবগুলোই প্রয়োজনের সামগ্রী যেমন তেলের ভাড়-_পেচি, ও ঠেকি। পেচি দেখতে অনেকটা কুঁজোর মতো । আধুনিক হিসাবে ৫* গ্রাম ১০০ গ্রাম সরষের তেল ধরে এই সব পেচিতে। রান্নাঘরে এই পেচি. থাকে । উন্টে গেলেও তেল পড়ে যায় না । ২৫০ গ্রাম থেকে ৫০* গ্রাম কিংবা তাঁর বেশি তেল ধরে যে পেচিতে তার নাম তারি । বিয়ের সময় পাত্রপক্ষ কনের মাকে ওই একতারি তেল দেবেন । নয়তো বিয়ে হবে না । তেলের ঠেকি অনেকটা হাঁড়ির মতো দেখতে | ঠেকির গায়ে টেরাকোটার কাজ। উভয়ের রঙ কালো । তুষের ধোঁয়ায় এ সবের রঙ তৈরী হয়। বেশ মাজা মাজা । এই পোলিয়ারা তৈরী করেন চুন রাখার পাত্র চুনাঁতি। ধুপদানি । সুন্দর মাটির প্রদীপ-_যার নাম চেরাগ । এই পলিয়া শিল্পীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ছোট ছেট মাটির পুতুলও তৈরী করেন। পিঠে সন্তান বাধ। রমণী, হাতির পিঠে চড়া মাহুত, কাখে ডালি মেয়ে। অনেকট] ষষ্ঠী পুতুলের আদল । বেতের তৈরী ধান মাপার কাঠা । বশের তৈয়াবি মাছ ধরার যন্ত্র এ ছাড়া ডালা, ঝুলো, ডালাও দেখেছি নান! আকারের উত্তরবঙ্গের অখ্যাত সব হাটে। প্রয়োজনের সামগ্রী বলেই ট্রিকে আছে। বাশের আরো কাজ: আছে হরেকরকম, আছে মাছুরের কাজ । উত্তরবঙ্গ আদিতে মোঙ্গলীয় জনগে।ঠী ফোঁচ, রাজবংশী, দেশী, পোঁলিয়া, মেচ রাভা, টোটোর বাসভূমি হলেও ধীরে ধীরে নানা কারণে এইভূমিতে এসে জমায়েত হয়েছে ছত্রিশ জাত। স্থতরাং এই অঞ্চলের কারুশিল্পে বহুজনের অবদান থাকলেও প্রাধান্য হারায়নি আদি নিবাসী ওইসব জনগোষ্ঠী । উত্তরবঙ্গের শিল্প-সংস্কৃতি বলতে এখনে বস্ততঃ তাদের শিল্প-সংস্কৃতিকেই বোঝায় । কারুশিল্পের ক্ষেত্রেও ওই একই জবাব। মুহখ। মাহা স্যুহখা ॥ পুকলিয়ার 'ছো' নাচের সঙ্গে তাব মুখোশ এখন বিশ্ববন্দিত। তীর প্রচাবের এমনি জোব যে বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের মুখোশ বা তার নৃতোর বড় বেশি খোজ রাখি না আমরা । মালদহের গল্গীরা নূতো সব সময় মুখোশ বাবহার হয় না। কিন্ত, স্খোনকাঁর মুখোশের যে নমুনা আমরা দেখেছি তাও কম প্রশংসার যোগা নয়। মালদহে মুখোশ 'মুখা' নামে পরিচিত । এই মুখোশ আগে প্রধানত নিম কাঠ দিয়ে তৈরী হত। এখন অধিকাঁংশ মুখোশই মাটি দিয়ে তৈরী হয়। এই মুখোশগুলির মধো কালী, নরপিংহ, রাম, লক্ষণ, হনুমান, বুড়া-বুডী, শিব, ভূত, প্রেত, কাত্তিক, প্রভৃতি উল্লেখযোগা । মালদহেব মুখোশ প্রসঙ্গে আছ্যের গ্ভীরা লেখক প্রখ্যাত হরিদাস পালিত জানিয়েছেন, “মুখার উর্ধ্বদিকে ও পশ্চাদংশে একটি এবং ছুই কর্ণের পশ্চাতে দুইটি ছিদ্র দুষ্ট হয়, তাহাতে রজ্জু সংবদ্ধ থাকে, সেই বজ্জুদ্বার| মুখ! মুখের উপর বন্ধন করা হয়। মুখার ঘর্ষণ হইতে মুখ রক্ষা করিবার জন্য চাঁদর বা বন্ত্খণ্ দিয়া কর্ণ বেষ্টন করিয়া পাগড়ী বীধা হয়” বৎসরাস্তে গম্ভীরার সময়ে এই মুখোশ দেখতে পাওয়া যায় মালদহ ও তার আশপাশ অঞ্চলে । পুরুলিয়ার মুখোশ যেমন অনায়ামলভ্য মালদহের যুখোশ তেমন নয়। সম্প্রতি মালদহ-সীমাস্তবর্তী অঞ্চলে ঘুরে এই মুখোশের খোঁজ নিয়েছি । তাতে বুঝেছি, মালদহের “মুখা”র পৃষ্ঠপোষক সমস্ত মালদহবাসী নয়। যেসব গ্রামে গভীরা শিল্পীরা থাকেন, তারাই প্রধানত এর পৃষ্টপোষক । গম্ভীর! বা গাজনের মেলায় মুখোশ ওঠে, বিকোয় জলের দরে, অথচ এমন সুন্দর শিল্পকর্মের দাম পায় না শিল্পীরা । এই মুখোশের এমনি আকধণ যে মালদহ সীমান্ত বিহ)ব অঞ্চলে সাধারণ গ্রামবাসীর ঘরে তা সযত্বে রক্ষিত | বস্তত উত্তরবঙ্গের মুখোশ বলতে তবু সাধারণভাবে আমরা মালদহের গন্ভীরা মুখাব কথাই জানি । জেলা শিল্পদপ্তর উদ্যোগ গ্রহণ করলে এই মুখোশের প্রচার হত জেলার বাইরে । অনায়াসলভা হত লোকশিল্প রসিকের কাছে। ফলে, বাচতেন শিল্পী । জপপাইগুডি জেলায় রাজবংশী সমাজ মুখোশকে 'মুখা' বলেন। এদিক থেকে মালদহের সঙ্গে মিপ আছে। মালদহের 'মৃখা” নাচ শ্তধুমাত্রই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু জলপাইগুড়ি জেলার 'মুখা-খেলা” একান্তভাবেই ধর্মীয় অনুষ্ঠাননির্ভর নয়। ধর্মীর অনুষ্ঠানগুলির মধো বাম-রাবণ, শিব-দুর্গী, মনস। প্রভৃতি প্রাধান্য পায়। একটা বিশেষ পৌরাণিক মন এর মধ্যে কাজ করে। কিন্তু সামাজিক ও গাহিস্থা জীবন-নির্ভর “মুখা খেলা'র মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের ট্ুকরে। টুকরো চিত্র বিন্যস্ত থাকে । জলপাইগুড়ি জেলার “মুখা'গুলি কাঠ, লাউ, পোঁড়ামাটি, পুরু কাগজ বা! পাতলা শোলা দিয়ে তৈরী। কাঠের বা লাউয়ের খোলের উপর কাদা দিয়ে হ্যাকড়! এটে দিয়ে সেই স্াকড়ার উপর চিত্রকর চিত্র করে দেয়। যে কেউ এই মুখা তৈরী করতে পারে না। যে সুতাহার বা স্ত্রধর অধিকারী, সেই মুখা তৈরীতে সক্ষম | এইসব অঞ্চলে মন্স্যাকৃতির মুখা ছাড়াও দৈত্য-দানব ও পশ্তর মুখাও ব্যবহৃত হয় কোন কোন ক্ষেত্রে । তবে, গন্ভীরার প্রচলন নেই এখানে । অন্যপক্ষে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার রাজবংশী বিশেষত পলিয়া-দেশী সমাজে বৈশাখ-জোষ্ঠ মাসে 'গমীর! খেলায় মুখোশ ব্যবহৃত হয়। এই অঞ্চলে তা 'মোখা” নামে প্রচলিত। এই 'মোখা' একমাত্র ছৈতন বা! “ছাতিম' গাছের কাঠ দিয়ে তৈয়ারী। মাটির মোঁখ! দ্বেখা যায় না। এখনকার গমীরা খেলায় শিবের কোন স্থান নেই। বুড়ো-বুড়ি, চামাড় কালী বা উড়ন কালীই ১০৪৯ প্রধান । উড়ন কালীর (যার গ্রামীণ নাম “শিকনিঢাল' ) মোখা আকাবে স্থবৃহৎ এবং ভয়ঙ্কর দর্শন | 'রাম-বনবাপ” পৌরাণিক যাত্রায় অশোক বনের চেরী, হনুমান, পাতালের দানব, পঞ্চবটী বনের বাঘ, তাল্ুক, গণ্ডার, মায়! হরিণ প্রস্তুতির সব মুখোশ বাবহৃ 5 হয়| “হম্ত্রমান'-এর মোখা বিশেষভাবে ব্যবহৃত ও রক্ষিত। এর সঙ্গে এরধান একটি ধর্মীয় বিশ্বাস যুক্ত । চোর-চুবণীর গানে কিছু শোলার মুখোশ পরতে দেখা যায়। এই গান জলপাইগুড়ি ও পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় রাজবংশী, দেশী ও পলিয়াদেব মধ্যে কাশীপুজোর অমাণস্ত। তিথি কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। আমাব কাছে যতদূর খবর আছে, তাতে বলতে পারি, এইসব মুখোশ গুলিকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণেব কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি । দার্জিলিং জেশার নেপাীদের মুখোশ উত্তববঙ্গে সর্বাধিক প্রচারিত ও বিখ্যান। সম্ভবত এই মুখোশগুশির মূলা যত না ৮ তার চেরে বেশি 101১৮ ভিসেবে | তবে, দাজিলিং-এর নেপালী সমাজের লোকায়ত সাংস্কৃতিক জীবনে এই মুখোশের একটি বিশেষ মূল্য রয়েছে । উত্তরবন্ষের মুখোশ শিল্প সম্পর্কে খুব বেশি আলোচনা চোখে পড়েনি । ডঃ নির্মলেন্দু ভৌমিক তাঁব গবেষণ! গ্রন্থ প্রান্ত টন্তরবঙ্ষেব লোকসঙ্গীত, বীবেশ্বব বন্দ্োপাধায় "বাংলা দেশের সও প্রসঙ্গে এবং ডঃ প্রচ্যোৎ্ ঘোষ যথাক্রমে 'জলপাইপগ্ডি ও মালদহেব 'মুখা' প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা করেছেন । কিন্ব পশ্চিম দিনাজপুর ও কোচবিহাব জেলার মুখোশ সম্বন্ধে কোন আলোচনা এখনে! আমাদের নজরে আসেনি | সৌভাগ্যবশতঃ ভারতীম্ব যাছুঘরেব ডঃ সবিতাবগন সরকার পুরুলিয়ার আলোঁচনাচক্রে উপস্থিত ছিলেন । তিনি পরবর্তীকালে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং পশ্চিম দিনাজপুর জেলার গভীর গ্রামাঞ্চল থেকে যাছুঘরের জন্ত বেশ কিছু কাঠের মুখোশ সংগ্রহ ক'রে নিয়ে আসেন। পশ্চিম দিনাজপুর জেলা শিল্পকেন্দ্রের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার সতোন মিত্র এই মুখোশের বাজার তৈয়ারির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তাছাড়া, তাঁরই আগ্রহে এবং আমার সহযোগিতায় এই মুখোশ পশ্চিমবঙ্গ কারুশিল্প প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে। বাইশ বছরের একটি রাজবংশী ১১৩ দেশীয়া যুবক শচীন্রনাথ সরকার এই মুখোশের শিল্পী । কিন্ত দ্রুত নগরায়ণ ও নানা সংস্কৃতির চাপে এই মোখাশিল্প বিলুপ্তির পথে। অনুসন্ধান নিয়ে দেখেছি, এ জেলার মাখা খুব সহজলভ্য নয়। গ্রামে গ্রামে ক্রমশঃ মোখা শিল্পীর অভাব ঘটছে। পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় এখন অঙ্কুলীমেয় ঘে কজন মোখাশিল্পী রয়েছেন তীরা চাঁষবাস নিয়ে বাস্ত। মোখা তৈয়ারির সময় কোথায় ! টুঙ্ুল গ্রামের নগেন রায়কে এই নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম । তিনি জবাবে জানিয়েছিলেন, মোখা৷ তৈয়ারি কারে! পেশা নয় । সময় ও স্তযোগ মতো এগুপো তৈয়ারি করেন প্রধানতঃ উৎসব, অনুষ্ঠানের জন্য । উতৎসব- অনুষ্ঠানও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কমছে লৌকিক বিশ্বাস। ফলে, এ সবের চাহিদাও কমছে । তবে নগেন রায়ের মন হলো, মোখা। তৈয়ারি করে যদি অর্থ পাওয়া যায় তবে গ্রামে গ্রামে শিল্পীদের মধো আবার উৎসাহ দেখা দিতে পারে । কৃষ্ণবাটা গ্রামের শচীন্দ্রনাথ সরকার মোখা শিল্পে প্রথম স্বান অধিকার করার পর ব্যাঙ্কের খণ পেয়েছেন । কশমণ্তী থানার ক্য়ানগর গ্রামের শঙ্কর সরকাঁধ পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় কারুশিল্প প্রতিযোগিতায় পুরস্কত হয়ে উৎসাহ পেয়েছেন । উত্তরবঙ্গ লোকযান-_লোকশিল্প সংকৃতি ও শিল্পীর উন্নয়ন কেন্দ্র এখন মুখোশের বাজার স্থষ্টিতে তংপর। ইতিমধো কলকাতার কয়েকটি মেলা এবং ক্রাফট কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রভৃতি সংস্কার মাধামে মুখোশ বাঁজার পেতে শুর করেছে। স্থদূর লগ্ডনেও গিয়ে হাঁজির হয়েছে | সেখানে পশ্চিম দিনাজপুরের মোঁখা সমাদর পেয়েছে। কিন্ত, এ কোন একটি সংস্থা বা! বাক্তির কাঁজনয়। সরকারী উদ্যোগ অনেক বেশি দরকার । ১৯৯ ব্রাভ্তজনেল্স ল্ত্যণ্গীত ॥ এই নিবন্ধে এই অঞ্চলের কয়েকটি সবপনজ্ঞাত নৃত্য-গীত-উত্সবের পরিচয় বাখব। প্রথমেই উল্লেখ কর! যাক উত্তর সীমান্তে” মেচ উপজাতির নৃত্য-গীতের কথা। এই মেচরা৷ জলপাইগুড়ি জেলার মেচি নদ্দীর তীরে বসবাস করেন । সম্ভবত মেচি তীরের বাসিন্দা বলেই তারা মেচ। এ বিষয়ে ডঃ চারুচন্দ্র সান্যাল তাঁর দ্য মেচেস এগ ছ্য টোৌটোস গ্রন্থে অনেক কথাই জানিয়েছেন । তবে মেচদের সঙ্গে আমার বাক্তিগত যে পরিচয় তাতে বলতে পারি তাঁরা নিজেদের আদি বডে। জাতির পরিচয়ে গর্ধিত। মেচ্দের যে দুটি সাংস্কৃতিক সংস্থার কথা জানি তার নামেই এদের পরিচয় লক্ষণীয় । এক, কংকোঁতি বড়ো কষ্টি আফৎ, দুই, রঞ্জালি বড়ো রুষ্টি আফখ। এখন এই মেচদের নৃত্য-গীতের পরিচয় কি? গবেষূক স্থনীল পাল জানিয়েছেন, জলপাইগুড়ি জেলার মেচ জনজাতির জীবনবৃত্তে নৃত্যের স্থান বিশেষভাবে রয়েছে । পুজা-পার্বনে খতু উৎ্দবে ও অন্ান্ত আচার অনুষ্ঠানে তারা নৃত্য করেন । তীদের নৃত্যে ররেছে লালিতা, আবেগ ও নান্দনিক এঁশবর্য ৷ তাসত্বেও ওরা ব্রাত্য, উপেক্ষিত আমাদের কাঁছে। মেচদ্দের নাচের নাম “মশানায়' ও গান 'মেথায়' | “বশাগ্" নববর্ষ বরণের নাচ। মেয়ে-পুরুষ এ নাচে অংশ গ্রহণ করেন । “মায় নাও বুড়ি বরায় নায়” নাচ গৃহদেবী “মায়নাওর নামে উৎ্সর্গারুত। এর মধ্যে ভক্তিপ্রাণতা ভাঁবরসে পরিপুষ্ট । মেচর1! আজ হয়তো! আদিম অরণ্যচাঁরী জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্প্‌ক্ত নয়, বিস্ত একদ]1 এই জীবনযাত্রাই ছিল তাদের লঙ্গী। তাদের কিছু কিছু নাচে এখনো! সেই জীবনের স্বতি বাহিত। অরণ্যে কাষ্টি সংগ্রহে যাবার যে নৃত্য আজও তাদের মধ্যে প্রচলিত তার নায় বোং কাং বাদরী, । অরণাচারী জীবন থেকে রুষিভিত্তিক সমাজজীবনে উত্তরণের স্স্পষ্ট ছবিও পাঁওয়! যায় তাদের নাচে । ধান্য রোপনের 'মায়গায় নায়' নৃত্য সেই ছৰি বহন করে। এই মানুষদের জীবনে প্রকৃতি আজন্ম সঙ্গী । ক্ষেতে ক্ষেতে প্রজাপতি ছুটে বেড়ায়, তাকে ধরার বাঁসনা তীব্র। “গান ডেওলা” নাচে প্রজাপতি ধরার দৃষ্টি বড় স্ন্ার। মেচদের বিবাহ-উত্সবে আয়বাতি বৈরাতির বিশেষ ভূমিকা । পশ্চিম দিনাজ- পুর, জলপাইগুড়ি জেলার রাজবংশী দেশী পলিদের বিবাহ-উৎ্সবেও “আয়রাঁতি বৈরাতির" গ্রাধান্য | এরাই বরযারী কনেযাব্রী। মেচদের “বৈরাতি মশানায়” বৃতা খুবই বর্ণা্য ও অনুপম । তবে বৈরাতি নাচ মেচ মেয়েরাই বিয়ের দিনে করে থাকেন । তাদের বণনৃত্যের নাম “ঢালথুংরী মশানায়' । অতীত যুগের যুদ্ধরীতি ও বীরত্বের ব্যঞ্চনা এতে প্রতিভাত । বসন্তোত্সবের নৃতোর নাঁম 'বাগরুত্বা” | নানা বির পোশাক এই নৃতো মেয়ে-পুকষ উভয়েই উদ্বেলিত হৃদয়ে অংশ গ্রহণ করেন । মেচর! শিবভক্ত। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী কোচরাও তাই । কিন্ত শিবপুজোর জন্য পুষ্পচয়নের যে নৃত্যটি ( থুবসি গেলেনায় ) মেচদের মধ্যে রয়েছে তা রাঁজ- বংশী বা অন্য জনজাঁতির ভেতরে দেখা যায় না। এইসব নাচে যেসব বাগ্যন্ত্রগুলো ব্যবহৃত হয় তার নাম গুলো! এইরকম £ খাম, মেরজা, চিকুং, ওয়াবিশি, যোথা ।ণ" | উত্তরবঙ্ষের আরেক ব্রাত্যজন রাভা | ডূয়ার্সের ঘন অবণা পরিবেশে তাদের জীবন ও সমাজে নৃতা-গীত এক অচ্ছেছ্য সম্পর্কে যুক্ত । রাভাঁরা মাতৃতান্ত্রিক । নৃতাকে তাঁদের ভাষায় বলা হয় 'বসিনি, সঙ্গীতকে চায়। রাঁভা পুরুষ মেয়েরাও যৌথভাবে নৃত্যগীতে অংশ গ্রহণ করেন। এদের নৃত্য প্রধানত আহুষ্ঠানিক ক্রিয়াকর্মের সঙ্গে জড়িত। বিবাহ, শ্রাদ্ধান্থুষ্ঠান, দেবোপাসনা, শ জলপাইগুড়ির খরভাঙ্গা এলাকায় যে মেচর! বসবাস করেন, তাঁদের একটি দল, দিল্লী, কলকাতায় নৃত্য পরিবেশন ক'রে প্রশংস! কুড়িয়েছেন। ১১৩ উঃ গ্রাঃ চঃ-_-৮ খতুউৎ্সবে নৃত্য স্বত্ক্ফূর্ত। গৃহদেবী রম্ৃক বাশেক পুজোয় এবং নববর্ষে নগউকন বাকেব্রীতে সাবাঙ্গ! বা পুরোহিত নৃত্য করেন। এখ্]নে সাবাঙ্গার নৃত্য একক । মৃতদেহ শ্বশানে নিয়ে যাবার আগে মৃতের উদ্দেশ্তটে মণ ও জল নিবেদন অন্থুষ্ঠানের নাম “চিক বারায়' | নৃত্যের মাধামেই এই অনুষ্ঠান পালিত হয় । শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও নানারকম বাচ্যযন্ত্র ও সঙ্গীতের তালে তালে রাভারা নুধ্ত্য করেন। ভাংসি, কালবাশী, গোমাক, বামক ডিংডং ইত্যাদি বাগ্যন্ত্রের নাম। শ্বশানযাত্রায় কৌমের সকলেই সমবেত নৃত্যে অংশ নেন। তখন তাদের হাতে থাকে তীর ধনুক ঢাল ও দা । মৃতজন যে ঘরে বাস করতো! সেই ঘরের চালের খড় খুলে নিয়ে উঠোনে ছড়ানো হয় এবংতার উপর 'দেব.মেরেজ্জী” বা উদ্দাম নৃত্য করতে করন্তে শববাহকেরা শ্শানের দিকে যাত্রা শুরু করেন। এই ন্বত্যের নাম “মৈরবার চাঙ্ডি” বা “মৈর গুছুডি।' মৃতদেহ দাহের তিনদিন পরে “চিল! দেখানো” অন্থুষ্ঠান বা “তৌলেঙ চৈয়ার দিনেও নৃতা অনুষ্ঠিত হয়। রাভাদের বিশ্বাস এই নৃতা না করলে মতের হাড় ভাঙ্গে না। রাভাদ্দের বীজ বপনের ন্বত্যের নাম হাঙ্গায় সানি ।' মতস্ত শিকারের নৃতাকে বল] হয় “মাকচেং বেনি'। মেয়েরাই নৃত্যে অংশী। মৎ্শ্তশিকারের নৃতো মেয়েরা কোমরে খলুই বেঁধে হাতে জাকৈ নিয়ে জলের মধ্যে মাছ ধরার দৃষ্ঠাটি স্থনার-ভাবে রূপ দেন। হাপাঙ' নৃত্যে তারা রূপ দেন জমি চাষ, কোদাল কোপানো, ভূমি পুজা, শন্ত বোনা সমেত যাবতীয় কৃষিকর্ম। বাভাদের যুদ্ধ নৃত্যের নাম “হাগ্াবরু' | এই নৃত্যে দেখানো হয় নারী-পুরুষ নিধিশেষে বহির্শক্র প্রতিরোধের বীবত্বপূর্ণ সংগ্রামের দৃশ্য । নৃত্য-শিল্পীদের হাতে থাকে ঢাল ও তরবারী | হাঁসি-তামাসামূলক নাচও রাভাদের মধ্যে রয়েছে। “মাকপর বসিনি' বা ভালুক নাচ তারই একটি । কাতিক মাসে কালীপুজোর ছয় সাতর্দিন আগে তীর! ভালুক নাচের আয়োজন করেন। ভালুকের মুখোস পরে কলাপাতা দিয়ে সার! গ! মুড়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাঙ্গন তোলেন রাভারা । এই নাচ কালীপুজে৷ উপলক্ষে হলেও নিতান্তই চিত্তবিনোদনের ব্যাপার । মোঙ্গল জনজাতির নৃত্যে হস্ত প্রকরণ ও মুদ্রা হূর্লক্ষ। বুকের নিম্বাঙ্গ থেকে পদক্ষেপণের নানা কাজেরই প্রাধান্য । বক্ষদেশ স্বন্ধ গ্রীবা কিংবা! মুখ বা ১১৪ চোখের কাজ সামান্তই । বলতে গেলে নেই। রাভাদের নৃত্যেও এগুলোই দেখ যায়। বলাবহুল্য, তারাও মোক্গল জনজাতি-সম্ভৃত। রাভা মেয়ের রঙিন ও নক্‌সী মুফুন, কাছাং কেমব্রেট ও ফাক চাক পরিধান করেন। কোমর বন্ধনী তাদের লবক, গলায় স্বকিমালা কিংবা টক্কা মাল|। পুরুষেরা মাথায় বাধেন রঙিন পাগড়ি, কোমরে জড়ান রঙিন উত্তরীয় । এইসব পোশাকে নৃত্য পরিবেশিত হয় সমাজেরই কারো বাড়ির বিস্তীর্ণ অঙ্গনে ।* উত্তরবাংলার ব্রাত্যজনগোরষ্ঠী একটি ছুটি নয়। জনগণনার প্রতিবেদন হাতে নিলে দেখা যাবে তাদের সংখ্যা শতাধিক | এবং সকলেরই সাংস্কৃতিক দিক থেকে কিছু না কিছু বৈশিষ্টা আছে। কিন্তু স্বল্প পরিসরে সেই সাংস্কৃতিক বূপালেখা রচনা এক দুরূহ কর্ম । তাই, বেছে নিতে হয়েছে অঙ্কুলিমেয় কয়েকটি । এই জনগেরঠীগুলোর মধো সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজবংশী সম্প্রদায় । তার সারা উত্তরবাংলায় ছড়িয়ে আছেন। কয়েকটি উপগোর্ঠীও রয়েছে এদের মধো। যেমন, দেশী ও পলি। পশ্চিম দিনাজপুর এবং মালদা জেলায় এদের বসবাস। এই রাজবংশী জনগোর্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনে নৃত্য-গীত এক অপরিহার্য অক্ষ । বৈশাখ থেকে চৈত্রের মধ্যে বারোমাসি জীবনে তাঁদের নানা উৎসব অনুষ্ঠান। আর এসবই নাচে-গানে ভরা । বর্ধপরিক্রমায় দেখা যাবে মেছেনী, শিবখেলা, হুছুমা বা জলমাঙ্গা, জলভুকা, ব-খেলা, জিতুয়া, গোরু চুমানী, খজাগর, চোরচুক্ী, কাতিঠাকুর, নয়াখোয়া, পুযুণা, হোলি, মদনকাম, পাগলাপীর, ঘাটো-ব, বিষুয়া, বারোমাসিয়া, মোখা খেল! বা গমীরা উৎসব অনুষ্ঠান নৃত্য-গীতে ভরা । এর বাইরেও যে জীবনছন্দ তাতেও দেখা যাবে অসংখ্য নৃত্যগীতের পসরা । ছোয়ানিন্দানী ও ছোয়াভুলকানী, ভাত-ছোয়ানী, ফুল ফুটানী, রঙ-হাউসালি, চেঙ্গের! ভুলা, বন্ধু নাচানী, বাউদিয়।, মাঝির গান, তেলেঙ্গার গান, বিহোর বা বেহার গান, বট-পাকুড়ের বেহাঁর গান, ধান-কাটা, ধান ভূক, ওঝালিয়া মড়াখোয়া প্রভৃতি । চিন্তবিনোন ও কর্মসঙ্গীতও রাজবংশী সম্প্রদায়ের কম নয়। ফাকসালি, খ্যাচেরা বা খিসা, খন, পালাটিয়া, বাউস্ঠা-বাউস্যানী, ভাওয়াইয়া, বন্ধুআলা, জলপাইগুড়ি অঞ্চলের রাভার! ইতিমধ্যে তাঁদের গায়ের বেড়া পার হয়ে কলকাতার মঞ্চে নৃত্য পবিবেশন করে রসিকজনের প্রশংসা পেয়েছেন । ১১৫ বিরহ-আলা, ভাণ্তীখেলী, বাঘনাচানী, ফাঙ্গাইত,. মৈষালী। ভক্তি-গীতিও তাদের যথেষ্ট । বিষহরা, চণ্তীয়ালা, সত্যগীর, সোনারায়ের গান, দেহতব্ব, তুক্ষা!, ষাইটোন, নটুয়! গ্রভৃতি । এ সব গানের কিছু পরিচয় পাওয়া যাবে ডঃ নির্নলেন্দু ভৌমিকের প্রাস্ত- উত্তরবঙ্গের লোকসঙ্গীত, হরিশ্ন্্র পালের উত্তরবঙ্গের লোকগীতি, ডঃ গিরিজাশঙ্কর বায়ের রাজবংশী সম্প্রদায়ের পুজা-পার্ণ এবং ডঃ চারুচন্দ্ সাম্যালের বাজবংশীস অব নরথ বেঙ্গল বইয়ে । উত্তরবঙ্গের লোকসঙ্গীতের স্থুর ও তাল প্রসঙ্গে সতোন্দ্রনাথ রায়ের লেখাটি প্রাস্ত-উন্তরবঙ্গের লোকসংগীত গ্রস্থের এক বিশিষ্ট সংযোজন । এই অঞ্চলের নৃত্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বই এখনো! রচিত হয়নি । অথচ অধিকাংশ সঙ্গীতই নৃতা সহযোগে পরিবেশিত । সঙ্গীতের স্তর প্রধানত প্রকৃতি-পরিবেশ থেকে জাত, শৃত্যের তাল, গতিভঙ্গি, পদক্ষেপণের পেছনেও রয়েছে ওই প্ররুতির প্রধান ভূমিকা । যাকে বৃতাত্বিকেবা বলেন ইকোলজি। উত্তরবাংলার প্রকৃতি-পরিবেশে একদিকে পাহাড় ও নিবিড় অরণ্যানী, অন্যদিকে তিস্তা, করতোয়া, জলঢাকা, বায়ভাক, সঙ্কোশ, মহানন্দা, আ্েয়ীর মতো নদী । এ ছাড়াও রয়েছে অসংখা ছোট ছোট নদী, খাড়ি। সমতলভমি সামান্যই । উচু-নীচু মালভূমিতে ভরা । জলাজমিও তার কম নয়। এই পরিবেশে হাতি, বাঘ এবং বিচিত্র জন্ত-জানোয়ার আর পাখির সমারোহ । এখানে আসামের বনাঞ্চল ক্রমশ দক্ষিণমুখে! তৃণাঞ্চলে পরিণত | এই দুর্গম প্রাকৃতিক পরিবেশে যে ব্রাত্যজন দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করছেন তার বৃতাগীতের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেওয়! অনেকের পক্ষেই কঠিন। তাই বোধকরি, এই অঞ্চলের নৃত্য-গীত প্রসঙ্গে আলোচনা! হয়েছে সামান্তাই | বৃত্য-গীতে প্রকৃতি পরিবেশের ভূমিকা যেমন প্রধান তেমনি অপরাপর সাংস্কৃতিক প্রভাবের মুল্য কম নয়। “বাম বনবাস' এর মতো! একটি নৃত্য- গীতিনাট্যে যুদ্ধের সঙ্গীতে নজরুলের “চল চল চল উধ্ব-গগনে বাজে মাদল নিয়ে উতলা ধরণী তলের” অতি পরিচিত সুর শুনে চমকিত হই। কথাপ্রসঙ্গে রাধিকামোহন মৈত্র জানিয়েছিলেন এই স্থরের বিষয় জানতেন ভূপেন্ত্রনাথ দত্ত। যুদ্ধ সঙ্গীতে এই স্থর খুবই জনপ্রিয়। ১১৩ অবাক হ'তে হয় উত্তরবাংলার রাজবংশী সম্প্রদায়ের যুদ্ধ নৃত্যে এই স্থুর এখনো কেমন সচল। গমীর! বা মোখা খেলার প্রতিটি চরিত্রের নৃতাভঙ্গী স্বাতন্থাপূর্ণ। কাঠের বিশাল মুখোশ পরে দশানন রাবণের নুতো নটরাজের ং। অন্থরনাঁশিনী দুর্গার নাচের ছন্দে সর্পের গতিভঙ্গী। বাঘ-ভালুকের যুদ্ধনৃত্য দেখার মতোই বটে। গমীর] নৃত্যে অনেকগুলি ছন্দযুদ্ধ মাছে --সেগুলো দেখতে দেখতে সর্প-নেউলের যুদ্ধরীতি মনে আসে । সিংহল রাজের যুদ্ধ নৃত্য চমত্কার । এখানে পদক্ষেপণেও নটরাজের কথা মনে পড়ে । সকপাঁণ হাঁত ছুটির মুদ্রাও খুবই স্থন্দর। চণ্ডী, চামুণ্ডার নৃত্য বাজনার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমাংশে যেন মনে হয় নদীর ছোট ছোট ঢেউ। পায়ের পাতার ওপর তর দিয়ে তাঁরা সারা মাঠময় নাচে ; তখন পদক্ষেপণও দীর্ঘ । চামুণ্ডার গতি যখন ক্ষীপ্র, তখন তার পদক্ষেপণও দীর্ঘ । বুড়াবুডির মুখোশের সঙ্ষে তার নৃত্যটিও চমত্কার মানানসই | জটায়ুর পাখা ঝাপটানো দেখার মতো। শিকনিঢাল চরিত্রটির নামায়নেরমধোই 'শকুন? কথাটি রয়েছে । শকুন যেমন একটি গলিত শবকে কেন্দ্র করে আকাশে উড়ে উড়ে ঝপ. ক'রে মাটিতে নেমে আসে শিকনিঢালও তেমনি শকুনের গতিভঙ্গিতে মাঠময় ঘুয়ে ঘুরে শকুনের গতিতেই যেন সে মৃতদেহটির কাছে নেমে আসে। শকুন যেভাবে ভ্যঙ্কর উল্লসিত ভঙ্গিতে মৃতদেহের চারপাশ ঘুরে ঘুরে মাঝে মাঝে মাংস খুবলে নেয়। সেই একই ভঙ্গিতে শিকনি ঢাল এক বিশাল দানবোচিত মুখোশ পরে নাচে । পশ্চিম দিনাজপুর জেলার দেশী-পলিদের কাছে শিকনিঢাল এক ভয়ানক অপদেবতা। একদিকে তার গতিভঙ্গি শকুনের মতো, অন্যদিকে তার আচরণ দানবের মতো । রাজবংশী পলি শিল্পী তার নৃত্যে এই ঢুইরূপই এই চরিত্রে ফুটিয়ে তোলেন। খন" বা “পালাটিয়া” প্রধানত নাটাগীতি হলেও নৃত্যবজিত নয়। এখানে নৃত্য গানের তালে গড়া। এখানকার চরিত্রগুলোর নাচে হাতির চলার ছন্দ দেখা যায়। ময়ুরের কিংব|! বনমোরগের গ্রীবাভঙ্ষি ক'রে ভাড়। এই গ্রীবাভক্ষি দেখেছি গমীরা নাচেও। মেয়েদের ফোমরের কাজ নদীর বীচিভঙ্গের সঙ্গে তুলনীয় । আরেকটি দিক লক্ষণীয়। হয়তো দীর্ঘকাল পাহাঁড়-জীবন সঙ্গী খাঁকায় যেমন বাস্তব স্মাজজীবনে মেয়েরা পিঠে বহন ক'রে শিশু বা অন্যান্ ১১৭ বস্ত, নৃত্য-গীতেও তাবা অনায়াসে শিশুকে বা কোন বসন্ত বেঁধে নেয়। জলমাঙ্গ! গানে মেয়েদের কাধে কাধুদিয়ে সমবেত নৃত্য সঙ্ঘবদ্ধতার ভাবজ্ঞাপক । হয়তো! অনেকে একে নৃত্যের বদলে 'নৃত্ত' বলবেন। জলমাঙ্গা বা হুছুম৷ হলো থরাকালীন বর্ধা আবাহনের নৃতাগীত। এখানে বহু বিচিত্র সব নৃত্য আর গীত। সমস্ত অনুষ্ঠানটি আদিম যাদুবিশ্বাসের সঙ্ে যুক্ত। আমাদের মনে রাখতে হবে, অর্থ নৈতিক কাঁবণে সমাজ-সত্যতা ও তারসাংস্কৃতিক চরিত্রের রূপ বদল হয়। তাই, যে কোন জনগোঠী বৃহত্তর জনসমাজের নিকটবর্তী হয়ে যখন একই আর্থসামাজিক বিকাশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে তখন তার সাংস্কৃতিক চরিত্রের পরিবর্তন আসে। আধুনিক রাজবংশী সম্প্রদাক্নের নৃত্য- গীতে যদি কেউ সেই পরিবর্তন দেখতে পান তবে বোধকরি তার কারণ ওই । রাজবংশী সমাজে মেয়ে-পুরুষের যৌথ নৃত্যের প্রচলন এখন আর নেই। সামস্ততান্ত্রক অর্থনীতি-সংস্কৃতি এই সমাজে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে নারী আর নৃত্য-গীতে পুরুষের সঙ্গী হয় না। গমীরা নাচে শ্ধু পুরুষেরাই অংশী। হুছুমা বা জলমাঙ্গা মেয়েদেরই অনুষ্ঠান_তাই এর নৃত্যে মেয়েরাই একমাত্র অংশ গ্রহণ করেন। বিয়ের আচারে মেয়েদেরই প্রাধান্ত। এর গানের সঙ্গে যে নৃত্য তাতে একমাত্র মেয়েরাই অংশী। কাশাই খুড়া বা ভাজার সময় যে গান মেয়ের! করেন তাতে নৃত্যাংশে তারাই নাচেন। বর বরণের সময় মেয়েরাই গান করতে করতে পাশাপাশি দাড়িয়ে পরম্পর কাধে কাধ লাগিয়ে কোমরের দোলায় ছোট ছোট পদক্ষেপে নৃত্য করেন। মেয়েদের নাচে কোমরের ওপরের অংশের বা হাতের মুদ্রার বিশেষ কাজ নেই। শ্ধু মাঝে মাঝে কোমরের ওপর ঘেষে উর্ধ্বাংগ ঝুঁকিয়ে গানের সরে নাচতে দেখা যায়। ঘাটো-ব, জলমাঙ্গায় এমন নাচ দেখেছি। পালা-ধরণের নৃত্য-নাট্যে আগে মেয়ের অংশ গ্রহণ করতেন না। এখন কিছু কিছু মেয়ে অংশ গ্রহণ করছেন। মেয়েদের ভূমিকায় আগে একমাত্র ছেলেববাই অভিনয় করতেন বলে তার নৃত্যশৈলী পৃথকভাবে আলোচ্য । কিন্তু এখানে সে অবকাশ নেই। শুধুমাত্র বলা যেতে পারে 'খেমটা” ধরণের নৃত্যশৈলী এসব পালায় ছোকরা বা ছুকরী অভিনেতাদের মধ্যে দেখা যায়। উদ্দাহরণন্থরূপ, নটুয়া, বিষহরা, সত্যপীর গানের ছোকরা নাচের কথা উল্লেখ্য । এদের পরনে ঘাঘরা বা শাড়ি এবং ১১৮ উর্ঘাঙ্গে রাউজ ও একটি ওড়না । এই ছোকরাদের অভিনয়ে এখন যুগরুচি অন্থ্যায়ী ধীরে ধীরে মেয়েরাই আসছেন । ত্বীরা যে নৃতাশৈলী অন্ুদরণ করছেন তা ওই ছোঁকরাদেরই। এইসৰ নৃতাগুলো৷ থেকে যে কটি উপাদান ( মোটিফ ) পাওয়া যায় তা নিচে দেওয়া হ'ল £ এক. বৃত্ত বা বৃত্তাকার নৃত্য । এই মোটিফ প্রায় সব নৃত্যেই “সাধারণ” । ছুই. পাশাপাশি দীড়িয়ে একটি সরলরেখা স্থ্টি। তা কখনো অর্ধবৃত্ত বা ত্র রূপ নেয়। তিন. সমান্তরাল ছুটি বা তিনটি বেখার মতো! লম্বালদ্বি। চার, স্থান পরিবর্তন, পরম্পবের মধ্যে মিশ্রণ | পাঁচ. পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণে এগিয়ে পিছিয়ে যাওয়া । ছয়, মাঝে মাঝে একই সঙ্গে হাতে তালি। এবার কয়েকটি গানের নমুন! দিয়ে এই প্রসঙ্ষের ইতি টানা যাক। (এক) বন্ধুয়ালা £ এই গানের জন্ম ফাল্ন-চৈত্র মাপের পাখার বা! ক্ষেত্রভূমিতে। পশ্চিমা বাতাসের ( পচিয়ার বাও ) ঝড়ে কষক যখন মাঠে লাঙ্গল দেয় বা মই টানে তখনই এই গান বিশাল পাথারে চেউ তোলে । যেমন £ পচিয়ায় উড়াল মারো ছেরে অথব1, কাউয়্যারে তুই কেল্কেলাইসনা বাশের ছায়ারে পাইয়া মুই নিরাশী মন কান্গেছে ঝ্যালমা ভাতার পাইয়া ইত্যাদি (ছুই) মেছেনী £ মেয়েদেরই ক্রত। নাচ-গানে তরা। দেবী তিস্তাই মেছেনী। এই ব্রত উদযাপিত হয় বৈশাখ মাসে। অসংখ্য মেছেনী গানের ছুটি ছত্র “প্রান্ত-উত্তরবঙ্গের লোকসঙ্গীত' থেকে উদ্ধৃত কর! হলে মাত্র। ১১৪ (তিন) চোর-চুরনী £ কান্তিক মাসে কালীপৃজোর সময় এ গান গায়ের ছেলেরা দল বেঁধে করে। একজন সাজে চোর. একজন চুরণী। লোকনাট্যাক্রাস্তও বটে এ নাচ-গান । আমাসী পারবে রে চোর সান্দাইল্‌ ঘর রে পাইকার যদি অহিল হয় চোরক পিটিয়া ধল্লে হয় । ইত্যাদি (চার) বেহার গান : দিনাজপুরের ইশমি চুড়ি পয়সা পয়সা দাম খাবার সময় ফম্‌ ( মনে ) পড়েছে ( মোর ) ফান্নার বন্ধুব নাম । (পাঁচ) ব-খেলা £ হালুয়া । উঠেক উঠেক বাই ন-দাঁবী চাষ করিবা যাছুং মুই ভূরভুসিডাঙ্ষি। অমলপস্ত1, মরিচের গুণ্ডা আর নে যাইস ঘিউ দিয়] মাখিয়। ওই পাখার বাড়ি । (ছয়) দৌতরা গান £ ওহে রে তর আজি হতে ভাসিম্গ রে তোক নিয়া গলার স্বরে হাতের বেটি বে! মন পাগেলার মন ভুলাইলরে দতরা আজি হাতে ভাসিন্ু রে তোক নিয়া । এই নিবন্ধটি রচনায় সুনীল পালের ছুটি লেখা আমাকে বিশেষভাবে সাহাষ্য করেছে। তাছাড়া, রাজবংশী সম্প্রদায়ের মেছিনী, চোর-চুরনী ও দোতরার গান প্রাস্ত উত্তরবঙ্গের লোকসংগীত, থেকে সংগৃহীত । অন্ত গানগুলি আমার নিজন্ব সংগ্রহ ৷ ১২০ গদি 8। নে তি সী এ দঃ খাঁ এট, 5, রি ॥ রি 4 48 28 পরি ৪ ১) । | ৩। ৪ | | ৮ । ৯ | ১০ । ১৯ । ১৩ চির সুঢা ভাণ্ডামী দেবী। খজাগর উপলক্ষে শোলার এবং কাঠের তৈয়ারী লক্ষ্মী । ঘরের এবং কাজের পোশাকে দেশীয় রমণী । ইদানীং ছ্যাওটার স্থান নিচ্ছে শাড়ি। সার[রাত অভিনয়ের পর গঁষের আসরে রামবনবাস লাকনাটোর এক শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন লেখক। জলের প্রার্থনা--জলমাংগা। খজাগর তথ। কোজাগর উপলক্ষে ঢে'কিকোটার গান। প্রাচীনা ধোকরা শিল্পী কান্দেরী দেবশরমা, টুল, (পশ্চিমদিনাজপুর) পোলিয়। মুৎশিল্পী কুনোর হাটপাড়া। পলেরয়ং ঠক: অথব1 বলিবধং ঠনুরঃ। বিষহরা-“ব, এর শোলার তৈয়ারী ভুর। নৌক|। গমিরা নাচে শিকনিঢাল। রাভ! বমণীদের নৃত্য । লোকনাট্য খিন' পযুমাল শোরীর একটি অংশ ।